নামাজের সুমহান মর্যাদা

আল্লাহ, তাঁর মনোনিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও আখিরাতে সঠিকভাবে ঈমান আনার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, তা আল্লাহ তাআলা নিজেই আল কুরআনের সূরা নাস – এ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ মানুষের রব, বাদশাহ ও ইলাহ বা মাবুদ। কুরআনে আরও একটি সম্পর্কের কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি আরো আবেগময়।
আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে ঈমানদারদের ওয়ালী বা অভিভাবক। জীবন্ত
নামায আল্লাহর সাথে এ চার রকম সম্পর্ক মযবুত করতে থাকে। মুমিনের রূহানী
তরক্বীর জন্য নামাযই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নামাযকে তার চোখের মণি বলেছেন। কখনো কোন পেরেশানীর কারণ ঘটলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের মাধ্যমে প্রশান্তি বোধ করতেন।

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
أن النبي صلى الله عليه وسلم رأى نُخْامَة في القِبْلَة، فَشَقَّ ذلك عليه حتى رُئِي في وجْهِه، فقام فَحَكَّه بِيَده، فقال: «إن أحدكم إذا قام في صلاته فإنه يُنَاجِي رَبَّه، أو إن رَبَّه بينه وبين القِبْلَة، فلا يَبْزُقَنَّ أحدُكم قِبَل قِبْلتِه، ولكن عن يَسَاره أو تحت قَدَمَيه» ثم أخذ طَرف رِدَائِه، فَبَصَقَ فيه ثم ردَّ بَعْضَهُ على بعض، فقال: «أو يفعل هكذا»
নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার (দিকের দেওয়ালে) থুথু দেখতে পেলেন এটা তাঁর প্রতি খুব ভারী মনে হল; এমনকি তাঁর চেহারায় সে চিহ্ন দেখা গেল। ফলে দাঁড়ালেন এবং তিনি তা নিজ হাত দ্বারা ঘষে তুলে ফেললেন। তারপর বললেন,
“তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে কানে কানে (ফিসফিস ক’রে কথা) বলে। আর তার রব তার ও কেবলার মধ্যস্থলে থাকেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন কেবলার দিকে থুথু না ফেলে; বরং তার বামে অথবা পদতলে ফেলে।”
অতঃপর তিনি তাঁর চাদরের এক প্রান্ত ধরে তাতে থুথু নিক্ষেপ করলেন। তারপর তিনি তার এক অংশকে আর এক অংশের সাথে রগড়ে দিয়ে বললেন, কিংবা এইরূপ করে।” [সহিহ বুখারি]

সুতরাং বোঝা গেল, যখন কেউ নামাজে দাঁড়ায় তখন সে রবের সাথে গোপনে কথা বলে। রবও তাঁর ও কিবলার মাঝে বিরাজ করেন।

জীবন্ত নামাষের বাস্তব অবস্থা এটাই। মুমিন দুনিয়াকে পেছনে রেখে নামাযে যখন দাঁড়ায়, তখন তার ও কিবলার মাঝে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ থাকে না। নামাযে যা কিছু পড়া হয় এ সবই আল্লাহর সাথে একান্তে বলা হয়। তাই এ সবই আল্লাহর সাথে গোপন সংলাপ।
নামায মুমিনের মিরাজ কথাটি প্রচলিত আছে। সহীহ হাদীসে এ ভাষায় কথাটি না পাওয়া গেলেও উপরের হাদীসটি থেকে এ কথাটি নামাযের বেলায় প্রযোজ্য। পার্থক্য এ টুকু অবশ্য রয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি’রাজে গিয়েছিলেন সশরীরে,আর নামাযে মুমিনের মিরাজ হয় শুধু রূহানীভাবে। নামাযে আল্লাহরই সাথে নামাযীর সঙ্গোপনে সংলাপ চলে। এটা অন্তরে অনুভব করার বিষয়। নামায যতটা জীবন্ত হয় এ অনুভূতি ততই গভীর হয়।

বহু হাদীস থেকে জানা যায়, অগণিত ফেরেশতা নামাযের বিভিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
এক দল ফেরেশতা শুধু দাঁড়িয়ে আছে, একদল শুধু রুকুতে আছে, একদল শুধু সিজদায় আছে। হাদীস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, কোন একদল ফেরেশতা পূর্ণ নামায আদায় করে।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে পূর্ণ নামায আদায়ের মাধ্যমে ফেরেশতার চেয়েও মর্যাদা দান করেছেন। তাই আল্লাহর সাথে বান্দাহর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার জন্য নামাযই শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। জীবন্ত নামাযের মজা যারা পেয়েছে, তাদের নিকট নামাযই সবচেয়ে প্রিয়। নামাযেই আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়া যায়।

