জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গতকাল রোববার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় শুরু হয়েছে জলবায়ু সম্মেলন বা কপ-২৬। এদিন কপ-২৬–এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণকারী অলোক শর্মা ঘোষণা দিয়েছেন, প্যারিস যেখানে অঙ্গীকার করেছিল, গ্লাসগো সেখানে তা পূরণ করবে। তবে চুক্তির লক্ষ্য অর্জনে শীর্ষ দূষণকারী শিল্পোন্নত দেশগুলো কতটা পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, সবার নজর আসলে সেই জি-২০–এর রোম শীর্ষ সম্মেলনের সমঝোতার দিকে। তা ছাড়া গ্লাসগোতে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং নীতিনির্ধারকেরা আসতে শুরু করলেও পরিবেশবাদী বিক্ষোভকারীরা গত শনিবার থেকেই সবার নজর কেড়েছেন।
জি-২০–এর নেতারা চলতি শতকের শেষে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যের প্রতি তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে তা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কী কী পদক্ষেপ তাঁরা গ্রহণ করবেন, তার সামান্যই প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো বা যতটা ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন হচ্ছে, ততটাই বায়ুমণ্ডল থেকে অপসারণের বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। গতকাল সম্মেলন শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর, কপ–২৫–এর সভাপতি চিলির ক্যারোলিনা স্মিডিটের উদ্বোধন ঘোষণার মাধ্যমে। এরপর অলোক শর্মার কাছে সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। অলোক শর্মা বলেন, বিশ্বের ১৯৫টি দেশের সর্বসম্মত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে হারে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটছে, তাতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
তবে সদস্যদেশগুলো যে হালনাগাদ অঙ্গীকারের (এনডিসি) কথা জানিয়েছে, তাতে ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্গিরণ কমবে। এটা আরও অনেক বাড়াতে হবে এবং এখান থেকেই ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষার দশক শুরু হোক। অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (ইউএনএফসিসিসি) নির্বাহী সচিব প্যাট্রিসিয়া এস্পানেজা বলেন, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে একটি দিনও দেরি করার মানে হচ্ছে সেই দিনটির অপচয়। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) চেয়ার ড. হুসেং লি এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি আবদুল্লাহ শহীদও এই অধিবেশনে বক্তৃতা করেন।
আবদুল্লাহ শহীদ বলেন, ‘আমাদের আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে হবে, বিশেষ করে জি-২০–এর সেই সব উচ্চ দূষণকারী দেশের, যারা বিশ্বের মোট গ্যাস উদ্গিরণের ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন ১০ হাজার কোটি ডলার নয়, নিযুত কোটি (ট্রিলিয়ন) ডলার।’ সম্মেলনে গতকাল মূলত বিভিন্ন পদ্ধতিগত বিষয় ও বিভিন্ন আনুষঙ্গিক আলোচনা–কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার কথা। আজ সোমবার রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা সম্মেলনে অংশ নেবেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ যে হালনাগাদ জাতীয় অবদান (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন বা এনডিসি) নির্ধারণ করেছে, তার অতিরিক্ত কিছু কেউ ঘোষণা করে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সরকারপ্রধানদের পর্বটি দুদিনের। এরপর শুরু হবে আসল পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণ।
এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ ও আঞ্চলিক জোট, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠী জলবায়ু–সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে সভা–সেমিনার আয়োজন করছে। গতকাল গ্লাসগোর স্থানীয় সময় বিকেলে ইন্টারন্যাশনাল নাইট্রোজেন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) এবং সাউথ এশিয়ান কো–অপারেটিভ এনভায়রনমেন্টাল প্রোগ্রাম, সাসেপের সহযোগিতায় শ্রীলঙ্কার সরকার টেকসই নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সেমিনার আয়োজন করেছে। তবে সব আয়োজনের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের নানা সৃজনশীল বিক্ষোভ-প্রতিবাদ গ্লাসগোকে মুখর করে তুলেছে।