পুরো বাগানটাকে এত সুনিপুণ করে বানিয়ে নিয়েছেন আমার বাবা। এখানে এসে আব্বুর রুচিশীলতার তারিফ করেননি এমন মানুষ একটিও নেই। এখানকার বেশ কয়েকটি গাছে মৌচাক আছে। পাখিদের কলকাকলি আর মৌমাছির গুঞ্জনে মন খারাপেরাও যেন অবকাশ পায়। তারাও যেন মিশে যায় প্রকৃতির মাধুর্যে।
পশ্চিমদিকের শান বাঁধানো ঘাটে এসে আমরা খুব সাবধানে সিঁড়ি বেয়ে নামলাম। আর দু’টো সিঁড়ি পেরুলেই পানি ছুঁতে পারব আমরা। কিন্তু পানি থেকে উপরে এই তৃতীয় নাম্বার সিঁড়িটাই আমরা বসলাম। মাছ রাখার জন্য বড় সাইজের যে ব্যাগ দু’টো নিয়ে এসেছিলাম, দু’জন দুই দিকে সেটি রাখলাম।
শুরু হলো মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। আমি মাছ ধরায় পটু। ছোলবেলা থেকেই আমি মাছ ধরায় অভ্যস্ত। কিন্তু আয়ান শহরের ছেলে। বছরে বার দুয়েক এর বেশি সময় সে মাছ ধরার মতো সুযোগ পায়নি।
প্রথম মাছটা ধরলাম আমি। বেশ বড় সাইজের একটি তেলাপিয়া। এই মাছের মুখে বড়শি গেঁথে গেলে তার শরীরের সাথে লাগানো কাটাগুলো মেলে ধরে। খুব কায়দা করে এই মাছের মুখ থেকে বড়শি বের করতে হয়। আমার কোনো প্রবলেম হয় না, আমি পারি এটা। এখনও হলো না। আয়ান বেশ অবাক হলো। আমি একটু রহস্য করে হাসলাম।
এরপর আয়ানের বড়শিতেও মাছ উঠেছে। তবে সেটা একটা দেশি পুঁটি। আমি হো হো করে হাসা শুরু করে দিয়েছি। আয়ান মুখটা বাংলার পাঁচ এর মতো হয়ে গেল। সেটা অবশ্য বেশি সময়ের জন্য থাকলো না। কারণ এরপর আয়ানের বড়শিতে বড় একটি রুই মাছ গেঁথে গেল। তার অবস্থা এখন খুশিতে বাকবাকুম। কিন্তু মজার কথা হলো, বেশি খুশির ঠ্যালায় মাছও খুশি মনে বড়শি উগলে চলে গেল।
আহারে বেচারা! মাছটি ছুঁয়ে দেখারও সুযোগ পেল না। আমার হাসি তো থামেই না। হা হা হা হা!
এরপর আমার সাথেও একই ঘটনা ঘটলো। সে তো তবু তার মাছটি দেখতে পেয়েছিল। কিন্তু আমার বড়শিতে গাঁথা মাছটি পানির মধ্যেই যুদ্ধ করে বেড়িয়ে গেল। আমি আফসোস করতে লাগলাম। এবার আয়ান আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে গা জ্বালানো হাসি হাসছিলো।
[চলবে]
Writer: Mahazabin Sharmin Priya