সাবজেক্ট চয়েস করার আগে অনেকেই জানতে চায় যে এই সাবজেক্টটাতে কি আছে বা এখানে কি পড়ানো হবে বা এই সাবজেক্টে পড়ার পরে আমি কি করব আসলে? এই বিষয়গুলো নিয়েই সাবজেক্ট রিভিউ করা হয়।
এখানে আলোচনা করা হবে EEE বা ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। আমরা আলোচনা করব এখানে কি কি বেসিক কোর্স করতে হয়, সেখান থেকে মেজর বা মাইনর বেছে নেওয়ার সময় কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হয় এবং সেখানে কোর কোর্স কি কি থাকে, কোন কোন জিনিসগুলোর ওপর পারদর্শীতা অর্জন করা যায়, ক্যারিয়ার সুযোগ কি কি হতে পারে ইত্যাদি।
EEE-তে শুরুতেই সবাইকে কমন কিছু বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। তারপর স্পেশালাইজেশনের জায়গা আসলে সাবজেক্টগুলো আলাদা আলাদা হয়ে যায়। প্রথমে যে বিষয়গুলো সবাইকেই করতে হয় সেটা মোটামোটি এরকমঃ
এসি বা ডিসি সার্কিটের ওপর কিছু কোর্স থাকে। যেমন, একদম শুরুতেই ডিসি সার্কিটের ওপর একটি কোর্স থাকবে। তারপর আস্তে আস্তে শিক্ষার্থীরা এসি সার্কিটের দিকে যাবে। এরপর জানতে পারবে এসি ও ডিসি সার্কিট দিয়ে কি কি করা যায়। এরপর পড়ানো হবে এনার্জি কনভার্শন অর্থাৎ মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফর্মার ইত্যাদি। এরপর সিগন্যাল প্রোসেসিং অর্থাৎ অ্যানালগ ও ডিজিটাল সিগন্যাল প্রোসেসিং পড়ানো হবে। কন্ট্রোল সিস্টেম এবং সলিড স্টেড ডিভাইস নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। তারপর এম্বেডেড সিস্টেম, মাইক্রোপ্রসেসর, মাইক্রোকন্ট্রোলার পড়ানো হয়। এগুলো নিয়ে অনেকেই কাজ করে। এরপর পড়ানো হয় ইলেকট্রিক্যাল সার্ভিস ডিজাইন। যখন একটা বিল্ডিং ডিজাইন করা হয় তখন বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জাম কোথায় থাকবে যেমন লাইট কোথায় থাকবে, ফ্যান কোথায় থাকবে, এসি কোথায় থাকবে, পাওয়ার কোথা থেকে আসবে, আর্থিং কীভাবে হবে এগুলো ইলেকট্রিক্যাল সার্ভিস ডিজাইনের অন্তর্ভুক্ত। তারপর কমিউনিকেশন থিওরিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। তারপর আসবে পাওয়ার প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং। আমরা যে এত ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ইউজ করি সেগুলো কোথায় জেনারেশন হচ্ছে, সেটা কীভাবে আসছে আমাদের কাছে এই জিনিসগুলো। তারপর হাই ভোল্টেজ ইঞ্জিনিয়ারিং। এসব ট্রিপল ই সংক্রান্ত সাবজেক্টের পাশাপাশি ম্যাথ, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, হিউম্যানিটিজ, একাউন্টিং, ইকোনোমিকস ইত্যাদি তো পড়ানো হবেই। এগুলো কমন সাবজেক্ট। সব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টেই পড়ানো হয়। সবাইকেই এগুলো করতে হয়।
কিন্তু ফাইনাল ইয়ারে যখন মেজর মাইনরের বিষয়টা চলে আসে তখন কিছু গ্রুপও চলে আসে। যেমন, পাওয়ার গ্রুপ, ইলেকট্রনিকস গ্রুপ, কমিউনিকেশনস এন্ড সিগন্যাল প্রসেসিং গ্রুপ।
যেমন, পাওয়ার গ্রুপে যদি কেউ মেজর করে তাহলে অন্যান্য গ্রুপগুলো তার জন্য মাইনর হয়ে যাবে। সে পাওয়ার গ্রুপের ওপর থিসিস করবে। কোর্সের ক্রেডিটগুলো প্রায় কাছাকাছি থাকে।
পাওয়ার গ্রুপের কিছু কিছু পড়া বেসিকেই পড়ানো হয়। যেমন, পাওয়ার সিস্টেম বা এনার্জি কনভার্সন। তবে মেজরে এসে সেই জিনিসগুলোই বিস্তারিত পড়তে হয়। যেমন, পাওয়ার প্ল্যান্ট বেসিকে পড়ার পরও এখানে এসে বিস্তারিত পড়তে হবে। পাওয়ার সিস্টেম কীভাবে রান করতে হয়, কীভাবে ট্রাবলশুট করতে হয় তা এখানে পড়ানো হবে। ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, মোটর ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। মোটর নিয়েই অনেক আলোচনা থাকে। যেমন, একটা মোটর কীভাবে অন করতে হয় বা অফ করতে হয় তা নিয়েও আছে অনেক জটিলতা। রিনিওয়েবল এনার্জি পড়ানো হয়। এটার গুরত্ব দিন দিন বাড়ছে। পাওয়ার প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিটেইলসে পড়তে হয় যে আসলে পাওয়ার কীভাবে জেনারেট করা হয়। যখন বেশী ভোল্টেজ নিয়ে কাজ করতে হয় তখন হাই ভোল্টেজ ইঞ্জিনিয়ারিং লাগে। হাই ভোল্টেজ এসিও হতে পারে। আবার এইচ ভি ডিসি অর্থাৎ হাই ভোল্টেজ ডিসিও আছে। পাওয়ার ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন, আমরা যে আপনার জেনারেট করলাম সেটা তো ট্রান্সমিট করতে হবে, দূরে পাঠাতে হবে। দূরে পাঠাতে গিয়ে পাওয়ার লস হতে পারে, বিভিন্ন রকম ফল্ট হতে পারে। তাই পাওয়ার ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে আলাদা করে পড়া লাগে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং। আমাদের দেশেও রূপপুরে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরী হচ্ছে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার কীভাবে জেনারেট করা যায়, কীভাবে মেইনটেইন করা যায় তা এখানকার আলোচ্য বিষয়। স্মার্ট গ্রিড। এই আইডিয়া বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় পপুলারিটি পাচ্ছে। স্মার্ট গ্রিড হল একটি বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক যা এন্ড ইউজারদের অর্থাৎ গ্রাহকদের বিভিন্ন বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সমস্ত উৎপাদনের উৎস থেকে বিদ্যুতের পরিবহন নিরীক্ষণ এবং পরিচালনা করতে ডিজিটাল এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এরকম থাকতে পারে যে কেউ নিজেই কিছু ইলেকট্রিসিটি তৈরী করল। যেমন, সোলার প্যানেল, উইন্ডমিল তা অন্য কোনো মাধ্যমে। সে চাইলে তার বিদ্যুতের সোর্সটা জাতীয় গ্রিডের সাথে সংযুক্ত করে দিতে পারবে। এতে সে যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশী ইলেকট্রিসিটি উৎপাদন করে সেটা সে জাতীয় গ্রিডে পাঠিয়ে দিতে পারবে। আর প্রয়োজনের চেয়ে কম উৎপাদন করলে জাতীয় গ্রিড থেকে নিতেও পারবে। কে কতটুকু ইলেকট্রিসিটি দিল না নিল সেটার হিসাবনিকাশ স্মার্ট গ্রিডের মধ্যে পড়ে।
ইইই-তে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়তে হয়। ফলে বিভিন্ন দিকে ফোকাস করতে হয়। এটাকে একটা প্রবলেম বলা যায়। তবে এটার আবার সুবিধাও আছে। যেহেতু অনেক বিষয় পড়তে হয় ফলে অনেক দিকে যাওয়াও যায়। চাইলে কেউ ইইই পড়ার পর বায়োমেডিকেলে শিফট করতে পারে। কেউ এমনকি কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে কাজ করতে পারে। কারণ ইইই পড়লেও প্রোগ্রামিং কোর্স থাকায় সি, সি + + শিখতে হয়। এম্বেডেড সিস্টেমে এসে এম্বেডেড সিস্টেমের জন্য যে প্রোগ্রামিং সেটা শিখতে হয়। লো লেভেল বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখতে হয়। এই হচ্ছে মোটাদাগে কি কি সাবজেক্ট থাকে সেটার একটা রিভিউ।
চার বছরের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ইইই কোর্সে এসবই পড়ানো হবে। কিন্তু এরপর? এরপর কেউ চাইলে এগুলোর ওপর এম এস সি করতে পারে, পিএইচডি করতে পারে, হায়ার স্টাডিজের জন্য বিদেশে যেতে পারে। আর ক্যারিয়ারের সুযোগ যা হতে পারে সেটা হচ্ছেঃ কেউ যদি রিসার্চার হতে চায় তাহলে সে এগুলোর ওপর রিসার্চ করতে পারে, দেশে বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় এসব সুযোগ থাকে, কেউ চাইলে ফ্যাকাল্টিতে ঢুকতে পারে, কেউ প্রাইভেট কোম্পানিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ঢুকতে পারে, কেউ অন্ট্রপ্রেনার হতে পারে যদি সে চায় যে সে কোনো একটা বাস্তবিক সমস্যা সমাধান করে এরপর সেই সমাধানটা বিক্রি করবে কোনো একটা কোম্পানির আন্ডারে। এভাবেও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে অন্ট্রপ্রেনার হওয়া যায়। কেউ যদি সরকারি চাকরি করতে চায় সেই সুযোগও আছে। যেমন, পাওয়ার জেনারেশনের ক্ষেত্রে সরকারি কোম্পানি পিডিবি, পিজিসিবি, ডেসকো, নেসকো ইত্যাদি আছে। অনেকে পড়াশোনা শেষ করার পর পাবলিক সার্ভিসে অর্থাৎ ক্যাডার সার্ভিসে যায়। সেই হিসাবে সুযোগ সব দিকেই খোলা থাকে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদী বি এস সি কোর্সে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করা যায়। যেমন, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চিটাগং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও ইইই নিয়ে পড়াশোনা করার সু্যোগ রয়েছে।