যে একটি গুণ আপনাকে সফল মানুষে পরিণত করবে, আমাদের সবার ভেতর দ্বৈত প্রকৃতি বাস করে। এক প্রকৃতি আমাদের সামনে এগিয়ে নিতে চায়, অপর প্রকৃতি আমাদের টেনে ধরে। আমরা যে প্রকৃতির ওপর মনোযোগ দেব, যে প্রকৃতির যত্ন নেব সে প্রকৃতিই হবে শক্তিশালী। উভয় প্রকৃতিই সর্বদা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। সুতরাং পুরো বিষয়টা ইচ্ছার ওপর।
যে একটি গুণ আপনাকে সফল মানুষে পরিণত করবে
যে ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি প্রচণ্ড শক্তিশালী সে তার নিজের ক্যারিয়ারকে অনেক উপরে নিয়ে যেতে পারে এবং অনেক দৃশ্যমান অসম্ভবকেও সম্ভবে পরিণত করতে পারে।
আপনাকেও হতে হবে সেই লোকটি। আপনিও হতে পারবেন যদি আপনার থাকে ইচ্ছাশক্তি। কারণ ইচ্ছাই সমাধানের পথ বের করে, পথ না থাকলে পথ তৈরী করে।
জীবন আমাদের সামনে অনেক সুযোগ নিয়ে আসে। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ গ্রহণ করব কি করব না তা নির্ভর করে আমরা কিভাবে জীবনযাপন করেছি তার ওপর। যে একটি গুণ আপনাকে সফল মানুষে পরিণত করবে, প্রতিটি মাসের শুরুতে একজন ব্যক্তির শান্তভাবে বসে দেখা উচিত সে আসলে কতদূর অগ্রসর হল। সে যদি নিজের “প্রত্যাশা” পূরণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার এর কারণ খতিয়ে দেখা উচিত।
সফল মানুষেরা এমন কি করে, যা ব্যর্থরা করে না
সফল মানুষেরা এমন কি করে, যা ব্যর্থরা করে না, আমরা যা পরিকল্পনা করেছি তা অর্জন করতে ব্যর্থ হলে আমরা যে কতটা হারিয়েছি তার পরিমাপ করাই দুষ্কর। কারণ, যে সময়টা একবার চলে গেছে সেটা আর কোনোদিনও ফেরত পাওয়া যাবে না। আমরা হয়তো কাজটা না করার পেছনে অনেক অজুহাত খাড়া করাতে পারব, কিন্তু প্রকৃত সত্যটা তো আমরা জানি। একদিন যখন অবহেলা করার প্রতিফল চোখের সামনে ভেসে উঠবে, সেদিন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাব।
অধিকাংশ কাজই সম্ভব। যে একটি গুণ আপনাকে সফল মানুষে পরিণত করবে, আমাদের সামনে যে কাজটা আছে, হয়তো সেটা কঠিন। কিন্তু যে কাজ যত কঠিন, সেটার পুরষ্কার তত বেশি। কঠিন জিনিসগুলোই আমাদের অগ্রগতি ঘটায়। যে কাজটা করা সহজ, সেই অর্জনের মূল্যও তত কম। তাই কঠিন কাজ থেকে কখনো পালানোর চেষ্টা করবেন না। কারণ ছোট ছোট ডজনখানেক অর্জনের চেয়ে একটা বড় অর্জনই জীবনে অনেক বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।
জীবনে সফলতার গল্প | জীবনে সফলতা অর্জনের উপায়
জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে হলে মনোযোগের কোনো বিকল্প নেই। মনোযোগ না দিলে কোনো কাজই করা সম্ভব না। অন্তত যেসব কাজে মানসিক দক্ষতার প্রয়োজন হয় সেগুলো।
মনোযোগ দিতে পারার ক্ষমতা এক অতুলনীয় ক্ষমতা। যার এই ক্ষমতা আছে সে তার মনোযোগ ও ফোকাস একটা নির্দিষ্ট কাজ, আইডিয়া বা লক্ষ্যে ব্যবহার করতে পারে। সুতরাং মনোযোগের ক্ষমতা হচ্ছে নিজের মানসিক শক্তিকে কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যবহার করা। এতে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা বাড়বে, কর্মদক্ষতা বাড়বে।
মনোযোগ বা একাগ্রতা হল একটি মৌলিক জ্ঞানীয় দক্ষতা যা জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে বা দিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে আছে শিক্ষা, সমস্যা সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সামগ্রিক ব্যক্তিগত বিকাশ।
