প্রিয় আরিশা
আশা করি ভালো আছো।জানি ভালো তো থাকবাই।জীবনে কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ ভালো থাকতে পারে না।তবুও তুমি আছো।পড়ার টেবিল এর জীবন্ত কলম আর নিস্তব্ধ খাতা পড়ে থাকতে দেখে লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে।তাই লিখছি যদি কখনো পেয়ে থাকো তোমার ওই সুন্দর জীবনের কিছু গুরুত্ব পূর্ণ সময় নষ্ট করে এই অগোছালো জীবন এর মানুষটাকে রিপ্লাই দিও।
তোমার কি মনে পড়ে সেই তারিখ, যেদিন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। তারিখটি ছিল আজকের তারিখ ই তবে ১৫ বছর আগের ঘটনা।তোমার সেই সন্ধ্যা ঘন পূর্ণিমা রাতের মতো যৌবন এর কথা মনে আছে কিনা সন্দেহ জাগে।আবার তোমায় মনে করিয়ে দিতে চাই সেই জীবনের ছোট ছোট না বলা কথা আর কিছু না বলা মুহূর্ত গুলো।তোমায় মনে করিয়ে দিতে চাই আমার আর তোমার ব্যর্থ ভালবাসার জীবন।
তারিখটি ছিল ০৮-১২-২০১৫ আমার ১৪তম জন্ম বার্ষিকী। তখন আমি যেই স্কুল এ পড়তাম সেই স্কুলের নতুন ছাত্রী ছিলে তুমি।সবাই কে বলার খাতির এ তোমাকেও বলছিলাম জন্মদিনের পার্টি তে আসার জন্য।আসার পর থেকেই তোমার সাথে আমার দ্বন্দ্ব,কথা বলতে ইচ্ছা হতো না তবু ক্লাসের প্রথম ছাত্র হিসেবে আমাকে চিনতে আর আমি চিনতাম নতুন ছাত্রী হিসেবে।আমার অন্য বন্ধু দের সাথে যতটা কথা হত তার বালুকণাও হতো না। বাবা মায়ের একমাত্র পুত্রের জন্মদিনে অনেকেই আমন্ত্রণ করা হয়েছিল।কিন্তু সেদিন রাতে একটা আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান এর পরে শুধু বন্ধুদের জন্য একটি পার্টি ছিল।
পার্টি শেষ হয়েছিল ১০ঃ৩০এর দিকে।আমাদের নিজস্ব গাড়ি করে সবাই কে লিফট দেওয়া হয়েছিল।তার ভিতর তুমিও ছিলে।মনের অজান্তে সেদিন রাতে তোমার সাথে অনেক বার ধাক্কা খেয়েছিলাম।এবং আমি খেয়াল করেছিলাম সবাই উপভোগ করছে আর তুমি বসে বসে কোমলপানীয় পান করছ।সেটা দেখে আমার মনের কোণায় যেন একটা তীর এসে যেভাবে বিঁধে সেভাবে বিঁধেছিল।ভালো লেগেছিল কেন জানি না।সবাই চলে যাবার পর ফ্রেশ হয়ে রুমে গিয়ে দেখি সব উপহার একটা টেবিল এর উপর রাখা। মনের অজান্তেই হাতড়ে হাতড়ে তোমার উপহার টা খুঁজে বের করলাম। One of the best gift that I got from you in that night. আমি জানিনা কেন, তবে পরেরদিন স্কুল এ যাবার পর তোমাকে দেখেই Thanks বললাম।
আর তুমি তোমার নরম গালের মিষ্টি মুখের দৃষ্টি হারানো মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলে।আমি হা করে তাকিয়েই আছি।তারপর ক্লাসশুরুর ঘন্টায় যেন এ জগৎ এ ফিরে আসলাম।তারপর থেকেই যেন আস্তে আস্তে তোমার সব কিছু আমার ভালো লাগতে শুরু করল।দিন দিন আমার পড়া লেখার অবণতি হতে শুরু করল।বাবা মায়ের আশা যেন হতাশায় পরিণত হয়েছিল।মনকে কোনমতে স্থির করতে পারছিলাম না।আচ্ছা একটা ঘটনা মনে পড়ল।একদিন গণিত ক্লাসে তুমি কথা বলার জন্য মার খেয়েছিলে আর কেঁদে দিয়েছিলে।সেটিও সেদিন আমার কাছে ভালো লেগেছি। আসলে কারও যদি ভালো লেগে যায় তবে তার প্রত্যেকটি কাজ ই ভালো লাগতে থাকে, এমনকি একটা খারাপ কাজও।বললাম তো সব কিছু মনের অজান্তেই হয়ে যাচ্ছিল।
