পরীক্ষা এবং সবর

পরীক্ষা এবং সবর

কিছু জিনিস আগুনে পুড়ে যায়, কিছু জিনিস বিশুদ্ধ হয়।

অনেক সময় আমরা প্রশ্ন করি – আল্লাহ কেন আমাদের পরীক্ষা করেন?
কেন মানুষের ওপর বিপদ আসে?
কেন ভালো মানুষের ওপর বিপদ আসে,
আর নিকৃষ্ট লোকেদের আমরা সুখে-শান্তিতে থাকতে দেখি?

তাওহীদের পথে চলতে গেলে পরীক্ষা আসবেই।
এটাই নিয়ম।

এই পরীক্ষাসমূহের মাধ্যমে আর-রাহমান তার বান্দাদের মধ্যে থেকে বাছাই করে নেন তাদেরকে –  যারা লাভ করবে তাঁর নৈকট্য। এ পরীক্ষাসমূহের মাধ্যমে আর-রাহমান তার বাছাইকৃত বান্দাদের মর্যাদা দান করেন, সম্মানিত করেন। বিশুদ্ধ করেন। পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ হক ও বাতিলকে আলাদা করে দেন, এবং মানুষের কাছে তা স্পষ্ট করে তোলেন। পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ বিজয়ের উপলক্ষ প্রস্তুত করেন, বান্দাকে যাচাই করেন, আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করেন। 

তাই যিনি পরীক্ষার সম্মুখীন হন না, যার দ্বীন পালনে কাফির-যালিমদের পক্ষ থেকে বাধা আসে না,
হয়তো তার চিন্তা করার সময় এসেছে – সে সত্যিই দ্বীন ইসলাম সম্পূর্ণ ভাবে পালন করছে কি না।

যে ব্যক্তি ভাবে সে হক পথের ওপর আছে, আবার আশা করে এ কারণে তার ওপর কোন বাঁধাবিপত্তি বা পরীক্ষা আসবে না, সে উন্মাদ।

নিশ্চয় যে পথে চলতে গেলে বাধা আসে না, যে পথ কণ্টকাকীর্ণ নয়, সে পথ দ্বীন ইসলামের পথ নয়।

খুব চমৎকার ভাবে এই পথের পরিচয় দিয়েছেন ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ,
কয়েকটি লাইনে ফুটিয়ে তুলেছেন চিন্তার একটি সমুদ্রঃ-

“ এ পথ তো সে পথ!!

যে পথে চলতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পরেছিলেন আদাম।
ক্রন্দন করেছেন নূহ।
আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন ইব্রাহীম খলীল।
যবেহ্ করার জন্য শোয়ানো হয়েছে ইসমাইলকে।
খুব স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করা হয়েছে ইউসুফকে, কারাগারে কাটাতে হয়েছে জীবনের দীর্ঘ কয়েকটি বছর।
জাকারিয়াকে করাত দ্বারা দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে।
যবেহ্ করা হয়েছে নারী সংশ্রব থেকে মুক্ত সায়্যেদ ইয়াহইয়াকে।
রোগে ভুগেছেন আইয়ূব।
দাউদের ক্রন্দন, সীমা অতিক্রম করেছে।
নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেছেন ঈসা।

আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম।

নানা দুঃখ-দুর্দশা, কষ্ট-ক্লেশ ভোগ করেছেন শেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ।

আর তুমি (এখনও) খেল-তামাশায় মত্ত?!! ”

[আল-ফাওয়ায়েদ, লি-ইবনিল কাইয়্যিম]

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন –
” জান্নাতকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা এবং জাহান্নামকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে কামনা-বাসনা বস্তু দ্বারা। ”
[সহীহ মুসলিম]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন –

” মুমিনের উপমা শস্য জাতীয় গাছ এর ন্যায়। বাতাস সর্বদা উহাকে আন্দোলিত করে। অনুরূপভাবে মু’মিনের উপরও সর্বদা বিপদ-আপদ আসতে থাকে।
আর মুনাফিকের উপমা দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়। মূল না কাটা পর্যন্ত তা প্রকম্পিত হয় না। ”
[সহীহ মুসলিম]

হকপথের বৈশিষ্ট্যই পরীক্ষা।
এই পথে পরীক্ষা আসবেই।

আমাদের দায়িত্ব হলঃ

– পরীক্ষার সময় আল্লাহর ওপর ভরসা করা,

– সবর করা, এবং

– হক্বের ওপর অবিচল থাকা।

অল্প কিছু শব্দ, কিন্তু এর বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন!

– শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল হাফিজাহুল্লাহ

Leave a Comment