প্রাভা হেলথ এর বিরুদ্ধে করোনা পরীক্ষার ভুল রিপোর্টের অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি অভিযোগকারী সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহফুজা খানমের ছেলে মাহফুজ শফিকের অভিযোগ শুনেছে।
এ সময় মাহফুজ শফিক তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন।
মাহফুজ শফিক প্রাভার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও র্যাব মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
সে পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে গত বুধবার তদন্ত কমিটি প্রাভা হেলথ কর্তৃক প্রদত্ত করোনা টেস্টে ভুল রিপোর্ট প্রদান সংক্রান্ত উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের গঠিত টিমের কাছে তথ্য প্রদানের জন্য মাহফুজ শফিককে চিঠি দেন।
সে চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়ে লিখিত ও মৌখিকভাবে তথ্য দেন তিনি।
মাহফুজ শফিক কমিটিকে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, ১. প্রাভা হেলথ এর অতি উৎসাহী মার্কেটিং আমাদের আকৃষ্ট করেছে। ২. প্রাভা নামটি ইন্টারন্যাশনাল হেলথ চেইন অব ইন্ডিয়া। ৩. তাদের ওয়েবসাইটে (প্রাভা) বলা হয়েছে, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পার্টনার। ৪. আমার বড় মেয়ে বায়ান শফিকের প্রাভা হেলথের পজিটিভ রিপোর্ট (করোনা) পেয়ে মেডিনোভাতে সিটিস্ক্যান ও রক্তের অন্যান্য পরীক্ষা করানো হয় এবং বিভিন্ন ওষুধ খাওয়ানো হয়। ৫. প্রাভার পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর আইইডিসিআরের পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার আগে পর্যন্ত পুরো পরিবার অবর্ণনীয় মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করে। ৬. করোনা পজিটিভ না হয়েও ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস ওয়েবসাইটে পজিটিভ রিপোর্ট আপলোড করা হয়, সারা পৃথিবীর সব ইমিগ্রেশন দেখতে পাবে। এটা মানহানিকর। ৭. টিকেট, হোটেল ও অন্যান্য খরচসহ আর্থিক ক্ষতিসাধন।
তদন্ত কমিটির কাছে মাহফুজ শফিক সুষ্ঠু তদন্ত চান।
এ ব্যাপারে গত ১৩ জুলাই দেশ রূপান্তর ‘থামেনি সনদ জালিয়াতি: করোনা পরীক্ষায় প্রতারণা প্রাভা হেলথের’ শীর্ষক একটি প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সেখানে ডা. মাহফুজ জানান, তার ছোট মেয়ে জেইন শফিক ইংল্যান্ডে স্কলারশিপ পেয়েছে। তার ফ্লাইট ছিল গত শুক্রবার ভোরে। সঙ্গে বড় মেয়ে ও স্ত্রী যাবে। গত বুধবার বিকেল ৫টায় বনানীর প্রাভা হেলথে গিয়ে তিনজনের করোনা পরীক্ষার নমুনা দেন এবং সেদিনই রাত ১২টার দিকে মেইলে জানিয়ে দেওয়া হয় সবার পজিটিভ এসেছে। পরে প্রাভাকে আবার পরীক্ষা করার অনুরোধ জানালে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে এসএমএসের মাধ্যমে ও দুবার ফোন করে চিকিৎসার নানা ধরনের প্যাকেজ অফার করতে থাকেন। এতে সন্দেহ হলে তিনি নিজেও সেদিন রাতে গ্রিনলাইফ হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দেন ও পরদিন নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। পরে বাবা ও মা এবং আগে পরীক্ষা করা তিনজনসহ পুরো পরিবারের ২০ সদস্যের নমুনা আইইডিসিআরে পরীক্ষা করান এবং পরদিন সবার নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।
তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়িক কারণে প্রাভা ইচ্ছে করে ভুল রিপোর্ট দিয়েছে। কারণ তিনজনের রিপোর্টই একসঙ্গে ভুল হতে পারে না।
এমনকি সংসদে সম্প্রতি শেষ হওয়া বাজেট অধিবেশনে গত ৩ জুলাই প্রাভার বিরুদ্ধে করোনা পরীক্ষার ভুল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ তোলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা।
তিনি বলেন, করোনাকালে চুটিয়ে ব্যবসা করা প্রাভা হেলথ জালিয়াতি করছে। আমাকে ভুয়া পজিটিভ রিপোর্ট দিয়ে আতঙ্কিত করে তোলা হয়।
এ ছাড়া প্রাভার বিরুদ্ধে ভুল করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের আরো কিছু অভিযোগ দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।