গাজীপুরে লাশ উদ্ধারের ৩৮ দিন পর পুলিশ এক যুবকের মাথা , বাহু ও পা উদ্ধার রহস্য উদঘাটন করেছে। রবিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর পুলিশ জানিয়েছে যে সুমন মোল্লাকে (৩২) স্ত্রী ও তার প্রেমিকের দ্বারা এক যুবককে তার স্ত্রীর সাথে মারধরের প্রতিশোধ নিতে হত্যা করা হয়েছিল। এর পরে দেহটি বিচ্ছিন্ন করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়।
সুমন মোল্লা বাগেরহাট চিতলমারী গোলা বার্নানী এলাকা। জাফর মোল্লার ছেলে। তিনি কাশিমপুরের সরদগঞ্জ এলাকায় স্ত্রীর সাথে থাকতেন। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুমনের স্ত্রী ও প্রেমিককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সুমনের স্ত্রী মোসা। আরিফা (২৩) দিনাজপুরের চিনি বান্দর থানার নারায়ণপুর এলাকার মৃত আশরাফ আলীর মেয়ে। তার প্রেমিক তনয় সরকার (২৫) ফরিদপুরের মধুখালী থানার নারকোনা এলাকার আদিত্য সরকারের ছেলে। তনয় সারদাগঞ্জ এলাকায়ও থাকতেন।
পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে গত ২১ শে এপ্রিল দুপুরে পুলিশ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর থানার সর্দারগঞ্জের হাজী মার্কেট পুকুরপাড় এলাকায় জালাল উদ্দিনের বাড়ির পাশের খোলা ড্রেন থেকে সুমনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করে অজ্ঞাত পরিচয় দেহ হিসাবে গাজীপুর সিটি কবরস্থানে দাফন করে। পরের দিন ২২ এপ্রিল কাশিমপুর থানার এসআই মোজাম্মেল হক অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এই ঘটনার পর শনিবার সকালে নগরীর তেতুবাড়ী এলাকার একটি মোটা কারখানার কাছে একটি আবর্জনা ফেলার কাছ থেকে সুমনের মাথা, দুটি হাত এবং পলিথিনে আবৃত দুটি পা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ তার পরিচয় নিশ্চিত করেছে। এরপরে আরিফা এবং তনয় সরকারকে এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জেলা প্রশাসক জাকির হাসান আজ বিকেলে মহানগর পুলিশ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান যে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন আরিফা ও তনয় হত্যার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তাদের বরাত দিয়ে জাকির হাসান বলেন, আরিফা ও তনয় সরকারের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সুমন তার ছেলে সরকারকে বেশ কয়েকবার মারধর করেছে। তারা এর প্রতিশোধ নিতে সুমনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। ১৯ এপ্রিল, রাত সাড়ে দশটার দিকে আরিফা তার স্বামীকে দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ দেয়। সুমন ঘুমিয়ে পড়লে আরিফা ছেলেকে ডাকল। বালিশ দিয়ে সুমনকে হত্যার পর সে তার মরদেহ বাড়ির ভিতরে রেখে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরের দিন সুমনের মরদেহ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এরপর তিনি হাত ছাড়া লাশটি জড়িয়ে জামাল উদ্দিনের বাড়ির কাছে নদীতে ফেলে দেন। দেহের বাকী অংশ (পাঁচ টুকরো) পলিথিনে জড়িয়ে টিটুইবাড়ী এলাকার মোটা কারখানার পাশের আবর্জনা বাক্সে রেখে দেওয়া হয়েছিল। তাদের মতে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও সটি গত রাতে সারদাগঞ্জের হাজিবাড়ী পুকুরে আবর্জনার স্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ছেলের বাড়ি থেকে সুমনের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের পরে দুজনকে আজ বিকেলে ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজওয়ান আহমেদ, সহকারী কমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার, কাশীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব এ খোদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।