[২]
সেদিন তার চোখ পড়েছিল ফুটপাতের উপর শুয়ে থাকা এক পাগল মহিলার উপর। দ্রুতগতিতে রিক্সা চলার দরুন সেদিন ঐ মহিলাকে ভালোমতো লক্ষ করতে পারেনি। আর দশটা পাগলের মতো ভেবে, বাবার সাথে আবারও সে গল্পে মেতেছিল।
কিন্তু ক্লাস শেষ করে কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে সে যখন একা একা হাঁটছিল। তখন সে লক্ষ করলো, সে যেই ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছে সেই ফুটপাতের উপরই পাগল মহিলাটি শুয়ে আছে। কম করে আর পাঁচ পা হাঁটলেই সে পাগল মহিলার কাছে যেতে পারবে।
আয়াত আর সামনে এগিয়ে গেল না। কারণ এই দুনিয়ায় সে দু’টি জিনিস খুব ভয় পায়। একটি হলো ‘হিজড়া’ আর দ্বিতীয়টি হলো এই ‘পাগল’ মানুষ। তাছাড়া কোনো পোকা-মাকড় বা জীব-জন্তুকেও সে পরওয়া করে না।
সে ওখানেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলো। খুব ভালভাবেই অনুধাবন করতে পারলো, এই সামান্য দূরত্বে ঐ পাগলিটিকে খুব ভালোভাবেই পর্যবেক্ষণ করা যায়। মানুষকে পর্যবেক্ষণ করার কৌতূহল সে সামলাতে পারে না। এটা তার কাছে মজার একটি খেলা মনে হয়।
সেদিন কোন ঋতুর দিন ছিল, তা খুব একটা মনে নেই আয়াতের। তবে আকাশ একটু মেঘলা ছিল। যানবাহনের দ্রুততায় হালকা ধূলো উড়ে আবারও ধূলোতেই লুটোপুটি খাচ্ছিল। মহিলাটিকে পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যেই সে তার দিক খুব ভালভাবে তাকালো।
পাগল মহিলাটি দেখতে শ্যামবর্ণের, চুলগুলো জট পাকানো আর ভীষণ নোংরা, পরনে ছাইরঙা ম্যাক্সি, মাঝারি আকৃতির গড়ন। হাত-পায়ের নখ বহুদিন কাটা হয়নি মনে হচ্ছে। বেশ কয়েক ইঞ্চি বড় বড় নখগুলো দেখলে গা শিউরে উঠে। সে লম্বালম্বি ভাবে শুয়ে আছে। মলিন হয়ে যাওয়া মুখে কষ্টের কিছু রেখা দৃশ্যমান। হয়তো কোনো তিক্ত ঘটনার শিকার হয়ে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে।
তার পাশে একটি রুটির টুকরো পড়ে আছে। কা-কা শব্দে কয়েকটি কাক পালাক্রমে সেই রুটিতে ঠোকর বসাচ্ছে। তবুও পাগলিটি নির্বিকার। একটুও নড়ছে না পর্যন্ত। আয়াত এরম অবস্থা দেখে ভেবেছিল, পাগলিটা বুঝি মরেই এভাবে পড়ে আছে।
writer: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া