“অসঙ্গতি” পর্ব-২


-আপনি এখনও খান নি?
-নাহ্! আজ আপনার পছন্দের সর্ষে ইলিশ, মুড়িঘণ্ট, গরুর মাংসের ভূনা, ডিম আর টমেটোর ঝোল আর আলুভর্তা করেছি। আপনি আসলেই একসাথে খাব ভেবে বসে আছি।
-কিন্তু!
ওর কপালে চিন্তার ভাঁজ খেয়াল করলাম। উৎকণ্ঠা হয়ে উঠেছে সে। বেশ অস্থিরতার সাথেই বললো,
-কিন্তু কী?

আমি কী সত্যি কথাটা বলে ফেলবো? খুব বেশি নির্দয় শোনাবে না কথাটা? এত কষ্ট করে আমার পছন্দের সব খাবার যে মেয়ে রান্না করেছে। অপেক্ষায় ছিল ৪ ঘন্টার মতো! কোনো অভিযোগ পেশ করেনি। সে মেয়েটাকে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে? নিশ্চয়ই কথাটা শোনার পর তারও খাবারের রুচি উঠে যাবে। না খেয়েই শুয়ে পড়বে। আর ঘুমটাও ভাল হবে না।

নিজের সাথে হিসাব কষে দেখলাম ঐ কথাটা বললে খুব বেশি স্বার্থপরতা হয়ে যাবে। পকেট থেকে ডায়মন্ডের একটা রিং বের করে ওর সামনে মেলে ধরলাম। ধরে বললাম,
-কিন্তু এটা না দিয়ে খেতে চাচ্ছিলাম না।

নিঝুম খুব বেশি সারপ্রাইজড হয়েছে। একরাশ বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এতোটা আশা করে নি হয়তো। এবার মেয়েটার চোখে যে অশ্রু আমি দেখলাম সেটা আনন্দের। আমি আর ওর দিকে তাকালাম না। আমি জানি, ওর দিকে এখন তাকালে আমি ওর মায়ায় পড়ে যাব। আবেগী হয়ে উঠবো। যেটা এই মুহূর্তে আমি চাচ্ছি না।

আমি ভাবছি, ভরাপেটে এত খাবার হজম করবো কীভাবে? বলতেও তো পারবো না আবার এত খাবার পেটে চালানও দিতে পারবো না। জোর করে খেতে হবে। খাওয়া শেষে গ্যাস্ট্রিক আর বদহজমের ২টা মেডিসিন নিতে হবে। কী আর করার, এছাড়া তো উপায়ও নেই!

নিঝুম কিছুটা সংশয় মেশানো কন্ঠে আস্তে আস্তে বললো,
-এটা কী সত্যিই আমার জন্য?
-নাহ্! মিথ্যে আপনার জন্য।
(আসলেই মিথ্যে। এটা আমি কিনেছিলাম নুসাইবার জন্য, নিঝুম তা জানে না।)

আমার কথায় সে খানিকটা লজ্জা পেল বোধ হয়! লজ্জা মিশ্রিত চেহারায় তার রুপের মাধুর্য মুগ্ধতা বাড়িয়ে দিচ্ছে! মায়াবী লাগছে এখন এই মেয়েটাকে। সে বললো,

-ঠিক আছে দিন। আপনি তো এখনও ফ্রেস হোন নি। ফ্রেস হয়ে আসুন। আমি না হয় আর কিছুক্ষণ ওয়েট করি?

এই মেয়ে বলে কী? আরও নাকি ওয়েট করবে! তাকে আর কষ্ট দিতে মন চাইলো না। বললাম,
-নাহ্! আজ ফ্রেস না হয়েই খাবো। আমার পছন্দের সব তরকারী দেখে জিভে জল এসে যাচ্ছে। (এদিকে আমার পেট বলছে, “না বাবা আর খাস না। আমি সইতে পারবো না।”)

ভুবন ভোলানো হাসি হেসে নিঝুম আমাকে বললো,
-আচ্ছা ঠিক আছে। তবে বেসিনে গিয়ে দয়া করে হাত দু’টো হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আর চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিন। সতেজ লাগবে।

বাধ্য ছেলের মতো তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলাম।
[চলবে]
Writer: Mahazabin Sharmin Priya

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *