অধ্যায় ১: দুর্ভাগা সাক্ষাৎ
আমির শহিদ এক রহস্যময় প্রত্নতাত্ত্বিক। বিভিন্ন প্রাচীন রহস্য উদঘাটনে ব্যাপক আগ্রহ তার। তিনি এখন আছেন তুরস্কের ইস্তানবুলে। শহরের মধ্যিখানে। তিনি তার সর্বশেষ অভিযানে একটা লুকানো শিল্পকর্ম খুঁজে পান, যার আছে প্রচুর ক্ষমতা। কিন্তু তিনি কিছুদিন পরেই জানতে পারেন যে, এই শিল্পকর্মের পেছনে তিনি একাই ছুটছেন না। এই প্রাচীন শিল্পকর্মের পেছনে আরো কেউ ছুটছে। আমির জানেন না, “দ্য ক্রিসেন্ট ব্রাদারহুড” নামে এক সিক্রেট সোসাইটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নিদর্শনটির সন্ধান করছে।
ইস্তানবুলের রাস্তাগুলো গোলকধাঁধার মতো। যেদিকে যাওয়া যায় একই রকম লাগে। আমির এই শহরের ভেতরে ঢুকে যেতে লাগেন। তার দেখা হয় এক রহস্যময়ী লোক সেলিমের সাথে। সেলিমকে তিনি চেনেন না, আগে কখনো দেখেননি। তার চারপাশ ঘিরে কেমন যেন এক রহস্যের আভা। সেলিমের সাথে কথা বলে মনে হল, সেলিম ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে ভালোই জানে। সেলিম আমিরকে সতর্ক করে দিল তার সামনে থাকা বিপদের ব্যাপারে। আমির বুঝতে পারছিলেন না সেলিমকে সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করবেন কী না। সেলিম তার নিজের প্রকৃত পরিচয় বা উদ্দেশ্য বলতে নারাজ। অনিচ্ছাসত্ত্বেও সাময়িক জোট তৈরী করলেন সেলিমের সাথে। বুঝতে পারছিলেন না এই রহস্যময় লোকটিকে বিশ্বাস করে ঠিক কাজ করলেন কী না।
অধ্যায় ২: মুখোশ উন্মোচন
আমির আর সেলিম একসাথে বিভিন্ন প্রাচীন টেক্সট এবং ক্রিপ্টিক বা গোপন চিহ্নগুলো ডিসাইফার করতে থাকে। এর সমাধান পেয়ে গেলে সেগুলো তাদেরকে আয়া সোফিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে। আয়া সোফিয়ার ভূগর্ভস্থ ক্যাটাকম্বের গভীরে লুকানো চেম্বারটি রয়েছে। মনে হচ্ছে, সেখানেই শিল্পকর্মটি পাওয়া যাবে। তবে শিল্পকর্মটি নিজেদের দখলে নেওয়ার আগেই তাদের সাথে মোকাবেলা হয় দ্য ক্রিসেন্ট ব্রাদারহুডের। যার নেতৃত্বে আছে ক্যারিশম্যাটিক হলেও এক নির্মম ব্যক্তিত্ব রহিম আল-ফারসি।
রহিম তার পুরো জীবন কাটিয়েছেন শিল্পকর্মটির সন্ধানে। তিনি বিশ্বাস করেন যে এটি বিশ্বকে বদলে দিতে পারে। রহিমের অনুসারীদের সাথে আমির এবং সেলিমের সংঘাত বাঁধে। এক উত্তেজনাপূর্ণ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বিশৃঙ্খলার মধ্যে শিল্পকর্মটি সক্রিয় হয়ে যায়। প্রচণ্ড শক্তির এক অপ্রত্যাশিত ঢেউ সেখান থেকে বেরিয়ে আসে, যা সবাইকে অজ্ঞান করে দেয়।
অধ্যায় ৩: সময়ের ভেতর দিয়ে যাত্রা
আমির জ্ঞান ফিরে পেলে দেখে সে নবম শতাব্দীতে ফিরে এসেছে। শিল্পকর্মটির রহস্যময় শক্তি তাকে টাইম ট্র্যাভেল করিয়ে হাজার বছর পেছনে নিয়ে গিয়েছে। তিনি এখানে আবিষ্কার করতে পারেন শিল্পকর্মটির প্রকৃত উদ্দেশ্য। এটা এক প্রাচীন আওয়ারগ্লাস বা বালুঘড়ি। এটা কাল ও স্থানকে বাঁকিয়ে দিতে পারে। কিন্তু হাজার বছর আগে ফিরলেও ব্রাদারহুড তার পিছু ছাড়েনি। তার আর শিল্পকর্ম দুটোরই খোঁজ করে যাচ্ছে তারা।
আমির এই নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারছিল না। তার দেখা হয় প্রিন্সেস আমিরার সাথে। আমিরা এক বুদ্ধিমতী সাহসী নারী। আমিরা আমিরের সাথে যোগ দেয়। একসাথে তারা বিপদসংকুল পথ পাড়ি দেয়, ক্রিসেন্ট ব্রাদারহুডের এজেন্টদের এড়িয়ে এবং লুকিয়ে চলার চেষ্টা করে। পাশাপাশি কীভাবে আবার আপন জগতে, একবিংশ শতাব্দীতে ফিরে আসা যায় সেটার উপায় খুঁজতে থাকে।
অধ্যায় ৪: বিশ্বাসঘাতকতার গোলকধাঁধা
আবার বর্তমান সময়ে ফিরে আসা যাক। সেলিম নিজেকে প্রতারণার এক জটিল জালে আবিষ্কার করে। সে একসময় দ্য ক্রিসেন্ট ব্রাদারহুডের একজন অনুগত সদস্য ছিল। কিন্তু যখন সে তাদের অশুভ এজেন্ডা বুঝতে পারে তখন তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়। এখন, তাকে উভয় পক্ষ থেকেই আমীরকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করতে হবে। আমিরকে ব্রাদারহুডের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। আবার শিল্পকর্ম তাকে হাজার বছর পেছনে নিয়ে গেছে। সেখান থেকেও ফিরিয়ে আনতে হবে।
আমির আর সেলিম জানে না যে রহিম আল-ফারসি “দ্য ওবসিডিয়ান অর্ডার” নামে পরিচিত আরেক গুপ্ত সংগঠনের সাথে এক বিপজ্জনক জোট তৈরি করে, যাদের লক্ষ্য দ্য ক্রিসেন্ট ব্রাদারহুডের চেয়েও ভয়ঙ্কর।
অধ্যায় ৫: অভিসৃতি
ভাগ্যের সুতো একে একে ছিঁড়তে থাকে। আমির আর প্রিন্সেস আমিরা আবিষ্কার করে শিল্পকর্মটির প্রকৃত উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য হচ্ছে – পৃথিবীতে ভারসাম্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। কিন্তু এই ক্ষমতা কোনো ভুল হাতে চলে গেলে এটি অকল্পনীয় বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। দুজনই উপলব্ধি করে যে রহিম আল-ফারসি এবং দ্য ওবসিডিয়ান অর্ডারকে শিল্পকর্মটি দখল করা থেকে যেভাবে হোক বিরত রাখতে হবে। এ জন্য তাদের অবশ্যই বর্তমান সময়ের দিকে ফিরে আসতে হবে।
অন্যদিকে বর্তমান সময়ে সেলিম ছুটছেন। ছুটছেন তথ্য সংগ্রহের পেছনে। যেসব তথ্য সংগ্রহ করে আমির আর প্রিন্সেস আমিরাকে তাদের মিশনে সহায়তা করা যাবে। ব্রাদারহুডের নেটওয়ার্ক অনেক বড়। বিশ্বাসঘাতকতা প্রতিটি কোণে লুকিয়ে আছে।
অধ্যায় ৬: চূড়ান্ত শোডাউন
যেখানে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষে শিল্পকর্মটি পাওয়া গেছে সেখানে এক চূড়ান্ত শোডাউন ঘটে আমির ও প্রিন্সেস আমিরার সাথে রহিম আল-ফারসি আর দ্য অবসিডিয়ান অর্ডারের। ক্রিসেন্ট ব্রাদারহুডের বাহিনী দ্য অবসিডিয়ান অর্ডারের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। অন্যদিকে আমির ও প্রিন্সেস আমিরা রহিম এবং তার এলিট যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
শিল্পকর্মটির পাওয়ার বাড়তে থাকলে আমির এক চরম সিদ্ধান্ত নেয়। সে আওয়ারগ্লাস অর্থাৎ বালুঘড়িটি ভেঙ্গে ফেলে। যেন এই জিনিসটার ক্ষমতা আর কখনো খারাপ কারো হাতে না পড়তে পারে। প্রচণ্ড শক্তি বেরিয়ে আসে আওয়ারগ্লাসটি থেকে। পুরো ধ্বংসাবশেষ খান খান হয়ে যায়। প্রচণ্ড শকওয়েভ কাঁপিয়ে দেয় স্থান ও কালকে। সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে যায় আর্টিফ্যাক্টটির ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাও।
এপিলগ
ধ্বংসাত্মক ঘটনাটার পর আমির আর প্রিন্সেস আমিরা আবার বর্তমান সময়ে ফিরে আসে। আর্টিফ্যাক্ট চলে গেছে, হারিয়ে গেছে ইতিহাসের ধারায়। তবে তাদের বিপজ্জনক যাত্রার সময় যে আত্মত্যাগ এবং বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল তা চিরকাল তারা স্মরণ রাখবে।
সেলিম তার অতীত থেকে মুক্তি পেয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, যারা প্রাচীন আর্টিফ্যাক্টকে খারাপ কাজে ব্যবহার করতে চায় তাদের তাদের কাছ থেকে আর্টিফ্যাক্টগুলোকে রক্ষা করার জন্য তার জীবন উৎসর্গ করবে। আমির ফিরে আসে তার প্রত্নতাত্ত্বিক কাজে। তিনি অতীতের গতিপথ পরিবর্তন না করে এই পথেই দৃঢ়পদ থাকেন।
তিন জনের গন্তব্য হয়ে যায় তিন দিকে। তারা বুঝতে পারে এই দুনিয়া হলো আলো আর আঁধারির মিলনমেলা। এখানে মানুষ যা করে তার কর্মের প্রতিফল তাকে পেতে হয়। ভালোবাসা, বিশ্বাস আর সাহস সময়কেও ছাড়িয়ে যায়। তারা বুঝতে পেরেছে, প্রকৃত ক্ষমতা আর্টিফ্যাক্টের ভেতর নেই, আছে মহান রবের কাছে। মানুষের হৃদয় ও আত্মা পরিশুদ্ধ হলেই বিশ্বকে সুন্দর করে গড়া সম্ভব।