“নীলিমা জানার আগেই তুমি বৃদ্ধাশ্রমে ফিরে যাও। ও যেন কখনোই জানতে না পারে তুমিই আমার মা।”
নিজের ছেলের মুখে এমন কথা শুনে আমি চোখের জল আটকাতে পারলাম না।
সাদিকের বস নীলিমার চাচা। নীলিমার বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর তার নিঃসন্তান চাচা-চাচী তাকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করেছেন। আর সাদিক আমাকে যে বৃদ্ধাশ্রমে রেখেছিল ঐটাও নীলিমাদের। এসব আমি এখানে এসে জানতে পারি।
বৃদ্ধাশ্রমে থাকাবস্থায় নীলিমা আর আমার মাঝে মা-মেয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমাকে ও “মা” বলে ডাকতো। নীলিমার বিয়ে যে আমার সাদিকের সাথে হয়েছে এটা আমি জানতে পারি নীলিমার সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া ছেলেকে দেখতে গিয়ে। ঐ যে দেখতে গেলাম আজ ১বছর পার হচ্ছে নীলিমা আমাকে আর বৃদ্ধাশ্রমে ফিরতে দেয়নি।
.
যাহোক, কান্নাজড়িত কন্ঠে সাদিককে বললাম, “নীলিমাকে বুঝিয়ে আমি আজই চলে যাব, বাবা”।
এই বলে মাথা উঠিয়েই দেখি নীলিমা দরজায় দাঁড়িয়ে। আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা সাদিকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তার চোয়াল শক্ত হয়ে আছে, মুখ বিবর্ণ। প্রচন্ড রাগে তার লালচে ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপছে।
শান্ত কিন্তু দৃঢ় কন্ঠে সাদিককে বললো, “আমি এরকম নিচু মানসিকতার একজন মানুষকে বিয়ে করিছি। এজন্য নিজের প্রতিই ঘেন্না হচ্ছে। অনেক কথা বলতে চাই। কিন্তু তোমার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধছে। আমি মা কে নিয়ে চলে গেলাম। তুমি তোমার মা কে ছেড়ে থাকতে পারলে, তোমার ছেলেও তার মা কে ছাড়া একাই থাকতে পারবে।”
এই বলে নীলিমা আমার হাত টেনে ধরে ঐ বাসা থেকে চলে আসলো। তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমিও আর কিছু বলতে পারলাম না।
লেখা:মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া