জেমস রোলিনসের অ্যামাজনিয়া রেসিং কার গতির এক থ্রিলার অ্যাডভেঞ্চার। এই বইটি আপনাকে নিয়ে যাবে আমাজন রেইন ফরেস্টের গহীনে। দুর্দান্ত গল্প বলায় পারদর্শী জেমস রোলিনস পুনরায় পাঠকের জন্য নিয়ে এসেছেন অ্যাকশনে ভরপুর এক থ্রিলার যেখানে আছে বিজ্ঞান, ইতিহাস ও রূপকথার মিশেল। যা পাঠককে দেবে থ্রিলিং অভিজ্ঞতা। পাঠকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জাগবে নিত্য নতুন অ্যাডভেঞ্চার।
গল্পটি শুরু হয় বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. নাথান র্যান্ডের অ্যামাজন অভিযান দিয়ে। তিনি এক ঝুঁকিপূর্ণ মিশনে বেরিয়েছেন। উদ্দেশ্য, আমাজনের গহীনে হারানো এক অভিযানের সত্যকে উন্মোচন করা।মূলত নিষিদ্ধ বিষয়ে মানুষের থাকে আজন্ম টান। আর যারা থ্রিলিং কিছু পছন্দ করেন তাদের ভিতরে থ্রিলার নিয়ে আসে নতুন অ্যাডভেঞ্চার। মূলত গল্পের প্রধান চরিত্র সেই ধাঁচেরই একজন মানুষ। তিনি অনাবিষ্কৃত অঞ্চলের গভীরে প্রবেশ করেন। সেখানে ড. র্যান্ড বিষাক্ত প্রাণী, প্রতিকূল আদিবাসী উপজাতি এবং অকল্পনীয় শক্তির অধিকারী এক রহস্যময় প্রাচীন সভ্যতাসহ নানা মারাত্মক বাধার সম্মুখীন হন। কিন্তু ঐ যে অ্যাডভেঞ্চার, এই জিনসটাই তাকে বাধা কাটিয়ে ওঠার ও নতুন সেইসব চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রেরণা জোগায়।
রোলিন্স দক্ষতার সাথে জীববিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব ও দেশীয় লোককাহিনীর উপাদানগুলোকে একত্রিত করে একটি দারুণ গল্প দাড়া করিয়েছেন। তিনি গল্পের অনেক জায়গায় সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয় তুলে ধরেছেন, বিশদ বিবরণ দিয়েছেন নানা জিনিসের। সমৃদ্ধ স্তরবিশিষ্ট প্লট তৈরি করে। তিনি নির্বিঘ্নে বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং ঐতিহাসিক তথ্যসূত্রগুলোকে একীভূত করেছেন। যা তার বর্ণনার বিশ্বাসযোগ্যতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। রেইনফরেস্টসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রাণরসে পরিপূর্ণ বর্ণনা একটি প্রাণবন্ত পটভূমি তৈরি করেছে। পাঠক বইটি পড়ার সময় রেইনফরেস্টের সৌন্দর্যের বর্ণনায় যেমন মজে যাবেন। তেমনি বিপদজনক মূহুর্তে শিউরে উঠবেন।
অ্যামাজোনিয়ার চরিত্রগুলো বেশ সুগঠিত। পাঠক সহজেই চরিত্রগুলোর সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবেন। ড. নাথান র্যান্ড এখানে এক দৃঢ়চেতা ও বিজ্ঞ প্রোটাগোনিস্টের চরিত্রে ছিলেন। সত্যের পথে এগিয়ে যাওয়া, অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তাড়না ছিল তার। এই বিষয়গুলোই পুরো গল্প জুড়ে তার কাজ ও সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। সহযোগী চরিত্রের মধ্যে যারা ছিলেন, যেমন এক দক্ষ ট্র্যাকার এবং আরেক রহস্যময়ী নারী বিজ্ঞানীর উপস্থিতি উপন্যাসটিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
অ্যামাজোনিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দিকটি হচ্ছে, রোলিনসের থ্রিলিং ও হৃদয় কাঁপানো অ্যাকশন সিকোয়েন্স তৈরী করার ক্ষমতা। বিষাক্ত সাপের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি নির্মম মার্সেনারিদের হাত থেকে পালানো – এই বইটি এরকম অনেক উত্তেজনাকর মূহুর্তে পরিপূর্ণ যা পাঠককে বইয়ের পাতা উলটাতে থাকতে বাধ্য করবেই। সত্যিই লেখকের সাসপেন্স তৈরী করার প্রতিভা আছে। পাঠককে সারপ্রাইজ দিতে পারেন তিনি। যা পাঠকের রক্তে অ্যাড্রেনালিনের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়।
তবে প্লটে একাধিক গল্পরেখার পাশাপাশি ছোট ছোট পার্শ্বকাহিনীও আছে যার কারণে উপন্যাসটিকে কিছুটা জটিল লাগতে পারে।যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তারা জটিলতাতেও অ্যাডভেঞ্চারের আনন্দ খুঁজে পান। মূলত সাধারণত পাঠক বইয়ে ফোকাস রাখতে পছন্দ করেন। পুরো বিষয়টা মাথায় রাখতে চান। তবে রোলিনস যে নিরলস গতি বজিয়ে রেখেছেন এবং তার আকর্ষক বর্ণনাশৈলী লেখকের সকল ছোটোখাটো ত্রুটিকে ঢেকে দিয়েছে।
সবশেষে বলা যায়, অ্যামাজোনিয়া এক দুর্দান্ত অ্যাডভেঞ্চারের গল্প যা জেমস রোলিনসের ভক্তদের পাশাপাশি অ্যাকশনে-ভরপুর থ্রিলার লাভারদের পুরো বই পর্যন্ত ধরে রাখতে বাধ্য করবেই। বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সাসপেন্সের সংমিশ্রণ আপনাকে নিয়ে যাবে অ্যামাজন রেইনফরেস্টের অজানা গহীনে। জেমস রোলিনস পুনরায় প্রমাণ করেছেন যে তিনি তার থ্রিলার জনরায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অবস্থান করছেন। তিনি এমন থ্রিলিং গল্প পরিবেশন করেছেন যা পাঠককে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চুম্বকের মতো ধরে রাখবে।
যারা থ্রিলার স্টোরি পছন্দ করেন তাদের জন্য অ্যামজনিয়া বইটি আপনাকে সাময়িক সময়ের জন্য ঘুরিয়ে আনবে অ্যামাজনের গহিনে, আর দেবে এক থ্রিলিং অ্যাডভেঞ্চার।
বইঃ অ্যামজনিয়া – অ্যামাজনের গহিনে এক থ্রিলিং অ্যাডভেঞ্চার
লেখক: জেমস রোলিনস
রেটিং: ৯/১০