তবে করোনা অতিমারিতে থমকে গেছে জীবন। সময়ের বয়ে চলা কিন্তু থেমে নেই। আসছে আনা উপলক্ষ এরই মধ্যে ঘুরেফিরে। তেমনি এসেছে রোজা। যা নিয়ে দেশে দেশে দেখা যায় বিশেষ আয়োজন এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইফতার।
তবে রমজান মাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ইফতার। সারা দিন রোজার শেষে ইফতারি নিয়ে বেশ একটু শখ করেই থাকে ছোট–বড় সবাই । আর বাংলাদেশে যেমন ইফতারি নিয়ে নানা জায়গায় বসে বাজার, চলে প্রচুর কেনাবেচা, এমন হরেক রকম ইফতারির রীতি প্রচলিত আছে পৃথিবীজুড়েই। আর করোনা অতিমারিতে থমকে যাওয়া জীবনে চলুন একটু ঘুরে দেখা যাক স্বাভাবিক সুস্থ পৃথিবীতে কেমন ছিল বিভিন্ন সংস্কৃতির ইফতার আয়োজন।
বাংলাদেশ
ইফতারি বিক্রির পুরোনো ঐতিহ্য সবারই জানা বাংলাদেশের চকবাজারের ।ছোলা, পেঁয়াজু, জিলাপিসহ বাহারি ইফতার পণ্যে সাজানো হয় অলিগলি জালি কাবাব, সুতি কাবাব থেকে শুরু করে । তাছাড়া সব জায়গায়ই ছোট পরিসরে ইফতারের পসরা দেখা যায়।
আয়োজন বাড়িতে ইফতারের থাকে নানা রকমের খাবার । প্রতিবেশীদের মধ্যে ইফতারি ভাগ করে দিয়ে খুশি ছড়িয়ে দেওয়া এ ছাড়া বাংলাদেশি ইফতার আয়োজনের সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো পাড়া । তবে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকে মসজিদে ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে ইফতারি বিতরণ করেন।
ভারত
কোনো দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই ভারতও হিন্দুপ্রধান দেশ হলেও ইফতার আয়োজনে। তবে মোগল ঐতিহ্য ও হাজার বছরের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ভারতেও মহাসমারোহে চলে ইফতার আয়োজন। হাজারো মুসল্লি একত্র হয়ে ইফতার করা মসজিদে ইফতারসামগ্রী বিতরণ থেকে শুরু করে, স্থানীয় ইফতার পসরা—সবই দেখা যায় ভারতে। শুরু করেন হালিম দিয়ে হায়দরাবাদের মুসল্লিরা তাঁদের ইফতার।আর এ হালিমের ঐতিহ্য হায়দরাবাদের সীমানা ছাড়িয়ে এখন ছড়িয়ে পড়েছে সব দিকে। ভারতের ঐতিহ্যবাহী ইফতার আয়োজনের অংশ হিসেবে আছে বহু যুগ ধরে এ ছাড়া জিলাপিও ।
পাকিস্তান
ইফতারের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকে একধরনের সমুচা মুসলিমপ্রধান দেশ পাকিস্তানে। তবে কখনো একে ‘সামবুসা’ও বলা হয়। দেশভেদে পরিচিত হয় ভিন্ন নামে মূলত একই আকারের খাবারই । তবে এ ছাড়া নিয়মিত ইফতারি হিসেবে অন্যান্য দেশের মতো খেজুর তো থাকেই পাকিস্তানিদের পাতে। নানা রকম পাফ পেস্ট্রি ধরনের খাবার আরও আছে মাংস ও সবজি রয়েছে ।
ইফতারি বিক্রির ঐতিহ্য বাংলাদেশ ও ভারতের মতোই পাকিস্তানেও আছে । তবে মূলত উপমহাদেশে রাস্তার পাশের খাবারের দোকানের ব্যাপক চাহিদাই এসব ইফতারি বিক্রিকে করেছে জনপ্রিয়।
শ্রীলঙ্কা
সারা দিনের পুষ্টির চাহিদা শ্রীলঙ্কায় রোজার শেষে ইফতার করার ধরন খুবই আলাদা ও সাদামাটা হলেও তাতে নিশ্চিত হয় । আর ইফতার শুরু হয় টাটকা ফল আর ফলের রসে তৈরি সরবেট দিয়ে। খাবার খাওয়ারই রীতি এরপর একে একে হালকা ধরনের। একধরনের রুটি ইফতারের তালিকায় খুবই জনপ্রিয় সাধারণত আদিক রোটি নামে । আর এর সঙ্গে থাকে নারকেল দুধ, মরিচ ও পুদিনার সমন্বয়ে তৈরি তরকারি, প্রতিটি খাবারই পুষ্টিগুণে ভরপুর ও খুবই উপকারী।
ইরান
সর্বাধিক জনপ্রিয় ইরানে ইফতারে মিষ্টি চায়ের সঙ্গে নান । তাছাড়া নানের সঙ্গে সবজি ও ডালের মিশ্রণে তৈরি একধরনের স্যুপ। আর এ ছাড়া বিভিন্ন মাংসের গ্রিল, ফিরনি ও অন্যান্য মিষ্টি খাবার।
জর্ডান
তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার মানসাফ অবশ্যই থাকে জর্ডানের ইফতার আয়োজনে । আর এই খাবার তাদের জাতীয় খাবারও বটে। যাতে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ধরনের খাবার এ ছাড়া দই, ফল ও ফলের জুস, গ্রিলড ল্যাম্ব ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আয়োজন করা হয় বুফে স্টাইল ইফতারি। আর এ ছাড়া প্যানকেকের সঙ্গে মধু, বাদাম ও ফল খাওয়ার প্রচলনও দেখা যায় জর্ডানে।
লেবানন
আর লেবানিজ খাবারে আছে আলাদা ধরনের তেল-ঝালের ব্যবহার। বিশেষত গ্রিল লেবাননে বিশেষভাবে সমাদৃত বিভিন্ন মাংসজাতীয় খাবার। তাছাড়া বিশেষভাবে তৈরি রুটি ও তার সঙ্গে সবজি–মাংসের মিশ্রণে তৈরি সালাদ, লেবানিজ ইফতারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মিশর
চিরাচরিত মিশরীয় সংস্কৃতির আকর্ষণীয় ও রুচিশীল উপায়ে মিশরে ইফতার আয়োজন করা হয়। যা বর্তমানে মহামারির জন্য থমকে আছে যদিও। মিশরের এক পুরোনো ঐতিহ্য হলো রাস্তায় অনেক মুসল্লি একসঙ্গে মিলিত হয়ে ইফতার করা কিন্তু আমরা আশা করি, আগামী রমজানে আবার সরব হয়ে উঠবে মিশরের রাস্তার ইফতার আয়োজন ।আর ইফতারের খাদ্যতালিকায় থাকে ফলের রস। তবে মিশরীয়রা মূলত অ্যাপ্রিকট ফল শুকিয়ে তাকে জুস করে ইফতারে পান করেন।আর এটি যেমন সুস্বাদু, তেমনি দারুণ পুষ্টিকর। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের নান ও রুটি এবং বিনের তরকারি খুবই জনপ্রিয়। তবে মিষ্টি খাবার হিসেবে আরব ধাঁচের ডেজার্টগুলো বেশি সমাদৃত।