বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ। স্বাধীন বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনিই প্রথম পুলিশের মহাপরিদর্শক, যিনি অর্ধ-শতাব্দীর পুলিশ বিভাগের নতুন বিস্ময়। তাকে ঘিরে কেবল পুলিশ বিভাগ নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্ন জেগেছে।
ড. বেনজীর এমন একজন দক্ষ, ভিশনারী পুলিশ কর্মকর্তা, যার সুযোগ্য নেতৃত্বে পুলিশ বিভাগের আধুনিক সংস্কার সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। মাত্র ১ বছরের কিছুকাল বেশি ড. বেনজীর দায়িত্ব পেয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শকের। এরই মধ্যে বদলে গেছে পুলিশ বিভাগের সার্বিক দৃশ্যপট। প্রণীত হয়েছে নতুন রূপরেখা। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ একটি জনপ্রিয় ধারণা সমাজের মাঝে। কিন্তু তা প্রমাণ করতে পুলিশকে সবসময় এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। একথা খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলতে পারি এই মিশ্র প্রতিক্রিয়ার অবসান হতে চলেছে। নতুন উদ্যোগে ড. বেনজীর তার দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়ে পুলিশকে জনগণের বন্ধু প্রমাণ করতে অনেকাংশেই সফল হয়েছেন। তার নিরলস প্রচেষ্টা আশা জাগিয়েছে সচেতন মহলে। নিরন্তর প্রচেষ্টার ফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ।
পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা স্থাপনে অতীতের মহাপরিদর্শকগণ সাধ্যমতো কাজ করছেন এ বিষয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সফলতা নিয়ে জনমনে সাবেক মহাপরিদর্শক কিংবা আইজিপি মহোদয়রা কতটুকু সফল হতে পেরেছেন সে প্রশ্ন জনমনে। ড. বেনজীর সেক্ষেত্রে একেবারেই ব্যতিক্রম, তার সফলতার মাত্রা সবাইকে অবাক করেছে।
গত বছরের (২০২০ সাল) ১৫ এপ্রিল যখন ড. বেনজীর পুলিশ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান তখন সারা বিশ্বে বিরাজ করছিল এক বৈরী পরিবেশ। বিশ্বব্যাপী করোনার ঢেউ তখন বাংলাদেশেও। এক অস্থির পরিবেশ, প্রকৃতির বৈরী আচরণ আর গ্লোবাল প্যানডামিকে যখন বাংলাদেশের মানুষ মহাসংকটে ঠিক সেই মুহূর্তে ড. বেনজীরের দায়িত্ব গ্রহণ ছিল রীতিমতো এক অগ্নিপরীক্ষা।
পুলিশ বিভাগের স্বপ্ন পুরুষ ড. বেনজীর কঠিন মুহূর্তেও বিচলিত হননি তার পথ চলায়। শুরু থেকেই তিনি কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশ বিভাগকে ঢেলে সাজানোর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন । তার সুদক্ষ নেতৃত্বের ফসল আজকের পুলিশ বিভাগের আধুনিক রূপ। একজন স্বপ্নচারী পুলিশ কর্মকর্তা যখন পুরো পুলিশ পরিচালনার শীর্ষ পদে থাকেন তখন শুধুমাত্র একটি বিশেষ পেশার মর্যাদাই নয়; সরকারের ভাবমূর্তি কতটা উজ্জ্বল হতে পারে তার প্রমাণ ড. বেনজীর আহমেদ।
দুই.
বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে এখন কেবল বাংলাদেশই গর্ব করে না, বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশ পুলিশের সুনাম এবং খ্যাতি আকাশ ছোঁয়া। গত বছরের ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের যে সোনালি অধ্যায় শুরু হয়েছিল তার অগ্রযাত্রা এখন দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে।
আমি একজন গণমাধ্যমকর্মী, তারপরে কূটনীতিক। দীর্ঘ ৩ দশকেরও বেশি সময় কাজের সুবাদে পুলিশ বিভাগকে দেখেছি খুব কাছ থেকে। সত্য কথা বলতে কি- বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে শুরু থেকেই এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল জনমনে। এখনো যে পুরোটা কেটেছে সেই অযৌক্তিক দাবি আমি করবো না। তবে পুলিশ সম্পর্কে এখন জনমনে ইতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে সে দাবি আমি করতেই পারি। পুলিশের সব কর্মকর্তাকে একই পাল্লায় মাপা কিংবা এক দৃষ্টিতে দেখা কোনোভাবেই যৌক্তিক হবে না। কিছু কর্মকর্তার দায়িত্বহীন আচরণ কিংবা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা মিডিয়ার কল্যাণে জাতির কাছে স্পষ্ট। তবে যারা এই পবিত্র মহান পেশাকে বিতর্কিত করছেন এ দায়ভার কেবল তাদেরই। এমন অভিযোগ কিংবা বিতর্ক অন্যান্য পেশায়ও নিশ্চয়ই রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে পুলিশকে নিয়ে তারা কেন জনগণের বন্ধু হবে না। পুলিশ জনগণের সেবক। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পুলিশ হবে জনগণের আস্থার প্রতীক। তেমনটাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত কিংবা প্রত্যাশিত। আমি যদি একেবারে বিশ্লেষণে বলি, ড. বেনজীর আহমেদ জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণেই কাজ করে যাচ্ছেন বোধকরি, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। ড. বেনজীর আহমেদ অন্তত চেষ্টা করেছেন পুলিশ বিভাগের আধুনিক সংস্করণে, আমরা গত এক বছরে তেমনটাই দেখছি। আমার দৃষ্টিতে ড. বেনজীর কেবল একজন দক্ষ এবং ভিশনারী কর্মকর্তাই নন, মানবিকও বটে। দায়িত্ব পেয়েই ভয়ংকর করোনা পরিস্থিতিতে তিনি পুলিশকে সর্বোচ্চ মানবিকতায় নিবেদিত করেছেন। নিজেকেও উৎসর্গ করেছেন মানব সেবায়। করোনাকালে সারা দেশে করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে পুলিশের ভূমিকা ছিল অনন্য, অসাধারণ। পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের বন্ধু হিসেবে পাশে দাঁড়াতে, সামাজিক দূরত্ব বাজয় রাখা, যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণেও পুলিশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ সময়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পুলিশের প্রধান হিসেবে ড. বেনজীর এ সময়ে একজন অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন মানব সেবায়। এমনকি গণমাধ্যম-বান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ড. বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানোরও চেষ্টা করেন।
তিন.