তেমনি আমার জীবনের বড় একটা ভুলও আমি আমার মনের অজান্তেই করে ফেলেছিলাম।যা কখনো শুদ্রাতে পারিনি।এমনকি এখনও পারিনি আমি আমার মনের অজান্তেই করে ফেলা বড় একটা ভুল।আমার সেই ভুলটি ছিল তোমাকে আমার করে ভাবতে শুরু করা।আর এই ভুলটির জন্য আমি আজও দায়ী,ব্যাথীত।যা হোক সময় এর পরিক্রমায় যখন ক্লাস ৮ম থেকে ৯ম এ উঠলাম,আমার ৮ম শ্রেণির ফলাফল অতটা ভালো হয়েছিল না যতটা বাবা মা Expect করছিল, তবুও তারা খুশি হয়েছিল।তোমাকে নিয়ে ভাবতে থাকা আরও বাড়ে।ক্লাসটাইম এ সারাক্ষণই তোমার দিকে তাকিয়ে তোমারই রুপ বৈচিত্র্য দেখতাম আর নতুন কিছু উদ্ভব করতাম।তেমনি উদ্ভব করতে করতে আরও বড় কিছু উদ্ভব করে ফেলেছিলাম নিজের অজান্তে।
ক্লাস নাইন এ সাধারণত প্রতি বছর কক্সবাজার ভ্রমণ এ যাই ১১ দিনের জন্য যা আমাদের স্কুল কর্তৃক পরিচালিত হয়।দেখতে দেখতে দিনটি আসল আমরা সকলে মিলে সাথে দুই টা শিক্ষক রওনা দিলাম। বাসে সবাই মজা করছিল,তুমি ও করছিলে,আর আমি শুধু হা করে তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।তারপর সেখানে গিয়ে পৌছানোর পর পঞ্চম দিন আমি তোমাকে একটি Show Piece(That I ever seen in my Life)উপহার দিলাম সাথে একটা নব্য ফোটা লাল রক্তেমাখা এক গুচ্ছ ফুল তার সাথে একটা চিরকুট,তোমার ব্যাগ এর ভিতর রেখে দিলাম,কারণ আমার সাহস ছিল না তোমাকে গিয়ে মুখ ফুটে বলার।তোমার সামনে গেলে আমার জানি কেমন করত,তা একটা আলাদা অনুভূত।
তারপর তুমি যখন এসে সব কিছু দেখলে তখন তোমাকে দেখে মনে হলো আমি তোমার সব আনন্দ মাটি করে দিলাম।মনে হয়, তোমার মনে পড়েছে।দেখি তুমি চুপচাপ হয়ে গেলে কোনো কথা বললে না কারও সাথে।তারপর ফিরে আসার দিন দেখি আমার ব্যাগ এর ভিতর এক টুকরা চিরকুট।যা অামার কাছে আজও সংগৃহীত আছে।কারণ সেটি ত ভোলা যায় না সেই চিরকুট ই আমার জীবনটাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল।তার সাথে ছিল একটি সুন্দর হাতঘড়ি,যা এখনো আমার হাতে।তারপর যেদিন ফিরে আসি সেদিন রওনা দিয়েছিল সন্ধ্যা নাগাদ।বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল।আর সে রাত আমার কাছে আজও রাত মনে হয় না। সবাই ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পরার পর তুমি আমার পাশে এসে বসেছিলে।হঠাৎ কেউ পাশে বসায় ঘুম ভেঙে গিয়েছি। তারপর তোমাকে দেখে তো আমি অবাক।সে রাত সারারাত গল্প করতে করতে আসছিলাম।কত বেদনার আর হাসির গল্প।আজও কান্না আসে সেসব মনে পড়লে।
