ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ায় নোয়াখালীর এ দ্বীপে আনন্দ মিছিল হয়েছে। সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা আজ রোববার দুপুরে এই আনন্দ মিছিল করে। এ সময় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাকে স্বাগত জানিয়ে লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা যায় রোহিঙ্গাদের। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে চার বছর আগে ঘরবাড়ি ছেড়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজেদের ভূমিতে ফেরাতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ সরকার। তবে সে পর্যন্ত রোহিঙ্গারা যাতে কিছুটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে পারে, সে কারণে নোয়াখালীর ভাসানচরে তাদের জন্য নতুন ঘরবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করেছে সরকার। কক্সবাজারের জনাকীর্ণ আশ্রয়শিবির থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রথম দিকে এ উদ্যোগে জাতিসংঘ আপত্তি জানিয়ে আসছিল। তবে পরে তাদের কর্মকর্তারা ভাসানচর পরিদর্শন করে পুরো বন্দোবস্ত দেখার পর বিশ্ব সংস্থাটি তাতে সমর্থন দেয়। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জাতিসংঘ কীভাবে সম্পৃক্ত হবে, তা নিয়ে গতকাল শনিবার সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইইউএনএইচসিআর)। এ খবরে আজ দুপুরে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে আনন্দ মিছিল করে বলে ভাসানচরে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, রোহিঙ্গারা খুবই আনন্দিত। তারা জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি, সুপেয় পানি, পয়োনিষ্কাশন, চিকিৎসা, মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম ও ভাষায় অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবিকায়নের ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে জাতিসংঘ। এ ছাড়া ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের কারণে পার্শ্ববর্তী স্থানীয় এলাকা ও জনগণের ওপর যদি প্রভাব পড়ে, তা নিরসনে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানায় বিশ্ব সংস্থাটি।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬ দফায় ১৮ হাজার ৫২১ রোহিঙ্গাকে এ দ্বীপে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে শিশু, নারী ও পুরুষের সংখ্যা যথাক্রমে ৮ হাজার ৭৯০, ৫ হাজার ৩১৯ ও ৪ হাজার ৪০৯।
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী মাসে বাকি ৮১ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার কাজ আবার শুরু হবে। কক্সবাজার থেকে তাদের সেখানে সরিয়ে নিতে তিন–চার মাস লাগতে পারে।