ভূমিকম্প বিষয়ক কিছু প্র্যাক্টিকাল গাইডলাইন

ভূমিকম্প- এই একটি শব্দই ঘুরে ফিরে বার বার আসছে আমাদের চোখের সামনে, আমাদের মস্তিষ্কে। একদিকে তুরস্ক ও সিরিয়ার ভয়াবহ ঘটনায় আমরা ব্যথিত, আবার একই সাথে এদেশে ভূমিকম্প ঘটার আশঙ্কায় আতঙ্কিত।

এমন দুর্যোগ নিয়ে চিন্তিত হওয়া অস্বাভাবিক না, তবে জীবন একেবারে স্থবির হলে সেটাও ঠিক না। আমাদের উচিত এ বিষয়ে যথাসম্ভব জ্ঞান আহরণ করা এবং ক্ষয় ক্ষতি কমাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

নীচে ভূমিকম্প বিষয়ক কিছু প্র্যাক্টিকাল গাইডলাইন দেয়া হলো :

♦️ ভূমিকম্পের আগে

🔺নিশ্চিত করুন যে আপনার বাড়িতে একটি ফার্স্ট এইড কিট, একটি টর্চলাইট এবং পাওয়ার ব্যাংক রয়েছে৷
🔺খেজুর, মুড়ি, বিস্কিট ইত্যাদি শুকনো খাবার ও পানি বিছানা বা টেবিলের নিচে রাখুন, যেখানে আপনারা আশ্রয় নিতে পারবেন।
🔺কীভাবে আপনার বাসার গ্যাস এবং বিদ্যুৎ এর লাইন বন্ধ করবেন তা জেনে রাখুন।
🔺ফায়ার সার্ভিস, এম্বুলেন্স বা এ জাতীয় জরুরি নাম্বার গুলো ফোনে সেভ করে রাখুন।
🔺উচু আলমারি বা তাকগুলিতে ভারী জিনিস রাখবেন না, নাহলে ভূমিকম্পের সময় পড়ে যাবে।
🔺ভূমিকম্পের সময় কি কি করবেন তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন, পরিবারকে জানান। একবার মহড়া দিন, নাহলে বিপদের মুহূর্তে কিছুই মাথায় আসবে না।
🔺আপনার এলাকা বা অন্তত আপনার বিল্ডিং এর বাসিন্দাদের সাথে আলোচনা করুন। অগ্নি নির্বাপকযন্ত্র, শাবল, হেলমেট ইত্যাদি উদ্ধার কাজে প্রয়োজনীয় জিনিস মজুদ রাখুন। সকল পুরুষদের উদ্ধার কাজে এবং নারীদের প্রাথমিক সেবায় প্রশিক্ষিত করার ব্যবস্থা করুন।

♦️ভূমিকম্পের সময়

🔺আপনি যদি বাড়ির ভিতরে থাকেন তবে ভিতরেই থাকুন। আবার বাইরে থাকেন তবে বাইরেই থাকুন। ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে লিফট বা সিড়ি ব্যবহার করবেন না, বারান্দা থেকে লাফ দিবেন না।
🔺আপনি যদি বাড়ির ভিতরে থাকেন, ওয়াল বা বীম ঘেঁষে দাঁড়ান, সম্ভব হলে ভারী আসবাবের (একটি খাট বা টেবিল) নীচে আশ্রয় নিন। সঙ্গে মোবাইল ফোনটি অবশ্যই রাখবেন।
🔺ঘুমন্ত অবস্থায় ভূমিকম্প টের পেলে প্রথমেই বালিশ দিয়ে মাথা কভার করবেন।
🔺কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলা বালি শ্বাস নালিতে না ঢোকে।
🔺জানালা এবং দরজা থেকে দূরে থাকুন। জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ছড়িয়ে যেতে পারে, দরজার জায়গাটিও বেশি মজবুত হয় না।
রান্নাঘরে থাকলে চুলা বন্ধ করে দ্রুত প্রস্থান করুন।
🔺বাচ্চারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে স্কুল ব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিবে।
🔺আপনি যদি বাইরে থাকেন, তাহলে বিদ্যুৎ লাইন বা বিল্ডিং থেকে দূরে, খোলা জায়গায় থাকুন।
🔺ম্যাচ, মোমবাতি বা কোন আগুন ব্যবহার করবেন না। গ্যাস লিক হলে দুর্ঘটনা ঘটবে।
🔺আপনি যদি গাড়িতে থাকেন তবে গাড়ি থামান এবং ভূমিকম্প বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত গাড়ির ভিতরেই থাকুন।

