বরেন্দ্র জাদুঘর চত্বরে ফুলবাগান নয় সবজি চাষ

লকডাউনে সবকিছু বন্ধ পরিচালক বলছেন । তাই আনসার সদস্যদের তিনি সবজি চাষ করে খাওয়ার জন্য অনুমতি দিয়েছেন । তবে দেশের একমাত্র গবেষণা জাদুঘর বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম । আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত এই জাদুঘরে দেশের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান । তবে জাদুঘরের আঙিনার ফুলের বাগানেরও ঐতিহ্য রয়েছে । আর সেখানে এখন সবজি চাষ করা হচ্ছে । পরিচালক আর বলছেন, লকডাউনে সবকিছু বন্ধ, তাই আনসার সদস্যদের তিনি সবজি চাষ করে খাওয়ার জন্য অনুমতি দিয়েছেন।

তবে দীঘাপাতিয়ার রাজকুমার শরৎকুমার রায় ছাত্রজীবন শেষে পম্পেই, মিসর ইত্যাদি নগরের ধ্বংসাবশেষ দেখে নিজের দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন । দেশে ফিরে ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’ নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। আর এই সমিতিই প্রথমে বরেন্দ্র অঞ্চলের পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে নামে । তবে এই সমিতির সংগ্রহ নিয়েই ১৯১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর । তবে অগ্রজ রাজা প্রমদানাথের প্রদত্ত জমিতে শরৎকুমার রায় সে সময় নিজের ৬৩ হাজার টাকা দিয়ে গৌড়ের স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে অপূর্ব শিল্পসুষমামণ্ডিত একটি ভবন নির্মাণ করেন । আর এর নকশাও শরৎকুমার রায় নিজেই করেছিলেন । তবে জাদুঘরটি ১৯৬৪ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে । তবে বর্তমানে এই জাদুঘরের প্রত্নবস্তুর সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে ।

একটি গোল বেদি রয়েছে এই ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বেই । তবে রেওয়াজ অনুযায়ী বাইরের কোনো দর্শনার্থী বা শিক্ষার্থীরা জাদুঘর পরিদর্শনের এলে এই বেদির পাশে দাঁড়িয়ে জাদুঘরের কর্মকর্তারা জাদুঘর সম্পর্কে তাদের সম্যক ধারণা দেন। তবে এবার সেই জায়গায় বেগুন চাষ করা হয়েছে । তবে জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, ‘আমেরিকান গ্র্যান্ট’ দিয়ে দক্ষিণ পাশ দিয়ে ওয়াকওয়ে ও ফুলগাছ লাগানোর জন্য জায়গা ঘেরা হয়েছিল । তবে সেখানে পুঁইশাক লাগানো হয়েছে । আর জাদুঘরে দক্ষিণ পাশের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় যে কেউ বাইরে থেকে এই সবজিবাগান দেখতে পাবেন । তবে দাঁড়িয়ে কথা বলার জন্য লনের মতো যে জায়গাটা উন্মুক্ত রাখা হয়, সেখানেই বেগুনখেত করা হয়েছে।

জাদুঘরের একটি সূত্র জানিয়েছে যায় যে, জাদুঘরে কর্মরত আনসার সদস্যদের এই সবজি চাষের কাজে ব্যবহার করা হয় । তবে গতকাল রোববার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ পাশে দুটি তালিপামের গাছ, তার উত্তরে গাছ লাগানোর জন্য নান্দনিকভাবে যে বেড তৈরি করা হয়েছে সেখানে ফুলের পরিবর্তে বাতাসে দোল খাচ্ছে পুঁইলতা । তবে এর পূর্ব পাশে যে জায়গাটা উন্মুক্ত রাখা হতো, দর্শনার্থীরা যেখানে এসে বসতেন বা দাঁড়িয়ে কথা শুনতেন, সেখানে চাষ করা হয়েছে বেগুন । তবে বাইরে থেকে তাকালে জাদুঘরের দক্ষিণ পাশে আঙিনা যে কেউ সবজিখেত বলেই ধারণা করবেন । তবে জাদুঘরের মূল ভবনের উত্তর পাশেও ফুলের বাগান রয়েছে । আর বাগানের পশ্চিম পাশে একটি করলা মাচা তৈরি করা হয়েছে ।তবে সেখানে করলাগাছ তলিয়ে উঠেছে । ফুলবাগানের মধ্যে পেঁপেগাছ লাগানো হয়েছে । তবে আনসারদের থাকার ঘরের চালায় লাউগাছ ছিল । আর রোববার অবশ্য সেই গাছটির পাতা নেতিয়ে পড়া অবস্থায় দেখা যায়।

তবে জানতে চাইলে জাদুঘরের পরিচালক আলী রেজা মো. আবদুল মজিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে এক ইঞ্চি জায়গাও যেন খালি পড়ে না থাকে । আর করোনার সময় জায়গা খালি পড়ে রয়েছে, এ জন্য তিনি আনসার সদস্যদের সবজি চাষ করার জন্য অনুমতি দিয়েছেন । তবে এ সবজি তিনি খান না । তা আনসার সদস্যরাই খান । তবে জাদুঘরের ঐতিহ্যের সঙ্গে কি সবজি চাষের বিষয়টি যায়, জানতে চাইলে তিনি আর কোনো কথা বলেননি । তবে কিছুক্ষণ পরে তিনি ফোন করে বলেন, তিনি সব সবজি রাতের মধ্যেই তুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন ।

তবে ভূপর্যটক রাজশাহীর কৃতী সন্তান তারেক অণু সবজি চাষের কথা শুনে বলেন, জাদুঘরের প্রতি সামান্য মমত্ববোধ থাকলে কেউ এমন কাজ করতে পারে না । আর সুযোগ পেলে জাদুঘরের কোনো প্রত্নবস্তু বেহাত করে দিতেও তাদের বাধবে না । তিনি আর বলেন, জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে রাজশাহী জাদুঘরের চেয়ে হাজার গুণ জায়গা পড়ে আছে । তাই বলে কি সেখানে ধান চাষ করা হচ্ছে ।

Leave a Comment

betvisa