যখন আমরা একাগ্র হই, আমরা সকল ডিসট্র্যাকশন থেকে নিজেদের মনোযোগ সরিয়ে নিই এবং বর্তমান কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিই। মনের এই ফোকাসড অবস্থা আমাদেরকে নিজের সামনে থাকা বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে সহায়তা করে, কার্যকরভাবে তথ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে, এমন এমন কানেকশন তৈরী করে যা কেবল ফোকাস থাকার জন্যই সম্ভব হয়েছে।
পরীক্ষার জন্য পড়া হোক, জটিল কোনো প্রোজেক্ট শেষ করা হোক কিংবা সৃজনশীল কোনো কাজই হোক, একাগ্রতই হচ্ছে সেই দক্ষতা যা আমাদের সফলতার চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে।
একাগ্রতার মূল উপকারিতাগুলোর একটি হচ্ছে শেখার দক্ষতা ও শেখা জিনিস মনে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া। আমরা যখন মনোযোগ দেই, তখন আরো সহজে ও কার্যকরভাবে তথ্যগুলো আমাদের মস্তিষ্ক শুষে নিতে পারে। তথ্যগুলো ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বা শর্ট টার্ম মেমোরি থেকে ব্রেইনের দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বা লং টার্ম মেমোরিতে স্থানান্তরিত হয়।
কোনো একটা নতুন বিষয় বা কনসেপ্ট বোঝা ও আয়ত্ব করার জন্য নিজেদেরকে সেই বিষয় বা কাজে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দিতে হবে। মনোযোগ দিলে আমরা কোনো একটা বিষয় গভীরভাবে বুঝতে পারি, জটিল আইডিয়াগুলো ধরতে পারি এবং তথ্যগুলোও আরো কার্যকরভাবে সংশ্লেষণ করতে পারি।
অধিকন্তু, একাগ্রতা প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধিতে যখন আমরা একটি নির্দিষ্ট কাজে মনোনিবেশ করি, তখন আমরা একটি ফ্লো-অবস্থায় (গতিশীল) প্রবেশ করি। এ অবস্থায় কোনো বিষয় বোঝার ক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা উভয়ই বাড়ে। এই অবস্থায় সময় যে কোন দিক কেটে যায় তা টেরই পাওয়া যায় না। যে একটি গুণ আপনাকে সফল মানুষে পরিণত করবে, আমাদের কর্মদক্ষতা অনেক বেড়ে যায়। একাগ্রতা আমাদের মানসিক শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে সহায়তা করে। এতে মাথায় আজেবাজে চিন্তা আসে না, ডিসট্র্যাকশনও তত কাজ করে না। ফলে আমরা কোনো একটা কাজ আরো দ্রুততা ও নিপুণতার সাথে করতে পারি।
একাগ্রতা সমস্যা সমাধানের দক্ষতাও বৃদ্ধি করে। কোনো একটা সমস্যা সমাধানে একাগ্র হলে আমরা সমস্যাটিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে পারি, বিভিন্ন সমাধান খুঁজে দেখতে পারি, বিভিন্ন প্যাটার্ন বা কানেকশন খুঁজে পেতে পারি যা যুগান্তকারী সমাধান এনে দিতে পারে। যে একটি গুণ আপনাকে সফল মানুষে পরিণত করবে, মনোযোগ প্রদানের দ্বারা আমরা একটা সমস্যার গভীরে ঢুকতে পারি। উপরে উপরে সমাধান না খুঁজে গভীরভাবে চিন্তা করি আমরা। এতে আমাদের মনটা পরিষ্কার থাকে, মনটা ফোকাস থাকে। ফলে আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ উত্তোরণে সক্ষমতা অর্জন করি এবং যুগান্তকারী সমাধান খুঁজে পাই।
একাগ্রতা বৃদ্ধির কৌশল
