১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মানুষের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের খবর এবং পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের খবর যেই মানুষটির কলমে ফুটে উঠেছিল এবং জেনেছিল সারা বিশ্ব সেই একাত্তরের বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং আর বেঁচে নেই। ভিনদেশী হয়েও এ দেশের জন্য এ দেশের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে সায়মন ড্রিং তার কলম দিয়ে চালিয়ে গিয়েছিলেন অসামান্য এক লড়াই।
শুক্রবার (১৬ জুলাই) রোমানিয়ার একটি হাসপাতালে অন্ত্রে অস্ত্রোপচারের সময় তার মৃত্যু হয়। তিনি রোমানিয়ার একটি নিভৃত পল্লীতে বাস করতেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৬ বছর। মঙ্গলবার (২০ জুলাই) সায়মন ড্রিংয়ের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক তুষার আব্দুল্লাহ। তিনি তার ফেসবুক পেজের একটি পোস্টের মাধ্যমে এ খর দেন। মৃত্যুকালে সায়মন ড্রিং স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পাকিস্তানি বাহিনীর এদেশের মানুষের উপর যে গণহত্যা চালায় সেই খবর একমাত্র সাংবাদিক হিসেবে সায়মন ড্রিং -ই সর্বপ্রথম বিশ্বগণমাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। তিনি সামরিক আইন না মেনে হোটেলে ৩২ ঘন্টা লুকিয়ে থাকেন হোটেলের লবি, ছাদ, বার, কিচেনের মত জায়গায়৷ পরে তিনি ঘুরে ঘুরে প্রত্যক্ষ করেন গণহত্যার বাস্তব চিত্র এবং তা তুলে ধরেন তার লিখায়।
হাজারো বাধা বিপত্তি, এমনকি প্রাণ নাশের হুমকি এসব পেরিয়ে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম খবর প্রকাশ করেন ৩০ মার্চ ১৯৭১, ডেইলি টেলিগ্রাফে। তার লিখা দিশেই সারা বিশ্ব জানতে পারে এদেশের নিরীহ মানুষের উপর চলা সেই বর্বর নিষ্ঠুরতার কথা ৷ ২০১২ সালে সোনারগাঁও হোটেলে স্মৃতি ৭১ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানে সেই গল্প শুনিয়েছিলেন সায়মন ড্রিং।একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় এই ব্রিটিশ সাংবাদিককে ২০১২ সালে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননায় ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।
সায়মন ড্রিং জীবদ্দশায় রয়টার্স, টেলিগ্রাফ ও বিবিসির হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছে বৈদেশিক সংবাদদাতা, টেলিভিশন উপস্থাপক এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে। চলতি শতকের গোড়ায় বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন স্টেশন একুশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরুর সময় সাইমন ড্রিংয়ের ভূমিকা ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। তার হাত ধরেই মূলত এ দেশে টেলিভিশন সাংবাদিকতা পায় নতুন মাত্রা ।