দুই গ্রামের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য দুই দশকের বেশি সময় আগে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দুই পাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় এক দিনের জন্যও সেতুটি ব্যবহার হয়নি। আজ শুক্রবার সকালে ইটবোঝাই একটি নৌকার ধাক্কায় সেতুটি ভেঙে পড়েছে।
সেতুটির অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা ধরখার ইউনিয়নে। বনগজ ও কৃষ্ণনগর গ্রামের মধ্যবর্তী নয়াখালের ওপর সেতুটি নির্মাণ হলেও তা কোনো কাজে আসেনি।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, শুক্রবার সকালে প্রায় সাত হাজার ইটবোঝাই একটি নৌকার সামনের অংশের সঙ্গে সেতুর মাঝখানের পিলারে ধাক্কা লাগে। এতে সেতুটি আংশিক ভেঙে যায়। সেতুর ভাঙা অংশ নৌকার ওপর পড়ে। নৌকাটি খালে ডুবে যায়। তবে মাঝিসহ সহযোগীদের থাকার কক্ষটি নৌকার পেছনের দিকে থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এলাকাবাসীর দাবির মুখে ১৯৯৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনের তৎকালীন সাংসদ শাহ আলম সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। আখাউড়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় (এলজিইডি) নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছিল। উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি সেতুটির দুই গোড়ায় মাটি নেই। সেতুটি সমতল থেকে অন্তত ১৫ ফুট উঁচু। এতে সারা বছর চারপাশে পানি থাকায় ২২ বছর সেতুটিতে কেউ কখনো ওঠানামা করেনি।
তবে সেতুটি নিয়ে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। এলজিইডির জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৭ মিটার বা ৭৭ ফুট। সেতুর প্রস্থ ছিল ৬ ফুট। ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বল্প যানবাহন ও হেঁটে চলাচলের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় ব্যক্তিদের মতে, সেতুটির দৈর্ঘ্য ১২০ ও প্রস্থ ৮ ফুট। তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে ৪০ লাখের বেশি টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণ করেন।
তাঁরা বলেন, সেতু নির্মাণের পরের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তন হয়। এরপর সেতু নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামাননি। সংযোগ সড়ক না থাকায় অবহেলায় পড়ে থাকে সেতুটি।
বনগজ গ্রামের আরিফুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন, কৃষ্ণগনর গ্রামের বাছির মিয়া, নুরু মিয়া বলেন, নয়াখালে শুধু সেতুটিই নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু রাস্তার কোনো কাজ হয়নি। সেতুটি এক দিনের জন্যও গ্রামের মানুষ ব্যবহার করতে পারেনি। বর্ষাকাল এলে এলাকার শিশুরা সেতুর ওপরে ওঠে আর সেতু থেকে পানিতে লাফ দেয়। বিকেলে অনেকে সেতুর ওপরে বসে আড্ডা দেয়। এরই মধ্যে সেতুটি ভেঙে পড়ল।
ধরখার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাছির মো. আরিফুল হক বলেন, সেতু নির্মাণের আগে রাস্তা নির্মাণ করতে হয়। কিন্তু এখানে ঘটেছে উল্টোটা। আগে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পরে আর রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। দুই বছর আগে একটি কর্মসূচি দিয়ে সেখানে ছয় লাখ টাকা ব্যয় করে মাটি ফেলেছিলেন। কিন্তু বন্যার পানি সেই মাটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আর বর্তমান মাটির রাস্তা থেকে সেতুটির উচ্চতা প্রায় ১৫ থেকে ১৮ বা ২০ ফুট হবে। এই সেতু কোনো কাজে আসেনি।
এলজিইডির আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, ইউএনওর মাধ্যমে সেতুটি ভেঙে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামকে পাঠানো হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শিরাজুল ইসলাম বলেন, তাঁদের ডেটাবেইসের তথ্যানুসারে সেতুর দৈর্ঘ্য ১৭ মিটার বা ৫৫ দশমিক ৭৭ ফুট এবং প্রস্থ ৬ ফুট। ১৯৯৯ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ ব্যয় ছিল ৬ লাখ টাকা।