করোনা, দুর্যোগে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতায় এ সময় পুরো একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়। কেন্দ্রীয় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালকে দুই সপ্তাহের জন্য ভাড়া করা হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইজিপি প্রচলিত পুলিশিং ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে শুরু করেন ‘প্যান্ডামিক পুলিশিং’। দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ ব্যারাককে আইসোলেশন সেন্টারে পরিণত করা হয়।
ড. বেনজীর আইজিপির দায়িত্ব পেয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন দুর্নীতির বিষয়ে। গ্রহণ করেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পদোন্নতি, বদলি ও নিয়োগ সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করেন। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদের এ সংক্রান্ত নীতিমালা ইতোমধ্যেই প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশের অভ্যন্তরীণ পদোন্নতি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে নেওয়া হচ্ছে। একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে যতদূর জেনেছি, মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যোগ্য পুলিশ সদস্যগণ পদোন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন। পুলিশ সূত্রে জেনেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পর্যন্ত সকল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যের জন্য বছরে অন্তত একবার হলেও বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের কাঙ্ক্ষিত সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ সারা দেশকে ৬ হাজার ৯১২টি বিটে ভাগ করে বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু করেছেন। পুলিশের সেবাকে সাধ্যমতো করতে থানা সেবাকে শহর এলাকায় ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে।
নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ বন্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে দেশব্যাপী একযোগে বিট পুলিশিংয়ের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। পুলিশ সদস্যরা যাতে ব্যাংক থেকে সহজেই আর্থিক সুবিধা পান তা নিশ্চিতে পুলিশ পরিচালক কমিউনিটি ব্যাংকের মাধ্যমে নতুন নতুন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
আমার কাছে বিস্ময়কর এবং জনবান্ধব একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর আধুনিকায়ন। সাধারণ মানুষ তাৎক্ষণিক বিপদ উদ্ধারে ৯৯৯-এর সুবিধা পাচ্ছে। যা কেবল উন্নত বিশ্বেই দেখা যায়। ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ড. সজীব ওয়াজেদ জয়ের আন্তরিক সহযোগিতা ও প্রচেষ্টায় এ কাজটি সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশ ইকনোমিক জোন (বেজা) , টেকনাফ, সাবরাং-এ ৪০ একর প্লট বরাদ্দ, টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ এ প্রায় ৫.১১ একর জমি ক্রয়, কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন যা পুলিশ বিভাগের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।
চার.
ড. বেনজীর আহমেদ পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক নতুন উচ্চতায়। গত ৫০ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশে এবারই প্রথম বাংলাদেশের পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং ভারতের পুলিশ প্রধানের মধ্যে পুলিশ চিফ ডায়ালগ শুরু হয়েছে।
জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের পুলিশের ক্রমাগত কদর বাড়ছে যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম বয়ে আনছে। বিশ্ব পুলিশিং ব্যবস্থার সবচেয়ে কার্যকর ও সাফল্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখেই। ড. বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশের পুলিশকে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে আধুনিক করেছেন যা অনেকটা অকল্পনীয়।
ড. বেনজীর আহমেদ সম্পর্কে আমাদের বলতেই হবে- তিনি নিজে স্বপ্ন দেখেন, মানুষকে স্বপ্ন দেখান। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেন।
দক্ষ, যোগ্যতার উদ্ভাবনী ক্ষমতার সমন্বয়ে তারই নেতৃত্বে নানা প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে দীপ্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
ড. বেনজীর নিঃসন্দেহে একজন দেশপ্রেমিক পুলিশ কর্মকর্তা । তার মতো দক্ষ, সাহসী ও দেশপ্রেমিক পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃ্ত্বে পুলিশ বিভাগ হয়তো অচিরেই পৌঁছে যাবে নতুন দিগন্তে। ড. বেনজীরকে ঘিরে এমন প্রত্যাশা গোটা দেশবাসীর।
লেখক: শাবান মাহমুদ, প্রেস মিনিস্টার, বাংলাদেশ হাই কমিশন, নয়াদিল্লি, ভারত।