গণমিছিলে আসা ও ফেরার সময় ৩৭ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ: বিএনপি

রাজধানীর নয়াপল্টনে শুক্রবারের গণমিছিলে যোগ দিতে আসা এবং মিছিল শেষে ফেরার পথে বিএনপির ৩৭ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া গণমিছিলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ৩০ ডিসেম্বরের আগে সাত দিন ঢাকা মহানগরী থেকে আরও ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ এ তথ্য জানিয়েছেন।

সৈয়দ এমরান সালেহ বলেন, গণমিছিলে যোগদানের জন্য আসা এবং মিছিল শেষে ফেরার পথে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৬ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গণমিছিল থেকে ফেরার পথে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ২১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে পোস্টার লাগানোর সময়ও গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মধ্যে ৫১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সালাউদ্দিন রতন, মো. সেলিম, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের শামীম, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের নুর ইসলাম, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মুসা, ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইমরান, উত্তরা পশ্চিম থানা শ্রমিক দলের আল আমিন, ওয়ারী থানার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদ পাটোয়ারি রয়েছেন। এ ছাড়া চকবাজার থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির মেজবাহ উদ্দিনকে না পেয়ে তাঁর ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী সিফাতকে গ্রেপ্তার করে চকবাজার থানার পুলিশ।

তবে এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য জানা যায়নি।

বিএনপি বলেছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রাজধানীবাসীকে অবরুদ্ধ রেখে মেট্রোরেলের আংশিক উদ্বোধন করা হয়েছে। মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণকাজ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ঢাকঢোল পিটিয়ে তাড়াহুড়ো করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করা হয়েছে। এত তাড়াহুড়োয় জনমনে সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে নিপীড়ক সরকার বুঝতে পারছে, তাদের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। দেশের প্রকৃত চিত্র আড়াল করতে আংশিক মেট্রোরেলের উদ্বোধনের নামে কার্যত অহমিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় ‘অস্বাভাবিক, ভাড়াও বেশি’
মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬-এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। গত ১৯ জুলাই হঠাৎ মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় একসঙ্গে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা করা হয়। এই ব্যয় অস্বাভাবিক দাবি করে বলা হয়, জনগণ জানতে চায় এই প্রকল্প থেকে কত টাকা লুটপাট হয়েছে।

মেট্রোরেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ‘কস্ট অব কনস্ট্রাকটিং মেট্রোরেল ইন ইন্ডিয়া ভার্সেস ঢাকা মেট্রো’ শীর্ষক এক বিশ্লেষণকে উদ্ধৃত করে বিএনপি বলেছে, ভারতের বিভিন্ন শহরে মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয়েছে ৪ থেকে ৬ কোটি ডলার। সেখানে ২০১৭-২৩ সালে ঢাকার উত্তরা থেকে কমলাপুর ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হচ্ছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

ভারতের বেঙ্গালুরুতে মেট্রোরেল (দ্বিতীয় পর্যায়) নির্মাণ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৪ সালে। ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেলের ১৩ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার পথ মাটির নিচে (আন্ডারগ্রাউন্ড)। এর ৬১টি স্টেশনের মধ্যে ১২টি মাটির নিচে। এরপরও মেট্রোরেলটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪৭০ কোটি ডলার। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। মেট্রোরেলটির একটি অংশ ২০১৮ সালে শেষ হয়েছে, বাকি অংশ ২০২৩ সালে শেষ হবে।

এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের মুম্বাই মেট্রোরেল, জয়পুর, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, আহমেদাবাদ ও নাগপুর মেট্রো, ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে লাইন-২, পাকিস্তানের লাহোর অরেঞ্জ মেট্রোরেল, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার নর্থ-সাউথ মেট্রোরেল পথ নির্মাণ ব্যয়ের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয় সবচেয়ে বেশি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকার মেট্রোরেলের যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটিও অস্বাভাবিক, যা পার্শ্ববর্তী দেশের মেট্রোরেলের ভাড়ার চেয়ে দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি। বিএনপির দাবি, মেট্রোরেল আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে মেট্রোরেলের ভাড়া সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও লাহোরের ভাড়ার দ্বিগুণ এবং কলকাতার চেয়ে তিন গুণ বেশি। আর ঢাকার মেট্রোর ২০ কিলোমিটারের ভাড়া কলকাতার চার গুণ, নয়াদিল্লি, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের তিন গুণ এবং লাহোরের পাঁচ গুণ বেশি।

খালেদা জিয়ার সময় মেট্রোরেল নির্মাণ প্রস্তাব
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করে ২০০৫ সালে খালেদা জিয়ার সরকার। ওই সময় সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ঢাকায় স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) তৈরি করে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্টাডি রিপোর্টে প্রথমবারের মতো এমআরটি করার প্রস্তাব করা হয়। এরপর জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এই কাজে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং ২০০৮ সালে তারা এই প্রকল্পে যুক্ত হয়।

২০০৫ সালে এসটিপি প্রণয়ন, অনুমোদিত হয়েছিল এবং শহরের পরিবহন নেটওয়ার্কের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনায় তিনটি এমআরটি/বিআরটি লাইন নির্মাণের কাজ ২০১০ সালের আগেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে এমআরটি লাইন-৬ এবং বিআরটি লাইন ছাড়া অন্যান্য প্রকল্পগুলো পরে যুক্ত হয়। ওই সময়ে এমআরটি লাইন ৬-কে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত করে ২০১০-১১ অর্থবছরে সমীক্ষা জরিপ চালানো হয়। মূলত ২০০৫ সাল থেকে মেট্রোরেল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় এবং জাপানের গভীর আন্তরিকতায় দীর্ঘ ১৮ বছর পর যা সফলতার মুখ দেখেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।

Leave a Comment