তারপর যখন স্কুল এর সামনে এসে বাস থামল তখোনো মনে হচ্ছিল আরও পাঁচ-দশ বছর এর পর বছর রাতে বসে গল্প করলেও শেষ হবে না।আমার কক্সবাজার ভ্রমণ ভালো না হলেও তোমার সাথে কাটানো রাতের সুন্দর মূহুর্তগুলে আমাকে আন্দোলিত করেছিল।এভাবে সুন্দরে সমৃদ্ধ হয়ে সময়ের পরিক্রমায় ৯ম ১০ম পার করে কলেজে চলে আসলাম।বাবা মা বিশ্বাস করে এবং ভালো পড়া লেখার আশায় আমাকে বাসা থেকে বাইরে মানে ঢাকাই একটা বন্ধুর সাথে বাসা ভাড়া করে থাকতাম।আর তুমি ছাত্রী বাসে ছিলে।বাবা-মা প্রায় প্রতিসপ্তাহে আমাকে দেখতে আসত।আমার পড়া লেখা যেমন ভালো চলছিল তেমনি তোমার সাথে আমার কাটানো দিনগুলোও ভালো চলছিল।তুমি আমাকে শিখিয়েছিলে,কিভাবে স্বপ্ন বাধতে হয়, কিভাবে স্বপ্ন পূরণ করতে হয়,কিভাবে স্বপ্নের সারথী হয়ে স্বপ্নের রাজপথে হাঠঁতে হয়।আজ আর আমি স্বপ্নও দেখি না আশাও বাধি না।কারণ তুমি নেই,তুমি হারিয়ে গেছো এক অজানা দ্বীপ।
যে দ্বীপ চোরাবালি তে পরিপূর্ণ। তুমি তার ভালবাসার অতল গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছ।আমি বুঝতে পারছি,চেষ্টা করছি তবু পারছি না তোমাকে ফিরিয়ে আনতে।এটি যেন আমার ব্যর্থ চেষ্টা।আজ আমি নির্যাতিত,নিষ্পেষিত,দুঃখিত,ভালবাসার আবেগের ভিখারি।কারণ আজ তুমি নেই।তাই আজ কেউ আর তার নরম হাতের মিষ্টি ছোয়া দিয়ে আমার চুলটাকে ঠিক করে দেয় না।আজ কেউ আর তার মিষ্টি ঠোঁটের ভালবাসার হাসি দিয়ে লাগিয়ে দেয় না লাগানো বাট। আজ কেউ আর তার দুষ্ট মুখে রাগী ভাব নিয়ে ভাজ করে দেয় না আমার শার্ট এর হাতা।কারও চোখে আর পড়ে না, আমার অগোছালো চুল,না লাগানো বাটন,না ভাজ করা হাতা।আজও তেমনি পড়ে আছে আমার রুক্ষ-শুষ্ক চুল,না লাগানো বাটন,না ভাজ করা হাতা।আজ আমি কতটা কষ্টে আছি সেটা যদি তুমি বুঝতে তবে তুমি সেই ভালবাসার চোরাবালি থেকে ফিরতে।আর যদি তুমি আমার চোখের সাথে একবার চোখ রাখতে,তবে তুমি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরতে তোমার সেই নরম হাত আর আলতো বুকের স্পর্শে।তোমার মনে আছে কিনা জানি না,প্রতিদিন আমরা সেই ভালবাসার বিকালে রেললাইন-এর দিগন্ত পথ ধরে হাঠতাম
আর কত স্বপ্ন দেখতাম আর বাবুই পাখির মতো কত আশার বাসা বুনতাম।সেই ভালবাসার বিকাল আর আসে না।সেই রেললাইন আজও আছে।আমি আজও হাঁটি সেই রেললাইনের পথ ধরে,এখনো বাবুই পাখির মতো আশার বাসা বাধতে চেষ্টা কর, তবে সেদিন যে পাশে কাউকে পেতাম,কেউ সাপোর্ট দিতো,ভুল হলে বলত না ওটা অমন না এমন।আজও সেই আশার বাসা বাধতে গিয়ে মনে হয় ভুল হচ্ছে।তবে পাশে থেকে সাপোর্ট পাওয়ার জন্য তাকালে আর তোমাকে দেখি না,দেখি রাস্তার নিষ্পেষিত কুকুরটাকে।তখন মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে বুক ভিজে যায়,যে বুক একদিন ভিজতো তোমার কৃষ্ণ কালো চুলের আলতো স্পর্শ।
তুমি কি জানো আজ পূর্ণিমা রাত,আমি নিজেও জানি না।মনে হয় এই পূর্ণিমা রাত কাটানো এর চেয়ে আমার মারা যাওয়া উত্তম।কারণ আমার মনে পড়বে সেই পূর্ণিমা রাতের কথা।আর আমি সেই পূর্ণিমা রাতের কথা মনে করে নিজেকে কষ্ট দিতে চাই না। তোমার কি মনে আছে সেই সুন্দর সুদীর্ঘ অপ্রকাশিত রাতের কথা।সমস্ত জগৎ সংসার থেকে আমি যে বিচ্ছিন্ন তা নতুন করে উপলব্ধি করলাম।
আজি জোৎস্নার পরশনে
কার কথা পড়ে মনে।
সন্ধ্যাসবিতা পশ্চিমগগণে ডুব দিয়ে অস্তরবির রক্তরাগ ছড়াতে না ছড়াতেই মৌন প্রকৃতির বুক চিরে পূর্ব দিগন্তে উদ্ভাসিত হয়েছিল পূর্ণ চাঁদ।মৌন প্রকৃতির বুকে জেগে উঠেছিল বিচিত্র অনুভূতি।জোছনার অনুরাগে বিহ্বল হয়ে উঠেছিল বসুন্ধরা।শুধু অামার আর তোমার মনে নয়,সেদিন বিশাল ও বিপুল ধরিত্রির সর্বত্রই অব্যক্ত ধ্বনির পুঞ্জ।আমার আর তোমার মনে উঠেছিল অনির্বচনীয় আনন্দের বন্যা। সেই রাতে তোমার সৌন্দর্য আর স্নিগ্ধ সুন্দর রুপ আমার অনাস্বাদিত মনকে ব্যাকুল করে তুলেছিল।তোমার সেই রুপ আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিলাম।সেই রুপ আমার মনে যৌবনের আবির ছড়িয়ে দিয়েছিল,রাঙ্গিয়ে তুলেছিল।
কোনো সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ ভুলতে পারে না এমনি সুন্দর জোছনা রাতকে।তেমনি আমিও পারি নি ভুলতে সেই সমগ্র পৃথিবীকে সাক্ষী রেখে একরাশ জোছনা এর নিচে কাটানো রাতকে।সেই রাতে কাটানো কিছু মুহূর্ত আমাকে যতটা না বেদনা বিধুর করেছিল তার থেকে বেশি বেদনা বিধুর অনুভব করছি এখন,এই স্তব্ধ পৃথিবীর নিস্তব্ধ নির্ঘুম রাতে।আমার মন চাচ্ছে রুমের কৃত্রিম আলো ব্ন্ধ করে সেই জোৎস্নার আলো তে লিখি।কিন্তুু তবু যানি হয় না,উঠতে ইচ্ছা করছে না
তোমার আর আমার কাটানো কিছু মুহূর্তের আবেগে আপ্লুত হয়ে।আমি নিজেও জানিনা কত লিখে ফেলেছি তোমাকে,তবু এখনো শেষ করতে পারি নি সেই দিনগুলের কথা।স্মৃতি গুলো কত বেদনার,কত আবেগের,কত হাস্যকর।আমার নিজের মনে সন্দেহ জাগে যে,এই পৃথিবীর স্রষ্টাকে নিয়ে লিখতে বসলে যেমন শেষ হয় না তেমনি আমার মনেও সেই কল্পনাতীত আশা জন্মে যে তোমাকে নিয়ে লিখলেও এর ইতি আমি খুজে পাব না। জীবনে কিছু কিছু জিনিষ এর গুরুত্ব যে কতটা বেশি তা অনুভব করা যায়…..
যখন সেটা জীবন থেকে হারিয়ে যায়।যা আমি এখন ধিকে ধিকে অনুভব করতে পারছি যে তোমার মূল্য আমার জীবনে কতটা বেশি ছিল।
জানিনা আমি কখনো শেষ করতে পারবো কিনা,তোমার সেই মিষ্টি মুখের কথা আর না ভোলা মুহূর্ত গুলো লিখতে লিখতে।এই নিস্তব্ধ প্রকৃতি তে স্তব্ধ অবাঞ্চিত ভালবাসার আবেগে মর্মাহত আমি আমার আমিকে স্থির রাখতে পারছি না। হাতের আবেগ থেমে গেছে,জীবন্ত কলম এখন মৃত।যদি কখনো পেয়ে থাকো এই নিষ্পেষিত ভালবাসার মানুষ এর কবর টা একবার দেখে যেও।
ইতি,
‘তোমার দুষ্ট ভালবাসার অভাগা প্রেমিক।’
নাইমুর রহমান নিশান