নামাযে দেহ ও রূহ নির্মাণের জন্য যা করণীয় তা প্রতি ওয়াক্তে এবং প্রতি রাকাআত করা সম্ভব নয়। এর জন্য মনকে অবসর করে প্রয়োজনীয় যথেষ্ট সময় লাগিয়ে নামায আদায় করতে হয়। এর জন্য উপযুক্ত সময় হলো শেষ রাত। তাহাজ্জুদের অভ্যাস করতে পারলেই এটা সম্ভব ও সহজ মনে হবে। ৫ ওয়াক্তের নামাযে তাহাজ্জুদের মত নিরিবিলি পরিবেশ ও মানবিক প্রস্তুতি সম্ভব নয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয নামাযের পর তাহাজ্জুদের নামাযকেই সকল নফল নামাঘের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেছেন। তাহাজ্জুদ সম্পর্কে একটি হাদীস উল্লেখ করাই যথেষ্টঃ
রাত জাগা তোমাদের কর্তব্য। কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক লোকদের তরীকা, তোমাদের রবের নৈকট্যের মাধ্যম, আগের গুনাহর কাফ্ফারা এবং গুনাহ থেকে বিরত রাখার উপায়। (তিরমিযী)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এ হাদীসে তাহাজ্জুদের ৪টি ফযীলত বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে আল্লাহর নৈকট্য একটি। আল্লাহর দরবারে ধরনা দেওয়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যমই হলো নামায। আল্লাহর সাথে এটা বান্দাহর সরাসরি সম্পর্কের মহা সুযোগ।
নামাযের রূহের দিকটাকে না বুঝলে নামায নিতান্তই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হতে বাধ্য। এ প্রাণহীন নামাযে কী করে মজা পাওয়া যেতে পারে? এ জাতীয় নামাযই আমাদের সমাজে চালু আছে। এ কারণেই এ ধরনের নিম্প্রাণ নামায দ্বারা নামাযের উদ্দেশ্য পূরণ হতে পারে না।

আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّنِیۡۤ اَنَا اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدۡنِیۡ ۙ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ لِذِکۡرِیۡ ﴿۱۴﴾
“প্রকৃতই আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, কাজেই আমার ‘ইবাদাত কর, আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে নামায কায়িম কর।” (সূরা তোয়া-হা : ১৪)

বারবার নামাযে হাযির হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। যাতে আল্লাহর কথা ভুলে
না যাই, সেজন্যই বারবার নামায। নামায শেষ হলে দুনিয়ার দায়িত্ব পালনকালে কি
আল্লাহকে ভুলে থাকার অনুমতি আছে?

সূরা জুমুআর ১০ নংআয়াতে আল্লাহ বলেন,
فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۰﴾
অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার। [সুরা জুমুয়াঃ ১০]

এর অর্থ বৈষয়িক কাজ-কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য। অর্থাৎ, জুমআর নামায শেষ করার পর তোমরা পুনরায় নিজ নিজ কাজে-কামে এবং দুনিয়ার ব্যস্ততায় লেগে যাও। এ থেকে উদ্দেশ্য হল এই ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেওয়া যে, জুমআর দিন কাজ-কর্ম বন্ধ রাখা জরুরী নয়। কেবল নামাযের জন্য তা বন্ধ রাখা জরুরী।

এ আয়াতে নামাযের বাইরে আরও বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাদীসে আছে, আল্লাহ বলেন, “বান্দাহ যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথেই থাকি। যখন সে একা স্মরণ করে আমিও তখন একা তাকে স্মরণ করি। যখন সে কোন জামাআতে আমাকে স্মরণ করে তখন এর চেয়েও ভালো জামাআতে (ফেরেশতাদের মধ্যে) আমি তাকে স্মরণ করি। যখন সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, আমি তখন তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। যখন সে এক হাত আমার দিকে এগিয়ে আসে আমি তার দিকে এক গজ এগিয়ে যাই। যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তখন তার দিকে দৌড়ে যাই।”

আল্লাহর সাথে বান্দাহর এ সম্পর্ক নামাযের মাধ্যমেই গড়ে উঠে ও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

Leave a Comment

betvisa