সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ থেকে শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা শিশুদের শিক্ষা, নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আমাদের সরকার জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম-বিষয়ক আইএলও কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে। আমরা শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে ‘জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০’ প্রণয়ন করেছি।’
শনিবার (১২ জুন) বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের পাশাপাশি শিশুশ্রম প্রতিরোধ ও শিশুদের কল্যাণে বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সিভিল সোসাইটি ও গণমাধ্যম, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য আমি আহ্বান জানাই।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষের আহ্বান, শিশুশ্রমের অবসান’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ১২ জুন যথাযথভাবে ‘বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা শিশুদের শিক্ষা, নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে সব ধরনের শিশুশ্রম থেকে মুক্ত করতে হবে। এসডিজিকে সামনে রেখে ২০২৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় কর্মপরিকল্পনার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘জাতীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদ’ কাজ করছে।
সরকারপ্রধান বলেন, গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শিশুশ্রম নিরসনে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট আটটি সেক্টরকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮ ধরনের কাজ চিহ্নিত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকা হালনাগাদ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত শিশুদের প্রত্যাহার করে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন ও প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন ও সুরক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জাতীয় শিশু নীতি-২০১১, শিশু আইন-২০১৩, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিশুদিবস উদযাপন, সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের পুনর্বাসন এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর বিকাশে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার প্রিয় মাতৃভূমিকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের বছরের শুরুতে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দিয়েছে। প্রায় শতভাগ শিশু স্কুলে যাচ্ছে। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে ২০১৩ সালে শিশুশ্রম সমীক্ষায় শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ১.৭ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। শিশুশ্রম নিরসনে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ থেকে শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব।