অটিজম শিশুর বানানো গলার মালায় অনুপ্রেরণা খুঁজেন মা

প্রফেসর ডা.বাসনা মুহুরী, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন অটিজম শিশুদের সুরক্ষা এবং সচেতনতা বিষয়ক সংগঠনের সঙ্গে। নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের সভাপতি তিনি।

বর্তমানে মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন। এই নারীর ৩৩ বছর বয়সী ছেলেও আছে, তিনি অটিজমে আক্রান্ত। তার নাম অর্ণব, জন্মগতভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই যুবক সব কাজ ঠিকঠাক করতে না পারলেও তার সুনিপুণ হাতে তৈরি গলার মালা পরে নিয়মিত কর্মস্থলসহ বিভিন্ন জায়গায় যান প্রফেসর ডা. বাসনা মুহুরী।

শুক্রবার (১ এপ্রিল) বিকেলে নগরের জামালখানে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় প্রফেসর ডা.বাসনা মুহুরীর। তিনি বলেন, আমার ছেলের ছোট বেলা থেকে অটিজম শনাক্ত হয়। কিন্তু আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থা এমন যে আমার ছেলের মতো বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের আসলে সমাজের অংশ ভাবা হয় না। ফলে সমাজ থেকে দূরে থাক নিজের পরিবার থেকেও তারা একটু সমাদর পায় না। তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাগুলো আমরা বের করে আনতে পারি না। আমার ছেলের অটিজমের লক্ষণ ধরার পর থেকে আমি তার যত্ন নেওয়া শুরু করি, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে  তাদের অভ্যাসেও পরিবর্তন আসে, তাই বিশেষ যত্ন নিতে হয়। এখন আমার ছেলে পুরোপুরি ঠিক না হলেও অনেক কিছুই বুঝতে পারে।  ‘আমার গলার এই মালা আমার ছেলের হাতে বানানো। যেটা পরে আমি সাহস পাই, আমিও বলতে পারি এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সন্তানরাও চাইলে পারে।  

কথা বলতে বলতে কয়েকদিন আগের একটি ঘটনা বলতে গিয়ে চোখ ভিজে আসে ডা. বাসনা মুহুরীর। মৃদুকণ্ঠে বলা শুরু করেন, ‘বিকেলে ছেলেকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছিলাম ঠিক সে সময় একটি মেয়ের চুল খোলা ছিল, চুলের সুগন্ধি নিচ্ছিল। সেই সময় আমি যদি দ্রুত গিয়ে ছেলের সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম না হতাম। ছেলেকে সবাই মিলে মারধর করতেন। সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনা ঢাকার একটি হয়েছে।

শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা.বাসনা মুহুরী বলেন, আমি চিকিৎসা পেশায় গাইনিতে প্রাকটিস শুরু করেছিলাম। আমার ছেলে মধ্যে অটিজম শনাক্ত হওয়ার পরে ১৯৯৭ সালে শিশু স্বাস্থ্য প্রাকটিস শুরু করেছিলাম। সেই ১৯৯৭ সাল থেকে ব্যক্তিগত চেম্বারে অটিজম শিশুদের চিকিৎসার ফি নেওয়া হতোনা। তাদের কোনো সিরিয়ালও লাগত না। কিন্তু ফ্রি চিকিৎসা হওয়াতে গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন রকমের চিকিৎসা করানো হতো অটিজম শিশুদের। পরে কয়েক বছর অপচিকিৎসা করার পরে আবার আমার কাছে আসতেন। সেজন্য গত  ২০২০ সাল থেকে অর্ধেক ফি নিয়ে থাকি। সেটা আলাদাভাবে চেম্বারে রাখা হয়, সেটা নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অটিজম শিশুদের জন্য চেম্বারে কোনো ধরনের সিরিয়াল বর্তমানেও লাগে না।  

তিনি আরও বলেন, সমাজে যাতে অটিজম শিশুরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে, ওরাও আমার আপনার মতো এদেশের নাগরিক। ওদের আচরণগুলো ওরা ইচ্ছা করে করে না, এটা তাদের অটিজম বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ। স্পর্শ, গন্ধ, স্বাদ ইত্যাদি এরা নানা ভাবে প্রকাশ করে সেনসর সমস্যার জন্য। এদের বোঝার জানার চেষ্টা করুন, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। কাউকে পেছনে ফেলে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সদাশয় প্রতিবন্ধী বান্ধব সরকার প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে যেমন আইন করেছে তেমন বিভিন্ন কর্মসূচিও চলমান রয়েছে।  

নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ বাংলানিউজকে বলেন, প্রফেসর ডা. বাসনা মুহুরী অটিজম শিশুদের চেম্বারে অর্ধেক ফি নেওয়ার টাকা প্রতি মাসে রশিদ মূলে নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনে দিয়ে থাকেন।  

Leave a Comment