সীমান্তবর্তী জেলা কুষ্টিয়ায় মঙ্গলবার সকাল ৮টা হতে বুধবার সাকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তিনজন উপসর্গসহ ১৬ জনের মৃত্যু এবং একই সময়ে ৮০১ নমুনা পরীক্ষায় ২৩৪ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
অধিক সংক্রমণেই মৃত্যু বাড়ছে বলে জানান কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলামের।
জেলার ছয় উজেলায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য মতে, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যার সঙ্গে অন্তত আরো ৪০ শতাংশ উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এগুলি সবই তালিকার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
কুমারখালী উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আকুল উদ্দিন বলেন, তালিকাবহির্ভূত অসংখ্য রোগী করোনা উপসর্গ নিয়ে অধিকাংশ বাড়িতেই মারা যাচ্ছে। যে দু-একজন হাসপাতালে আসছেন তাদের পরীক্ষা করলে পজিটিভ মিলছে। অর্থাৎ সময়মতো পরীক্ষা না করা বা হাসপাতালে না আসার কারণে গ্রামীণ এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদ আনসারী বিপ্লব বলেন, করোনাক্রান্ত হলেই তার বাড়ি লাল কাপড় দিয়ে লকডাউন, আশপাশের লোকজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, অন্যরা বাঁকা নজরে দেখা ইত্যাদি নানা কারণে আক্রান্তরা মুখ খুলছেন না। অবাধে চলাফেরা করছেন। তাদের মাধ্যমে সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি কেউ মারা গেলে তার মৃত্যুর কারণ জানাচ্ছেন না স্বজনরা।
কোভিড ডেডিকেটেড ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মোমেন জানান, মৃত্যু হওয়া সবগুলি রোগীই গ্রামাঞ্চল থেকে আসছেন এবং তাদের অক্সিজেন লেভেল এতই নিম্ন পাচ্ছি যে, হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকরা সবরকম চিকিৎসা দেওয়ার পরও তাদের রক্ষা করা যাচ্ছে না। গ্রামীণ মানুষের অসচেতনতাই হলো এর প্রধান কারণ। এতেই মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে।
করোনাক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্বরত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সালেক মাসুদ মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, যেসব রোগী বাড়িতে থেকে সময়মতো হাসপাতালে আসছেন না এবং অক্সিজেন লেভেল এত নিচে নেমে আসছে যে, হাসপাতালে আসার পর হাইফ্লো নজেল অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়েও আর রিকভারি করা যাচ্ছে না। বর্তমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন শতাধিক রোগীর মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ রোগীর অক্সিজেন লেভেল খুব নাজুক অবস্থায় আছে। যাদের অক্সিজেন লেভেল ৫০ থেকে ৮০’র নিচে আছে।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) জেলায় ৮০১টি নমুনা পরিক্ষায় ২৩৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার প্রায় সাড়ে ৩০ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে ১৩ চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরো তিনজনের। এর মধ্য দিয়ে জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৯১।
সূত্র জানায়, গত ১০ দিনে স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত মৃত্যুর সংখ্যার সঙ্গে ৪০ শতাংশ উপসর্গ নিয়ে মৃতদের যুক্ত করলে আরো ৫০ জনকে তালিকায় যোগ করতে হবে। তখন সব মিলিয়ে ১০ দিনে মোট মৃত্যুর সংখ্যা হবে ১৭০।