একটি ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক অঞ্চল ওয়ালেকিয়া রোমানিয়ার। ওয়ালেকিয়ার ভয়ভড’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এ অঞ্চলের শাসকেরা।তবে একজন তৃতীয় ভ্লাড সেই শাসকদেরা । তৃতীয় ভ্লাড ড্রাকুলা’ নামেও পরিচিত তিনি ‘ভ্লাড দ্য ইমপেলার’ । ১৪৩১ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম তাঁর, রোমানিয়ার ট্র্যানসেলভেনিয়া। ১৪৪৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ক্ষমতায় আসেন। তিনি মোট তিনবার ক্ষমতায় আসেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। নৃশংস ছিলেন শত্রুদের কাছে।তবে এ জন্য পঞ্চদশ শতাব্দীর ইউরোপে ভীষণ কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নামে।
লেখক ব্রাম স্টকার সৃষ্ট ‘ড্রাকুলা’ চরিত্রটি তৃতীয় ভ্লাডের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত অনেক ইতিহাসবিদের মতে। তবে মজার ব্যাপার হলো, ড্রাকুলা অর্থ কিন্তু রক্তচোষা ছিল না । ড্রাকুল’ শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ ড্রাকো থেকে । আর ড্রাকো শব্দের অর্থ ড্রাগন। রোমান সম্রাট সিগিসমন্ড দ্বিতীয় ভ্লাডকে ‘অর্ডার অব দ্য ড্রাগন’ খেতাবে ভূষিত করেন অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বীরত্বের জন্য । তবে সেই দ্বিতীয় ভ্লাড ড্রাকুলের দ্বিতীয় ছেলে এই তৃতীয় ভ্লাড।
আর ১৪৪২ খ্রিষ্টাব্দে একবার একটি কূটনৈতিক সভার নামে অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ দ্বিতীয় ভ্লাডকে নিমন্ত্রণ করেন বলে জানান। আর জ্যেষ্ঠ ভ্লাড দুই ছেলে তৃতীয় ভ্লাড ও রাদুকে সঙ্গে নিয়ে যান বলে জানা যায়। তবে সভার নামে দ্বিতীয় মুরাদ তাদের আটক করেন। বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হয় পরে দুই সন্তানকে রেখে। আর অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার সময় তৃতীয় ভ্লাড বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করেন। তবে এ সময়ই তিনি একজন যোদ্ধা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
বাবা ও বড় ভাই খুন হওয়ার পর তৃতীয় ভ্লাড ও তাঁর ভাই অটোমানদের হাত থেকে মুক্তি পান ওয়ালেকিয়ান বোয়ারদের (সামন্তবাদী শাসক) হাতে । কিন্তু মাত্র তিন মাসের মাথায় ক্ষমতাচ্যুতও হন তৃতীয় ভ্লাড ক্ষমতায় আসেন।সমর্থিত ছোট ভাই এবং ওয়ালেকিয়ান বোয়ারদের সঙ্গে সংগ্রাম করে আবার সিংহাসনে বসতে সক্ষম হন ভ্লাড আট বছর অটোমান সাম্রাজ্য করেন । তবে শাসনামলে নির্মম ও স্বেচ্ছাচারী হিসেবে তাঁর দুর্নাম ছিল।
তবে তৃতীয় ভ্লাডকে নিয়ে নানা গালগপ্পো প্রচলিত আছে।বন্দীদের মাথা কেটে ফেলতেন তিনি নাকি নিজ হাতে । তিনি নাকি শত্রুর রক্তে রুটি ভিজিয়ে খেতেন তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ অভিযোগ। তিনি নৈশভোজের আগে শত্রুর রক্ত দিয়ে হাত ধুয়ে নিতেন আরেক গল্পে বলা হয়েছে । রোমহর্ষ কাহিনি ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তৃতীয় ভ্লাডকে নিয়ে । তবে তিনি যে ক্ষমাহীন ছিলেন, সে বিষয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই। তিনি প্রায় ৮০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন বলা হয়ে থাকে । প্রায় ২০ হাজার মানুষকে এর মধ্যে শূলে চড়িয়েই মেরেছেন।
তবে ১৪৭৪ খ্রিষ্টাব্দে অটোমানদের সঙ্গে যুদ্ধে তৃতীয় ভ্লাড পরাজিত ও নিহত হন। অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের কাছে তাঁর মাথা কেটে পাঠানো হয় কনস্ট্যান্টিনোপলে। ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল মাথাটি শহরের প্রধান ফটকে । তবে তৃতীয় ভ্লাড শত্রুদের শূলে চড়িয়ে মারার জন্য যেমন কুখ্যাত ছিলেন, তেমনি পাশাপাশি অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য লোককথার নায়কও হয়েছে।