ভারতে দুই হাজার রুপির ব্যাংক নোট বাতিলের ঘোষণায় কিছু মানুষের মধ্যে হুলুস্থুল শুরু হয়েছে। দুই হাজার রুপির নোট সবার কাছে নেই, তবে যাঁদের কাছে আছে, তাঁদের অনেকেই ভাবছেন, ব্যাংকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে নোট বদল করা কাজের কথা হবে না। বিশেষ করে, যাঁরা হাতে থাকা পুরো অর্থের কথা ঘোষণা করেন না, অর্থাৎ মজুতদারেরা।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হচ্ছে, নোট বদলের বিপরীতে ভারতের এই মানুষেরা সোনা কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। তবে সে জন্য তাঁদের প্রিমিয়াম বা অতিরিক্ত দাম দিতে হচ্ছে। গতকাল শনিবার বিকেলে মুম্বাইয়ে সোনার অনানুষ্ঠানিক বাজারে দুই হাজার রুপির নোট ব্যবহার করে ১০ গ্রাম সোনা কিনতে ব্যয় হচ্ছে ৬৭ হাজার রুপি, যদিও জিএসটিসহ সোনার আনুষ্ঠানিক দর ৬৩ হাজার ৮০০ রুপি। বাড়তি অর্থ ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
বাজারের বিভিন্ন সূত্র ইকোনমিক টাইমসকে বলেছে, কিছু মানুষ যেন নোট বদলের ঘোষণার পর আপনা-আপনি সোনার দোকানে ভিড় করতে শুরু করেছেন। ঘোষণা আসার পরই সোনার প্রিমিয়াম বেড়ে গেছে। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তা কমে যাবে বলে সূত্রগুলোর ধারণা। নোট বদলের সময় আছে চার মাস, ফলে মানুষ নানা কিছু চেষ্টা করবে।
তবে ২০১৬ সালের নোট বাতিলের পর নিয়মকানুন আরও কঠোর হয়েছে। সে সঙ্গে নোট বাতিলের পদক্ষেপে আবাসন খাতেও প্রভাব পড়বে, এই সম্ভাবনায় যে নোট মজুতকারীদের হাতে তেমন কোনো বিকল্প থাকবে না।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ২০০০ রুপির এসব নোট ব্যাংকে জমা দিয়ে করের আওতায় আসাকে মানুষ সমাধান হিসেবে দেখছে না। ২০১৬ সালেও এমনটা হয়েছিল, যাঁরা নোট জমা দিয়েছিলেন, তাঁরা ২০২১ সালেও রাজস্ব কার্যালয়ের নোটিশ পেয়েছেন।
আরেকটি সুযোগ হলো মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় অনুদান দেওয়া, কারণ, এসব প্রতিষ্ঠান অনামা সূত্র থেকে অনুদান নিতে পারে। ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়ে অনেকে ছোট অঙ্কের নোট বদলে নিতে পারেন।
২০১৬ সালে অনেক সোনা ব্যবসায়ী বাতিল হওয়া ৫০০ ও ১ হাজার রুপির নোটের বিনিময়ে সোনা বিক্রি করেছেন। ফলে এবারও অনেকে তা করতে প্রলুদ্ধ হতে পারেন। তখনো ক্রেতাদের বড় অঙ্কের প্রিমিয়াম দিতে হয়েছে, কিন্তু পরবর্তী সময় সোনার দাম অনেকটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতারা সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেরেছিলেন।
তবে এবারের বিষয়টা আগেরবারের মতো হবে না বলেই ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে। মুম্বাইয়ের এক সনদপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক সিদ্ধার্থ বানওয়াত বলেন, যাঁরা নানা কিছু করে ২০০০ রুপির নোট ব্যবহার করতে চান, তাঁদের এই পরিণতি সম্পর্কে ভেবে দেখা দরকার। কেউ কেউ স্বল্পমেয়াদি ব্যবসার মধ্যে আশার আলো দেখতে পারেন, কিন্তু আইনে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে সিদ্ধার্থ বানওয়াত বলেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে লেনদেন করতে হলে প্যান (স্থায়ী হিসাব নম্বর) বাধ্যতামূলক, যেমন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় একবারে ৫০ হাজার রুপির বেশি বিল দিতে হলে তা করতে হয়; বিদেশ ভ্রমণ বা বিদেশি মুদ্রা ক্রয়ের ক্ষেত্রে একবারে ৫০ হাজার রুপি লেনদেন ও ২ লাখ রুপির বেশি অর্থের পণ্য ও সেবা কেনার ক্ষেত্রে প্যান বাধ্যতামূলক।
এ ছাড়া ভারতের আয়কর আইনের ২৬৯ এসটি অনুসারে, কোনো ব্যক্তি এক দিনে কারও কাছ থেকে দুই লাখ রুপির বেশি অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন না বা এক লেনদেন বা একটি ঘটনার সাপেক্ষে এর বেশি অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন না। এ ছাড়া চলতি মাসের শুরুতে ই-ইনভয়েসিংয়ের বাধ্যতামূলক ন্যূনতম লেনদেন সীমা পাঁচ কোটি রুপিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে এখনো চার মাস সময় বাকি, এর মধ্যে মানুষ আরও অনেক পথ বের করে ফেলবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৬ সালের নোট বাতিলের পর যাঁরা নোট জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই আয়কর দপ্তরের নোটিশ পেয়েছেন। সরকার তখন নিশ্চিত করে, আড়াই লাখ রুপি পর্যন্ত সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সরকার প্রশ্ন করবে না। কিন্তু এবার সে রকম কোনো নির্দেশনা নেই। যাঁদের হাতে দুই হাজার রুপির নোট আছে, আয়কর দপ্তরের হানা এড়াতে এবার তাঁরা ব্যাংকে না–ও যেতে পারেন।
চোক্ষী অ্যান্ড চোক্ষী এলএলপির অংশীদার প্রিয়ঙ্ক ঘিয়া তাই মনে করেন, যাঁদের হাতে বৈধ নোট আছে, তাঁদের জন্য হলেও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন।
২০১৬ সালে অনেকেই অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে বৈধ সম্পদ কিনেছেন, ক্লাবের সদস্যপদ কিনেছেন, স্পা ও জিমে গেছেন। ব্যবসায়ীরা সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ করেছেন বা পুরোনো ঋণ পরিশোধ করেছেন। এবারও অনেকে সে কাজ করবেন, তবে এবার হয়তো পরিমাণের দিক থেকে তা কমে আসবে।
কিন্তু আয়কর বিভাগ কি হাতবদলের পর কালো টাকা ধরতে পারবে, সেই প্রশ্ন তুলেছে ইকোনমিক টাইমস। খেলার বড় অংশ তা-ই এখনো বাকি।