আপনি ভার্সিটি পড়ুয়া হলে আপনার জন্য সরকারের ব্যয়

বাংলাদেশের প্রতিটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি ভর্তুকি দিয়ে চলে। সরকারের শিক্ষা বাজেটের বড় অংশ খরচ হয় এতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিজন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের বাৎসরিক গড় খরচ প্রায় ২ লাখ টাকা। ১০ টাকায় চা-চপ-সিঙ্গারা-চমুচা এমনিতেই পাওয়া যায় না। ভর্তুকির কারণেই এসব সম্ভব। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা মেডিকেল, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গড় ব্যয় পরিমাণে আরও অনেক বেশি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতি বার্ষিক ব্যয় প্রায় ৪ টাকা। বুয়েটের শিক্ষার্থী প্রতি সরকারের মাথা পিছু ব্যয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প খরচে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা শেষ করতে পারে। যেটা প্রাইভেট কোন ইউনিভার্সিটিতে শেষ করতে গেলে কয়েকগুণ বেশি খরচ লাগে। পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ঘাটতি যেটা থাকে, সেটা সরকার জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বহন করে থাকে। দিনশেষে পাবলিক ভার্সিটির লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী কিন্তু জনগণের টাকাতেই পড়াশোনা করছে। কারণ সরকারের শিক্ষা-বাজাটের টাকা জনগণ থেকে আদায়কৃত ভ্যাট-ট্যাক্সের মাধ্যমে আসে। আবার কওমি মাদরাসাগুলোর মধ্যে যেগুলো পাবলিক মাদরাসা সেগুলোও চলে ভর্তুকি দিয়ে। ছাত্রদের খরচ হয় সামান্যই। বাকি টাকা জনগণের দান থেকে আহরিত হয়। এই দানে জোরজবরদস্তি মানুষের থেকে আদায় করা কিছু থাকে না, যেমনটা ভ্যাট-ট্যাক্সে থাকে। এতে থাকে নিরেট দান।

উপরের চিত্র থেকে বুঝলাম, পাবলিকের টাকায় যে শুধু হুজুররাই পড়াশুনা করে/বেতন পায় এমন কিন্তু না; বরং কলেজ-ভার্সিটিগুলোর ক্ষেত্রেও সেম। মাদরাসার একজন শিক্ষক যেমন যে বেতন পান, সেটা ছাত্রদের থেকে গৃহীত খরচে বহন করা কখনোই সম্ভব না (যদিও তুলনায় সেই বেতন অতি অল্প) তেমনি ভার্সিটির একজন টিচার যে পরিমাণ বেতন পান, সেটাও সেখানকার সব অন্যান্য খরচ সামলে শিক্ষার্থীতের থেকে গ্রহণ করা টাকা দিয়ে পরিশোধ করা অসম্ভব। চিত্র সমান হবার পরেও অনেকে খোটা মারে, মাদরাসাগুলো চলে আমাদের টাকায়। তো ভাই, কলেজ-ভার্সিটিগুলো চলে কার টাকায়? পার্থক্য শুধু এতটুকু, মাদরাসায় দানটা আসে সরাসরি, আর কলেজ-ভার্সিটিতে যায় সরকারের মাধ্যম হয়ে। একটাতে থাকে গণমানুষের শতভাগ স্বতঃস্ফুর্ততা, অন্যটাতে থাকে ইচ্ছা-অনিচ্ছা আর জোর-জুলুমের মিশ্রণ। সেখানে মাদরাসা পড়ুয়াদের থেকে গৃহীত ট্যাক্সেরও ভাগ থাকে।

কলেজ-ইউনিভার্সিটির সবাই যে এমন জনগণের টাকায় পড়ে, সেরকমও কিন্তু না। প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোতে শিক্ষার্থীদের টাকাতেই সেগুলো চলে। সরকারের কোন বাজেট থাকে না সেগুলোতে। ঠিক সেরকম প্রাইভেট মাদরাসাও প্রচুর। যেগুলোতে জনগণের দান থাকে না। ওগুলোতে খরচও বেশি। তাই আলেম হলেই ফ্রি পড়ে বড় হয়েছে কিংবা পাবলিকের দানের টাকায় তাদের বেতন হয় এমন চিন্তা যারা করে, তাদের চিন্তার সংশোধনও জরুরি।

দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখতে যা যা করা দরকার সেটা করা সাধারণ জনগণের ধর্মীয় দায়িত্ব। থানবী রাহ. তার কিতাবে বিষয়টা নিয়ে লম্বা ও সুন্দর আলোচনা করেছেন। যার সারকথা হলো, ইলমে দ্বীনের চর্চা চালু থাকা জরুরি, দ্বীন টিকে থাকার জন্য। সকল মুসলিমের জন্য যেহুতু ইলমে দ্বীন চর্চাকে মূল ব্যস্ততা বানানো সম্ভব নয়, তাই যারা একে মূল ব্যস্ততা বানাচ্ছে এবং একারণে জাগতিক ব্যবসা-বানিজ্যে পুরোপুরি নিয়োজিত হতে পারছে না, তাদের অর্থনৈতিক দিকের প্রতি লক্ষ্য রাখা অন্যদের দায়িত্ব। এখন নিজ দায়িত্ব পালন করাকে যদি কেউ ইহসান মনে করে, তাহলে এটা তার গলত চিন্তা।

মূলত সমাজে আলেম/ননআলেম একে অপরের পরিপূরক। কারও প্রতিই কারও অবদান কম নয়। উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই দ্বীনের অগ্রগতি। উভয়ে অনেকটা সাইকেলের দুই চাকার মতো।

 

-শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *