সে আমাকে সাথে করে ওজু করতে নিয়ে গেল ওদের কলপাড়ে। আমাকে ওজু করতে বলায় আমি ওকে আগে ওজু করতে বললাম।
আমি মনোমুগ্ধ হয়ে ওর ওজু করা দেখছি। কী সুন্দর করে মেয়েটা ওজু করছে! হাতের কনুই পর্যন্ত ধোয়ার সময়, ও যখন হাতের কাপড় গোটাতে লাগলো। একটি দৃশ্য দেখে আমার খুব খারাপ লাগলো।
আয়েশার কনুই এর কাছের কাপড় অনেক খানি ছিঁড়ে গেছে। আমি দেখেছি, এটা ওকে বুঝতে দিলাম না। ওর ওজু শেষ হলে আমি ওজু শুরু করলাম। অনেকদিন পর ওজু করায় কিছু কিছু ভুল হচ্ছিলো। সে বিনয়ের সাথে আমার ভুলগুলো শুধরে দিল।
আয়েশা পায়ের পাতা পর্যন্ত বড় একটি হিজাব পড়ে নিয়ে জায়নামাজ বিছিয়ে দিল। আমি ওকে জিজ্ঞেস করে নিলাম সম্পূর্ণ নামাজ কিভাবে পড়তে হবে। সে আমাকে বুঝিয়ে দেয়ার পর আমরা নামাজ শুরু করলাম। নামাজ শেষে সে আমাকে কিছু দু’আর কথা বললো। কিন্তু আমি এগুলো জানতাম না। সে মুনাজাত শেষ করে আমাকে একটা বই দিল। নাম “রাহে বেলায়েত”, লেখক “ড. আব্দুল্লাহ্ জাহাঙ্গীর (রহি.)”। বললো, “আপু এটা আপনার অনেক কাজে দিবে।”
আমি উল্টে পাল্টে দেখলাম অনেক দু’আ লেখা রয়েছে। এরপর আমি তাকে আমার অনাগত সন্তানের কথা বললাম। এই কথা শুনে সে খুব খুশি হলো। আমার বাচ্চার জন্য অনেক দু’আ করলো। আমি আবার অনেক অজানা কথা জানতে চাইলাম। সে আমাকে একটু অপেক্ষা করতে বলে কী যেন খুঁজতে লাগলো। একটু পর আমার জামার কালারের একটি বই নিয়ে এসে বললো, “আপু, এই বইটাও রাখেন। আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর খুব সুন্দর করে এই বইয়ে সাজানো আছে। ” দেখলাম বইটির নাম “মুহস্বানাত “।
এরই মাঝে আলেয়া খালা এক ঝুড়ি নারকেল পিঠা, নোনাস পিঠা, নাড়ু, মোয়া নিয়ে এলেন। আমি কপট রেগে খালার দিকে তাকালাম। “এতসব কেন করতে হবে, খালা? শুধু নাড়ু হলেই তো আমার চলে যেত। নাড়ু আমি খুব পছন্দ করি।”
খালা হাসতে হাসতে রসিকতা করে বললো,
“তোমরা না খায়া গেইলে তোমার প্যাটের ছইল কোনা মোর ওপর গোসা হয়া থাকিল হয়, মায়ো।” খালার কথা শুনে আমিও হেসে দিলাম। কত সহজ সরল এরা সবাই।
খালা আর আয়েশাকে জোর করে নিয়ে খেতে বসলাম। একটু পর আমার নজর গেল টিনের ছাউনিটার উপর। আসার সময় এর নীচে তো একটা রিক্সা দেখেছিলাম। এখন রিক্সাটা নাই কেন?
[চলবে]
Writer: Mahazabin Sharmin Priya