মহান বিজয় দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে গণ অধিকার পরিষদ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিষদের সদস্যসচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেছেন, ‘আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি, অনেক সহ্য করেছি; এভাবেই হামলা-মামলা চলতে থাকলে আত্মরক্ষার জন্য আমাদের যা কিছু আছে, তা নিয়েই ওদের প্রতিহত করব।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে নুরুল হক এসব কথা বলেন। মহান বিজয় দিবসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গণ অধিকার পরিষদের ব্যানারে এই বিক্ষোভ হয়। এ ছাড়া করা হয় মোমবাতি প্রজ্বালন৷।
বিক্ষোভ সমাবেশে নুরুল হক বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিনে ফুল দিতে গেলে শরীয়তপুরে স্থানীয় সাংসদ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। টাঙ্গাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক চৌধুরীর নির্দেশে ছাত্রলীগ-যুবলীগ আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। রাঙামাটির লংগদুতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবলু দাসের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। জামালপুর, পাবনা এবং কুড়িগ্রামেও আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ বর্বর আক্রমণ করেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেতা-কর্মীদের বাধা দেওয়া হয়েছে।’
বিজয় দিবসে ফুল দেওয়া আজকের ‘বিনা ভোটের’ সরকারের কাছে ‘অপরাধ’ উল্লেখ করে নুরুল অভিযোগ করেন, ‘বিজয় দিবসে যারা আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি, অনেক সহ্য করেছি। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত না করা হলে এবং এভাবেই হামলা-মামলা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আত্মরক্ষার জন্য আমাদের যা কিছু আছে, তা নিয়েই ওদের মোকাবিলা করব। বেলা অনেক গড়িয়েছে, জল অনেক গড়িয়েছে। এবার ফাইনাল খেলার সময় হয়েছে।’
সরকারের উদ্দেশে করে নুরুল হক বলেন, ‘সাময়িকভাবে আহত ও রক্তাক্ত করেছ, একেবারে শেষ করতে পারবে না। পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্রকামী শক্তিকে ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-যুবক-তরুণ প্রজন্মকে আগামী দিনে লড়াই-সংগ্রাম করতে হবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণ অধিকার পরিষদের জন্ম হয়েছে।’
বর্তমান সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী ও বিনা ভোটের স্বৈরাচার সরকার’ বলে আখ্যা দেন নুরুল হক। তিনি অভিযোগ করেন, এই সরকার পাকিস্তানি শাসকদের বর্বরতাকেও অতিক্রম করে গেছে। এই সরকারের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তারা বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলছে। এই সরকার ভিন্নমত ও বিরোধীদের একেবারেই সহ্য করতে পারছে না। যেখানেই ভিন্নমত দেখছে, সেখানেই হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের মতো তারা হামলে পড়ছে।
সরকারের কড়া সমালোচনা করে নুরুল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার হলেও তারা আদৌ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জায়গায় নেই। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, মানবাধিকারকে তারা ধুলায় লুটিয়ে দিয়েছে। তারা দেশকে কলঙ্কিত করেছে, যে কারণে পৃথিবী আমাদের আর গণতান্ত্রিক দেশ বলে মনে করছে না।’
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে গণ অধিকার পরিষদের নেতা মুহাম্মদ রাশেদ খান ও ফারুক হাসান, যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আতাউল্লাহ, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।