দুই শতক জায়গার উপর নির্মিত দুইটি শোবার ঘর, রান্নাঘর ও বাথরুম। ইটের দেয়াল, উপরে টিনের চাল। রয়েছে একটি বারান্দাও। ছাতকে এরকম তৈরি করা হয়েছে ১৫০টি দৃষ্টিনন্দন ঘর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ছাতক উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত ঘরগুলো রয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ভোধনের অপেক্ষায়।
আগামী (২০ জুন) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব ঘর উদ্ভোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ইতোমধ্যেই ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়নে নির্মিত ঘরগুলো পরিচিতি পেয়েছে ‘শেখ হাসিনার গ্রাম’ নামে।
ছাতক পৌর শহর থেকে নদী পার হয়ে অটোরিকশা করে নোয়ারাই বাজার থেকে মুল্লাপাড়া বাজারে পৌঁছে জিজ্ঞেস করলেই স্থানীয় লোকজন দেখিয়ে দেয় ‘ওই দেখা যায় শেখ হাসিনার গ্রাম’।
সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আবাসন সুবিধার আওতায় আনার জন্য ছাতক উপজেলায় নির্মিত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘরগুলোর সুবিধাভোগীদের মধ্যে এনিয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। যে জীবনের লক্ষ্য ছিলো কেবল-ই বেঁচে থাকা, শেখ হাসিনার গ্রামে সে জীবন আজ দালান-কোঠায় সংসার সাজায়।
বতু মিয়া নামের এক বয়োবৃদ্ধ জানান, অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে থাকতেন স্ত্রীকে নিয়ে। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ডুকতো, ছিলো ঝড়বাদলের ঝাপটা। চরম অনিশ্চয়তার জীবনে কোনোমতে বেঁচে থাকাটাই ছিলো কষ্টের। সেখানে নিজের পাকাঘর তার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে।
উপকারভোগী জাহেদা বেগম জানান, একদিন এলাকায় মাইকের শব্দ কানে এলো। বলা হচ্ছিল, যাদের জমি নাই, ঘরও নাই তাদের ঘর দেওয়া হবে। তাদের নির্ধারিত দিনে উপজেলা ভূমি অফিসে নামের তালিকা জমা দিতে বলা হয়। আমি এই সংবাদ পেয়ে আমার নাম জমা দেই। এরপর আমাকে জানানো হয় আমি ঘর পেয়েছি। আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। আমরা ভীষণ খুশি। শেখ হাসিনা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ছাতকের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপশ শীল জানান, গৃহহীনরা শুধু ঘর নয়, সঙ্গে পাচ্ছেন ভূমির মালিকানাও। প্রত্যেককে তার জমি ও ঘরের দলিল নিবন্ধন ও নামজারিও করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এটা একটা যুগান্তকারী কর্মসূচি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মামুনুর রহমান জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তাঁর উদ্যোগে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। একসঙ্গে এত ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দেওয়ার বিশ্বে ঘটনা বিরল।
অন্যের বাড়িতে ও রাস্তার পাশে ঝুঁপড়ি ঘরে, স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা, দিনমজুর, ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রধিকার দেওয়া হয়েছে। পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর সদস্যদের আয় সংস্থানমূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি, দক্ষতা অর্জন এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক জানান, এ উদ্যোগটি বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বিশ্বের ইতিহাসে নতুন সংযোজন। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে এরচেয়ে বড় অর্জন আর নেই।