জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির বোঝাও নারীর বেশি

২০২০ সালের মে মাসে আঘাত হানে আম্পান। তারপর পার হয়ে গেছে এক বছরের বেশি সময়। তবে সুফিয়া বেগমের (৫৮) বাড়িতে এখনো রয়ে গেছে সেই ঘূর্ণিঝড়ের চিহ্ন। টিনের চালার একটি ঘরই ছিল, সেটি উড়ে গেছে। টিকে আছে খালি নড়বড়ে কাঠামো। এর ভেতরে দাঁড়ালে দেখা যায় উন্মুক্ত আকাশ। রান্নার ছোট ঘরটিও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন খড়ের চালার একটি ঘরেই চার সদস্যের পরিবারটি মাথা গুঁজে থাকে।সুফিয়া বেগমের বাড়ি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের সিঅ্যান্ডবির কলোনির কাছে। পরিবারের তিনিই প্রধান। পেশায় চাতালশ্রমিক। স্বামী নিরুদ্দেশ হয়েছেন বছর কয়েক আগে। বড় ছেলেটি মারা গেছেন। সেই ছেলের সন্তান, আরেক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। ছোট যে ছেলেটি তাঁর সঙ্গে থাকেন, তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। কাজ করতে পারেন না।

আম্পানের পর কিছু খাবার ছাড়া আর কোনো সহায়তা পাননি সুফিয়া। তিনি বললেন, ‘ঘর সারতি কারও কাছে দুটো পয়সা পায়নি কো। কে দেবে, গরিব মানুষির জন্যি কেউ কি কিছু দ্যায়?’ নিজের জমানো সর্বস্বটুকু দিয়ে আর কিছু কর্জ করে ঘর বসবাসের উপযোগী করেছেন।বিজ্ঞাপনবিজ্ঞাপনআম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ১৯ জেলার ৭৬টি উপজেলা। সরকারি হিসাবে, এতে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ হিসাবে সুফিয়াদের মতো মানুষের হিসাব ধরা হয়েছে কি না, কে বলবে। তবে তাঁর মতো অনেক মানুষ ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা অন্য দুর্যোগে পড়ে প্রতিবছরই ক্ষতি গোনেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব দুর্যোগ হচ্ছে ঘন ঘন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তাঁদের আবাসস্থল আবার বাসের উপযোগী করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। দুর্যোগের কারণে অসুস্থতা, পেশা হারানোর মতো বড় সমস্যা তো আছেই।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দুর্যোগে পুরুষের তুলনায় সুফিয়ার মতো নারীদের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ হাউসহোল্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে’ নামের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় গত অক্টোবরে। বাংলাদেশের মানুষের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের আর্থিক প্রভাব নিয়ে এ ধরনের জরিপ এই প্রথম। ১০টি জেলার ৩ হাজার ৯৫টি খানা বা পরিবারের ওপর এ জরিপ চলে। এর মধ্যে ৪২ শতাংশের বেশি পরিবার বন্যাদুর্গত এবং ৪০ শতাংশের বেশি ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকিরা কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভুক্তভোগী।জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিসিসিএডি) পরিচালক সালিমুল হক বলেন, ‘পুরুষদের তুলনায় নারীরা বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। মানবসৃষ্ট এ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির ভার সবচেয়ে বেশি তাঁদের সামলাতে হয়। পরিস্থিতি সামলাতে তাঁদের কাছে থাকা শেষ সম্পদটুকুও তাঁরা ব্যবহার করতে বাধ্য হন।’

Leave a Comment

betvisa