♦️ ভূমিকম্পের পর

🔺আঘাতের জন্য নিজেকে এবং অন্যদের পরীক্ষা করুন, ফার্স্ট এইড দিন।
🔺পানি, গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক লাইন পরীক্ষা করুন। গ্যাসের গন্ধ পরীক্ষা করুন। যদি গন্ধ পান, তাহলে সমস্ত জানালা এবং দরজা খুলুন, অবিলম্বে চলে যান।
🔺জরুরি অবস্থা না হলে ফোন ব্যবহার করবেন না, এতে চার্জ যাবে, নেটওয়ার্ক জ্যাম হবে।
🔺হেলমেট, ভেস্ট না থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে দূরে থাকুন। ভাঙা কাচ এবং ধ্বংসাবশেষের চারপাশে সতর্ক থাকুন। বুট বা মজবুত জুতা পরুন।
🔺ভূমিকম্প শেষে আফটারশক হতে পারে, খোলা ময়দানে থাকুন। সমুদ্র তীরে থাকলে দ্রুত দূরে সড়ে যান, সুনামির সম্ভাবনা থাকে।
🔺দুঃখজনক হলেও সত্য, এমন দুর্যোগের পর লুট তরাজের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই নিজেদের অর্থ ও সম্পদ নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

এগুলো ছাড়াও আরো কিছু গাইডলাইন রয়েছে আপনার জন্য, যদি আপনি মুসলিম হন-

🔸ভূমিকম্প ও সকল বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা সব সময় আল্লাহর কাছে দুআ করবো। দৈনিক সকাল ও সন্ধ্যার দুআ পাঠ হতে পারে আমাদের জন্য রক্ষা কবচ (বিশেষ করে তিন কুল ও হিসনুল মুসলিমের ২৭.৪, ২৭.১১, ২৭.১৪ নাম্বার দুআ)।
🔸বিপদ হতে মুক্তি পেতে, ব্যথা উপশমে ইত্যাদি প্রয়োজনীয় দুআ মুখস্ত রাখা উচিত। নিঃসন্দেহে রাসূল (সাঃ) এর শিখিয়ে যাওয়া দুআর কার্যকারিতা অনেক বেশি।
🔸ঘুমের আগে মাসনূন দুআ, সূরা মূলক তিলাওয়াত, ইসতিগফার করা, অজু করা ইত্যাদি সুন্নাহ অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
🔸প্রতিদিন চলতে, ফিরতে, কাজের ফাঁকে বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও অন্যান্য যিকর পড়ার অভ্যাস করতে হবে, যেনো বিপদের সময় মুখ থেকে আপনা আপনি এসব বের হয়।
🔸প্রায় প্রায় সিয়াম পালন ও ব্যায়াম করার মাধ্যমে নিজেদের শারীরিক ভাবে আরো মজবুত করা উচিত।
🔸যথা সম্ভব ভালো আমল গড়া, মন্দ অভ্যাস ত্যাগ করা, মানুষের হক আদায় করা, ক্ষমা চেয়ে নেয়া, সাদাকায় জারিয়ার ব্যবস্থা করা, এসব বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে।
🔸একই সঙ্গে অন্যান্য মানুষদের দাওয়াহ দেওয়াটাও খুব জরুরী। সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা না আজ নাহয় কাল আল্লাহর শাস্তি সবাইকে পাকড়াও করবেই।

ভূমিকম্প নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর। তবে যে প্রকৃত মুমিন, সে রবের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। তাছাড়া ভূমিকম্পের ফলে চাপা পড়া মৃত্যু মুমিনের জন্য শহীদের মর্যাদা পাওয়ার উসীলা হতে পারে (সহীহ বুখারী: ৬১৫)।

তাই ভীত সন্ত্রস্ত হওয়ার বদলে প্রস্তুতি গ্রহণ করার পাশাপাশি নিজেদের ঈমানে ও আমলে আরো এগিয়ে নেয়াই আমাদের করণীয়।

©nishita

Leave a Comment

betvisa