চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ছাত্রলীগকে ‘ডোমিনেট’ করে রাখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের সঙ্গে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সংঘাত নিয়ে নগর ছাত্রলীগের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে এমন মন্তব্য ওঠে আসে।
চট্টগ্রামের বিশেষ রাজনৈতিক ধরনেরই কারণেই ছাত্রলীগে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের আধিপত্য বিস্তারের প্রথা চলে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু।
বহিরাগতদের সাথে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় নগরের আলোচিত কিশোরগ্যাং লিডার নুর মোস্তফা টিনুকে আসামি করা হয়। এই ঘটনায় পাল্টা অন্য একটি মামলায় আসামি করা হয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসানকেও। সংঘর্ষে আহত হন কলেজ পড়ুয়া ৭ শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম কলেজে বিবাদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদুল করিম ও তার অনুসারীরা নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এখন তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে আছেন।
কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ চকবাজারের যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া নূর মোস্তফা টিনুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। টিনু ছিলেন সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী। তবে সবুজকে বর্তমানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কর্মী বলে প্রচার করতে দেখা যায়।
ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে মামলা ও হামলার বিষয়ে মহানগর ছাত্রলীগের পদক্ষেপ কী— এমন প্রশ্নে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমু বলেন, ‘বন্ধ ক্যাম্পাসে মারামারি হয়েছে, সেটি কলেজ প্রশাসনের ব্যাপার। তারা ব্যবস্থা নেবে।’
Din Mohammed Convention Hall
পরে খানিকটা থেমে উপহাসের সুরে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কী আর ব্যবস্থা নেবো? আস্তে-ধীরে পর্যালোচনা করছি। কখনও মনে হলে ব্যবস্থা নেবো।’
স্থানীয় বহিরাগত ও যুবলীগ নামধারীদের জন্য কলেজের সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে— চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইমু বলেন, ‘চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ধরনটাই এমন যে এখানে ছাত্রলীগকে অন্য নেতারা ডোমিনেট করে রাখতে চায়। কেননা চট্টগ্রামের বেশিরভাগ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন সাবেক ছাত্রনেতারা।’
অনেকটা ইমুর সুরে সুর মিলিয়ে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজের ঘটনাটি এখন তদন্তাধীন বিষয়। তাই আমি কিছু বলবো না। তবে এই সংঘর্ষটি যদি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিষয় হয় তবে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। আর যদি বহিরাগতদের সাথে হয় তাহলে এটি আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।’
এদিকে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই সংঘর্ষের ঘটনাটি তদন্ত করছেন বলে জানালেও তদন্তের বিষয়ে কিছুই জানেন না নগর ছাত্রলীগের অন্য নেতারা। নগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কোনো কোনো নেতা জানান, ইমু-দস্তগীরের লোকদেখানো তদন্তের আশ্বাস মূলত কথার কথা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর ছাত্রলীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইমু-দস্তগীর কী তদন্ত করছে সেটা ওরাই জানে। ওরা তো আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় যেহেতু কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, নগর ছাত্রলীগের দরকার অবশ্যই তার (মাহমুদুল করিম) পাশে দাঁড়ানো।’
এসব বিষয়ে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ বজায় রাখতে হলে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ক্যাম্পাস শুধুমাত্র ছাত্রদের। বহিরাগত কেউ এসে যদি ক্যাম্পাসে দাদাগিরি করতে চায় তবে তো ছাত্রদের সাথে ঝামেলা হবেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ঝামেলাগুলোর উত্তাপ সারা নগরে ছড়িয়ে পড়ছে। এই হামলায় আহত ছেলেটা নিহতও হতে পারতে। যদি নিহত হতো তবে এর দায়ভার কে নিতো?’
নগর ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘নগর ছাত্রলীগের উচিত সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের ঐক্যবদ্ধ করে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং ক্যাম্পাসের পরিবেশ ঠিক রাখতে প্রশাসনের কাছ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা নেওয়া। নগর ছাত্রলীগ যদি প্রশাসন থেকে বহিরাগতের প্রবেশাধিকার বন্ধে এই নিশ্চয়তা নিতে পারে তবে চট্টগ্রাম কলেজে সংঘর্ষ অর্ধেক কমে যাবে।’
এর আগে কলেজে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের প্রবেশের বিষয়ে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মজিবুল হক চোধুরী বলেন, ‘বহিরাগতদের বিষয়ে আমরা কলেজ প্রশাসন খুব তৎপর। এখন ক্যাম্পাস বন্ধ, তাই কেউ কলেজে ঢুকতে পারবে না। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য আমি এক সহকারী পুলিশ সুপারকেও অনুরোধ করেছি।’
গত বুধবার (১৬ জুন) কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রদের ওপর হামলা করে বহিরাগতরা। এতে দেশীয় অস্ত্রসহ দুজনকে আটক করে পুলিশ। আর এ ঘটনায় সাতজন শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর সভাপতির পক্ষে আব্দুল্লাহ আল সাইমুন নামে এক কর্মী চকবাজার থানায় টিনুকে প্রধান করে ১২ জনের নামে একটি মামলা করেন। অন্যদিকে এর পরদিন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমকে প্রধান আসামি করে আরও ১২ জনের নামে পাল্টা মামলা করে টিনুর সমর্থকরা।