মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণফোন ২০২০-এর জুলাই মাসে ‘কেমন আছেন তারা’ শীর্ষক কয়েক পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রোমোশনাল অনুষ্ঠান প্রচার করে। অনুষ্ঠানটির টাইটেল ছিল ‘গ্রামীণফোন নিবেদিত কেমন আছেন তারা’। অনুষ্ঠানটি গ্রামীণফোনের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচার করা হয় এবং তা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। এই অনুষ্ঠানে প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের রচিত চারটি জনপ্রিয় চরিত্র বাকের ভাই (কোথাও কেউ নেই), এলাচি বেগম (অয়োময়), সোবহান সাহেব (বহুব্রীহি) এবং তৈয়ব আলীকে (উড়ে যায় বক পক্ষী) ব্যবহার করা হয়। এ জন্য গ্রামীণফোন হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্য বা উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে কোনো প্রকার অনুমতি বা লাইসেন্স নেয়নি। চারটি চরিত্র ব্যবহার করা এপিসোডগুলো ৩০ লাখের বেশি ভিউ হয়েছে। প্রচলিত আইনে এ ধরনের ব্যবহারের জন্য বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও গ্রামীণফোন তা মানেনি, যার ফলে মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘিত হয়েছে।
অনুমতি না নিয়েই হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় চারটি চরিত্রকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার ফলে মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ এনে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে হুমায়ূন পরিবার। প্রয়াত এই লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিজবাহ এ নোটিশ পাঠান।
আইনজীবী হামিদুল মিজবাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে গ্রামীণফোনকে নোটিশ পাঠিয়েছি। এর আগে গত রোববার রাতেও ই-মেইল করেছিলাম।’
আইনজীবী আরও জানান, মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘন করে গ্রামীণফোন যে চারটি চরিত্র অবলম্বনে যেসব প্রমোশনাল ভিডিও প্রচার করছে, তা তিন দিনের মধ্যে অপসারণ করতে বলা হয়েছে নোটিশে। সেই সঙ্গে মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘনের জন্য ৩ কোটি ১৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ১৫ দিনের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্যদের প্রদান করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছেন নোটিশকারী আইনজীবী মিজবাহ।
তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় চারটি চরিত্র ‘বাকের ভাই’, ‘এলাচি বেগম’, ‘সোবহান সাহেব’ ও ‘তৈয়ব আলী’ কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে গ্রামীণফোন মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘন করেছে। প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, কন্যা নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ, বিপাশা আহমেদ, পুত্র নূহাশ হুমায়ূন ও ভাই জাফর ইকবালের পক্ষে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মেহের আফরোজ শাওন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হুয়ামুন আহমেদের সৃষ্টি অনেকগুলো চরিত্রের মধ্যে বাকের ভাই, এলাচি বেগম, সোবহান সাহেব এবং তৈয়ব আলী চরিত্র চারটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং দর্শকপ্রিয়। এই চরিত্রগুলো এখনো দর্শকদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। এ সমস্ত চরিত্রের অনুমতিহীন, বাণিজ্যিক ব্যবহার হুমায়ুন আহমেদের মেধাস্বত্ব অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
উল্লেখ্য, ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর’, অয়োময়-এ ‘এলাচি বেগম’র চরিত্রে অভিনয়ে ছিলেন সারা যাকের, বহুব্রীহি’র ‘সোবহান সাহেব’র চরিত্রে ছিলেন আবুল হায়াত ও ‘উড়ে যায় বক পক্ষী’ ধারাবাহিকে ‘তৈয়ব আলী’ চরিত্রে অভিনয় করেন ফারুক আহমেদ।