বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধোন্দকোলা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক গজন সরকার (৫৮)। পৈত্রিক উত্সগুলিতে তাঁর দুটি বিঘা জমি রয়েছে। চারটি ফসল নিয়ে এই জমি চাষ করে পরিবারের সাত সদস্য ধান পান।
শুধু গাজান সরকারই নয়; বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিএসআইসি) চার শস্য জমি অধিগ্রহণের পরে ওই অঞ্চলে একটি কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্প উদ্যান স্থাপনের জন্য শিল্প মন্ত্রকের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক পৈতৃক জমি হারানোর ভয়ে পথ হারিয়েছেন।
স্থানীয় শিল্পীরা ইতোমধ্যে শিল্প উদ্যানের অধিগ্রহণ আটকাতে একটি ‘কৃষি জমি সংরক্ষণ আন্দোলন কমিটি’ গঠন করেছে। গাজেন সরকার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি প্রাণ দেব, বুকে রক্ত দেব। তবে আমি এই জমি জীবিকার জন্য অর্জন করতে দেব না। ‘
মঙ্গলবার শিবগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার নারী-পুরুষ তাদের পৈতৃক জমি রক্ষার দাবিতে মোকামতলা-জয়পুরহাট আঞ্চলিক সড়কের উথলি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন। কৃষকদের মতে, শিল্প উদ্যানের জন্য প্রস্তাবিত এলাকায় এই জমিতে আলু, মরিচ, কলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি এবং অন্যান্য শাকসবজির চাষ হয়। আদা, হলুদ, ধনিয়া এবং অন্যান্য ফসলের সহযোগী ফসল হিসাবে চাষ করা হয়। তবে বিসিক এই চারটি ফসলি জমিকে একটি ফসল হিসাবে অধিগ্রহণ করার এবং সেখানে একটি কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প উদ্যান স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে।
বিএসআইসি সূত্র জানায়, বিএসআইসি বগুড়ায় এক হাজার ৫০০ বিঘা আয়তনের একটি কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্প উদ্যান স্থাপনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রেরণ করেছে। চলতি বছরের ২ শে মার্চ প্রেরিত প্রকল্প প্রস্তাবনায় শিবগঞ্জ উপজেলার উথলি, নারায়ণপুর, সন্ন্যাসী ধোনদকোলা, চানপুর, খলিমপুর ও হরিরামপুর মৌজায় এক হাজার ৫০০ বিঘা জমিকে এক ফসল হিসাবে উল্লেখ করে একটি শিল্প উদ্যান স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। চারটি ফসলের জমিতে শিল্প উদ্যান স্থাপনের ঘোষণার পরে এলাকার সাতটি গ্রামের কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষকরা প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ফসলের জমিতে শিল্প উদ্যান প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়।
গত মঙ্গলবার সরেজমিন উথলি, সন্ন্যাসী ধন্ডকোলা, নারায়ণপুর, চানপুর, সোলায়মান, গণেশপুর ও হরিরামপুর গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলেছেন। জানা গেছে, কৃষিজমিতে শিল্প উদ্যান স্থাপনের খবরে কৃষকরা দিশেহারা ও ক্ষুব্ধ ছিল।
ধোন্দকোলা গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল খলিফা (৭০) জানান, তাঁর পরিবার আট বিঘা জমি চাষ করে বেঁচে ছিলেন। এখানে যদি কোনও শিল্প উদ্যান হয় তবে তাকে ছয় বিঘা জমি ছাড়তে হবে। সরকার এই জমি নিলে তাকে না খেয়েই মরতে হবে।
ধোন্দকোলা গ্রামের সানন্যাসী স্বপন সরকার (৪০) জানান, তাঁর পরিবার তিন বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে বেঁচে ছিলেন। এখানে যদি কোনও শিল্প উদ্যান হয় তবে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়বেন।
ধোনডাকোলার সন্ন্যাসী সুশান্ত মণ্ডল বলেছিলেন, “আমি আপনাকে জানাব, তবে তোমাকে জমি দেব না।”
আড়াই বিঘা জমি ধোনদকোলা গ্রামের কৃষক শুকুর আলীর। সে জমি অধিগ্রহণের খবরে তিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন।
ধোন্দকোলার কৃষক প্রশান্তচন্দ্র বলেছিলেন, “ঘাম এবং পরিশ্রম করে আমি কয়েক বিঘা জমি কিনেছি।” সেই জমিতে চাষাবাদ করে পরিবারের পাঁচ জন মুখে ভাত দিতে পারতেছি।
কৃষির জামি রক্ষা আন্দোলন কমিটির সেক্রেটারি শাহী সানওয়ার বলেছিলেন, “কৃষকরা রক্তপাত করলেও তাদের পিতৃ-পিতামহের এই পৈতৃক সম্পত্তিকে রক্ষা করবেন।” জাহেদুল ইসলাম বলেছিলেন, “বিএসআইসি যেখানে চায় সেখানে শিল্প উদ্যান হবে। এখানকার কৃষকদের বিরোধিতা কী? বিপরীতে শিল্প উদ্যান থাকলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কৃষকরা চারটি ফসলের দাবি করতে পারবেন জমি, তাদের বিরুদ্ধে কিছুই আসে না। ‘