আজকের বিশ্বের দ্রুতগতিসম্পন্ন ও প্রযুক্তিচালিত দুনিয়ায় মনোযোগ ধরে রাখা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের কাজ। আমাদের চারপাশ থেকে একের পর এক ডিসট্র্যাকশন আসতেই থাকে।যে একটি গুণ আপনাকে সফল মানুষে পরিণত করবে, সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন থেকে শুরু করে সর্বদা একের পর এক তথ্যের স্রোত আমাদের নিউরনে নিউরনে গিয়ে আছড়ে পড়ে। কিন্তু এর পরেও মনোযোগ বা একাগ্রতার দক্ষতা তৈরী করা অসম্ভব না। এর জন্য দরকার প্র্যাকটিস, নিয়মানুবর্তিতা এবং ডিসট্র্যাকশন কমানোর কার্যকর উপায়।
কিছু কিছু কৌশল আমাদের একাগ্রতা বৃদ্ধি করতে পারেঃ
একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা
একটি শান্ত ও আরামদায়ক স্থান খুঁজুন। যেখানে বাহ্যিক ডিসট্র্যাকশন খুব একটা থাকবে না। আপনার কর্মক্ষেত্র পরিষ্কার রাখুন এবং অপ্রয়োজনীয় ডিসট্র্যাকশনগুলো দূর করুন।
সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ
হাতে থাকা কাজের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। বড় কাজগুলোকে ছোট ছোট কাজে ভাগ করে নিন। এতে কাজটাকে ছোট দেখাবে, মনোযোগ দেওয়াও সহজ হবে।
কার্যকরভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট করুন
কোন সময়ে আপনি ফোকাস হয়ে, সম্পূর্ণ মনোযোগের সাথে কাজ করবেন তার জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করুন। আপনার সক্ষমতা অনুযায়ী ও কখন আপনার মনোযোগ বেশি থাকে সেই অনুযায়ী রুটিন বানান।
মননশীলতা এবং একাগ্রতার অনুশীলন করা
মননশীলতা এবং একাগ্রতার অনুশীলন আপনার মনকে কোনো একটি চিন্তা বা ভাবনা করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন, সালাত আদায়ের সময় খুশু খুজু বজায় রাখা, সকল ফোকাল কেবলমাত্র আল্লাহর ওপর রাখা হতে পারে মননশীলতা ও একাগ্রতার শ্রেষ্ঠতম উদাহরণ।
নিয়মিত বিরতি নেওয়া
নিয়মিতভাবে সংক্ষিপ্ত বিরতি আপনার মনকে সতেজ করতে এবং মানসিক ক্লান্তি রোধ করতে সহায়তা করে। এই সময়ে একটু রিল্যাক্স করতে পারেন, জিরিয়ে নিতে পারেন অথবা এমন কাজ করতে পারেন যা আপনার এনার্জি বাড়াবে।
ডিসট্র্যাকশন হ্রাস করা
ইলেকট্রনিক ডিভাইস ডিসট্র্যাকশনের অনেক বড় কারণ। এগুলো থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখুন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রয়োজনের বাইরে কখনোই যাবেন না। আপনি নিজের চারপাশে এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরী করে নিন যা আপনাকে ডিসট্র্যাকশনের হাত থেকে রক্ষা করবে।
যে কোনো সময়ে কেবল একটি কাজে ডুবে থাকার অনুশীলন করা
মাল্টিটাস্কিংয়ের পরিবর্তে কেবল একটি কাজে মনোযোগ দিন। নতুন কোনো কাজে হাত দেওয়ার আগে হাতের কাজে সম্পূর্ণ মনো্যোগ দিন।
জীবনে সফল হওয়ার উপায়
সুতরাং, বর্তমান বিশ্বে যখন একাগ্রতা বজায় রাখা প্রায় অসম্ভবপর হয়ে গেছে, সেখানে একাগ্রতার ক্ষমতা হতে পারে এক মূল্যবান সম্পদ। যে একটি গুণ আপনাকে সফল মানুষে পরিণত করবে, যা আমাদের মানসিক ক্ষমতা কাজে লাগাতে, নিজেদের কাজে শ্রেষ্ঠত্ব ও সফলতা অর্জন করতে এবং পরিপূর্ণতার অনুভূতি অর্জনে সাহায্য করতে পারে। জীবনে সফল হওয়ার উপায় , এই ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর দ্বারা আমরা নিজেদের পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করতে পারি। মনোযোগ প্রদানের দ্বারা আমাদের চারপাশের মানুষের সাথে সম্পর্কও বৃদ্ধি পাবে। তাই একাগ্রতার শক্তিকে নিজের মধ্যে ধারণ করুন। যাত্রা শুরু করুন আত্ম-আবিষ্কারের পথে।