যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ভাষা। ভাষার ভিত্তিতে আলাদা করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে। কিন্তু একই গ্রামের নারী ও পুরুষের ভাষা যদি আলাদা হয়, তাহলে সেটা অবাক বিষয় বৈকি।
কিন্তু নাইজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের উবাং গ্রামের নারী ও পুরুষরা কথা বলেন আলাদা ভাষায়। আর নিজেদের এই অভিনবত্বের জন্য তারা খুব গর্বিত। এই বিষয়টিকে তারা সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ হিসেবে মনে করেন।
ওই গ্রামের ছেলে শিশুরা ১০ বছর বয়স পর্যন্ত নারীদের ভাষায় কথা বলে। কারণ শৈশবের বড় একটা অংশ তাদের মায়ের সঙ্গেই কাটে। ১০ বছরের পর তারা পুরুষের ভাষা শেখে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নাইজেরিয়ার প্রধান খাদ্য লাল আলুকে নারী ও পুরুষের ভাষায় ভিন্ন ভাবে বলা হয়। নারীদের ভাষায় একে বলা হয় “ইরুই” এবং পুরুষদের ভাষায় বলা হয় “ইটং”। একই ভাবে কাপড়কে পুরুষদের ভাষায় বলা হয় ‘‘নকি’ আর নারীদের ভাষায় বলা হয় “আরিগা”।
তবে নারী ও পুরুষের ভাষার পার্থক্যের নির্দিষ্ট কোনো প্যার্টান নেই বলে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
ভাষার এই অভিনব পার্থক্যের ব্যাপারে উবাং গ্রামের প্রধান অলিভার ইবাং জানান, কোনো বালকের পুরুষদের ভাষায় কথা বলা শুরু করাকে বড় হওয়ার লক্ষণ হিসেবে মনে করা হয়। নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানোর পরও যদি কোনো কিশোর পুরুষদের ভাষায় কথা বলা শুরু না করে তাহলে তাকে সমাজে ‘‘অস্বাভাবিক’’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
নৃবিজ্ঞানী চি-চি উন্ডি ওই সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে তিনি জানিয়েছিলেন, নারী ও পুরুষের ভাষায় অনেক শব্দেই মিল রয়েছে। তবে লিঙ্গভেদে কিছু কিছু শব্দ একদম আলাদা বলে জানিয়েছেন তিনি।
নাইজেরিয়ার ভাষাতত্ত্ব অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে দেশটির পাঁচশ’টি আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে অন্তত ৫০টি ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। ইগবো, ইওরুবা এবং হাউসা নাইজেরিয়ার প্রধান ভাষা। তবে জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে যোগাযোগের জন্য অনেক মানুষ ইংরেজিতেও কথা বলে।