ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে বোনের যকৃৎ দান

ছোট বোন যকৃতের একটি অংশ কেটে দিয়েছেন বড় ভাইকে বাঁচানোর জন্য। যকৃৎ প্রতিস্থাপনের কাজটি হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। যকৃৎ প্রতিস্থাপন সফল হয়েছে বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ।

যকৃতের জটিল রোগ নিয়ে কয়েক মাস আগে বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন বগুড়ার মো. মন্তেজার রহমান। চিকিৎসকেরা বলেন, যকৃৎ প্রতিস্থাপনই তাঁর চিকিৎসা। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায়, মন্তেজারের ছোট বোন মোসা. শামীমা আক্তারের যকৃৎ এ কাজের জন্য উপযুক্ত। এরপর ১ জানুয়ারি শামীমার যকৃৎ কেটে মন্তেজারের শরীরে জুড়ে দেন বিএসএমএমইউর চিকিৎসকেরা।

এ উপলক্ষে আজ রোববার দুপুরে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএসএমএমইউ। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে এ পর্যন্ত সাতটি যকৃৎ প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখানে এ পর্যন্ত দুটি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোবিলিয়ারি, পেনক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের চেয়ারম্যান মো. মোহছেন চৌধুরী বলেন, যকৃৎ প্রতিস্থাপনে তিনটি বড় অস্ত্রোপচার করতে হয়। প্রথমত, অসুস্থ ব্যক্তির যকৃৎ কেটে ফেলে দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, একজন সুস্থ ব্যক্তির যকৃতের অংশ কেটে নিতে হয়। তৃতীয় ধাপে সুস্থ ব্যক্তির কাটা যকৃৎ অসুস্থ ব্যক্তির কেটে নেওয়া যকৃতের স্থানে লাগাতে হয়। এটি লম্বা ও জটিল প্রক্রিয়া। এ জন্য দরকার বিশেষ দক্ষতার। প্রতিস্থাপনের কাজটি শুরু হয়েছিল সকাল ৭টায়, আর শেষ হয়েছিল রাত ১০টায়।

মো. মন্তেজার রহমান ও তাঁর ছোট বোন মোসা. শামীমা আক্তার এখনো বিএসএমএমইউতে আছেন। তাঁরা ভার্চ্যুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন। মো. মন্তেজার রহমান এই সফল অস্ত্রোপচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএসএমএমইউর উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানানা। মোসা. শামীমা আক্তার বলেন, ‘আমরা ভাই-বোন দুজনই সুস্থ আছি।’ কর্তৃপক্ষ বলেছে, খুব শিগগির তাঁদের ছুটি দেওয়া হবে। তবে কমপক্ষে এক বছর চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকবেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, যকৃৎ প্রতিস্থাপনসহ বেশ কিছু রোগের চিকিৎসায় প্রতিবছর বহু রোগী বিদেশে যান। কিন্তু অনেকেই জানেন না, অনেক রোগের সফল চিকিৎসা এখন দেশেই হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের কাজ অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, বিদেশে যকৃৎ প্রতিস্থাপনে খরচ ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। দেশে এর অর্ধেক খরচে এটা সম্ভব।

Leave a Comment