কে ছিলেন ইবনু তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহু)? আসুন এই মহান ইমাম সমন্ধে বিস্তারিত জেনে নিই।
ইমাম, হাফিজ, ফকীহ, শাইখুল ইসলামঃ আহমদ বিন আবদুল হালিম বিন আবদুস সালাম বিন আব্দুল্লাহ বিন আবু কাসিম বিন তাইমিয়া আল-হাররানী তাকিউদ্দিন আবু আল-আব্বাস বিন শিহাবুদ্দিন। সংক্ষেপে ইবনু তাইমিয়া নামেই পরিচিত ছিলেন। রহিমাহুল্লাহু তাআলা।
জন্ম ও পরিবারঃ
৬৬১ হিজরির কথা। তখন রবিউল আউয়াল মাসের দশম বা দ্বাদশ তারিখ। সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী আরব উপদ্বীপের এক প্রাচীন শহর হাররানে জন্মগ্রহণ করেন আমাদের এই মহান ইমাম। তিনি এবং তার পরিবার পরবর্তীতে তাতারদের আগ্রাসনের কারণে দামেশকে পালাতে বাধ্য হন।
তিনি এসেছিলেন আলিম পরিবার থেকে। তাঁর পিতা দাদা এবং তাঁর তিন ভাই সবার মতো তিনিও বিজ্ঞ আলিম ছিলেন। তাঁর তিন ভাইয়ের নাম আবদুর রহমান, আবদুল্লাহ এবং তাঁর সৎ ভাই মুহাম্মদ।
শিক্ষাজীবনঃ
বাল্যকাল থেকেই তিনি ইলম অর্জনে অগ্রণী ছিলেন।
ইসলাম সম্পর্কে তিনি যখন পড়াশোনা শুরু করলেন, তাঁর স্মৃতিশক্তি, প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও বোধশক্তি দেখে তাঁর শিক্ষকরা বিস্মিত হন। কথিত আছে যে, তিনি উনিশ বছর বয়সেই ফাতওয়া দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।
হাদিসশাস্ত্রে পারদর্শীদার দরুন তিনি বিশেষ প্রসিদ্ধি অর্জন করেন। হাদিসশাস্ত্রে ছিল তাঁর অগাধ জ্ঞান। কুরআন ও তাফসিরশাস্ত্রে তাঁর দক্ষতা সবাইকে মুগ্ধ করেছিল।
এছাড়া তিনি ফিকহ উসুলুল ফিকহ, গণিত, ইতিহাস, জ্যোতির্বিদ্যা এবং চিকিৎসাবিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। আরবি ব্যাকরণ শাস্ত্রে ইমাম সীবাওয়ায়হ-এর ‘আল-কিতাব’ অধ্যায়নকালে এর মধ্যে ৮০ স্থানে ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করেন। অথচ সে যুগে আল কিতাব ছিল সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য আরবি ব্যাকরণ গ্রন্থ।
তার সমসাময়িক অনেক আলেম সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি মুজতাহিদের মর্যাদা অর্জন করেছেন।
মাত্র বাইশ বছর বয়সে তাঁর তিনি অগাধ পাণ্ডিত্য অধিকারী হন।
কুরআন, হাদিস, ফিকহ ও উসুলের সাথে সাথে তিনি আরবী ভাষা ও সাহিত্যে পারদর্শিতা অর্জন করার প্রতিও বিশেষ নজর দেন। তিনি দুশোর বেশি উস্তাদের কাছ থেকে হাদিস শেখেন।
কুরআনের তাফসিরের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল সব চেয়ে বেশি। তিনি নিজেই বলেছেন, কুরআনের জ্ঞান আয়ত্ত করার জন্য তিনি ছোট বড় একশোরও বেশি তাফসীর গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। কুরআন অধ্যয়ন সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেনঃ
“কখনো কখনো একটি আয়াতের অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন করার জন্য আমি একশোটি তাফসীরও অধ্যয়ন করেছি।”
তাফসীর অধ্যয়ন করার পর আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, হে আল্লাহ, আমাকে এ আয়াতটির অর্থ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান দান করো। আমি বলতাম, হে আদম ও ইবরাহীমের শিক্ষক! আমাকে শিক্ষা দাও আমি বিরান এলাকা ও মসজিদে চলে যেতাম এবং মাটিতে কপাল রেখে বলতাম, হে ইবরাহীমের জ্ঞানদাতা! আমাকে জ্ঞান দাও।”
তিনি সর্বদা মুসলিমদের অবস্থা ও কল্যাণ নিয়ে চিন্তিত থাকতেন। তাতার, খ্রিষ্টান ও রাফিজাদের বিরুদ্ধে জিহাদে এর ব্যাপক বহিঃপ্রকাশ ঘটে। মুসলিমদের তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ে তাঁর সাহসিকতা, বীরত্ব ও জ্বালাময়ী বক্তৃতা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তাঁর প্রচেষ্টা অনেক আলিমদের প্রশংসা ও তারিফ পায়। আজ পর্যন্ত মুসলিমরা ইবনু তাইমিয়ার অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
ইবনু তাইমিয়া শারীরিক জিহাদের পাশাপাশি সমসাময়িক বিভিন্ন বিপথগামী সম্প্রদায় এবং ধর্মবিরোধী মতবাদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ শুরু করেছিলেন।
তিনি শিয়াদের এবং আহলুল কালামকে খণ্ডন করেছেন – যেমন জাহমিয়া, মুতাজিলা এবং আশআরিদের। এ ছাড়া তিনি বিপথগামী সুফি সম্প্রদায় এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদেরও রদ করেন। তাঁর সমালোচনাগুলো ছিল প্রখর জ্ঞানপূর্ণ। তিনি সবগুলো মতবাদ সম্পর্কে সুগভীর জ্ঞান অর্জন করেন। এরপর তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে সঠিকভাবে তাদের মতবাদের খণ্ডন করেন। উদাহরণস্বরূপ, বলা হয় যে গ্রিক দর্শনের যে খণ্ডন তিনি করেছিলেন তা ছিল গ্রিক দর্শনের প্রতি করা সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক আক্রমণগুলির মধ্যে একটি।
খ্রিস্টধর্মের খণ্ডনে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য। তাঁর শিয়াদের খণ্ডন তাদের বিশ্বাস ও অস্তিত্বকে মূল থেকে শাখা পর্যন্ত বিনাশ করে দেয়।
তাঁর শিক্ষকগণ
তিনি অনেক আলিমের অধীনে ইলম অর্জন করেছেন। তিনি নিজেই অনেকজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করেছেন। ইমাম জাহাবি রাহ. সরাসরি তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন।
এই তালিকায় রয়েছে ৪১ জন আলিম ও চারজন আলিমা। তিনি যাদের কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করেছিলেন সেসব আলিমের সংখ্যা ২০০-এর বেশী।
তাঁর কয়েকজন শিক্ষক হচ্ছে:
- আবুল আব্বাস আহমদ ইবনু আবদুল দাইম আল মাকদাসি
- আবু নাসর আবদুল আজিজ ইবনু আবদুল মুনিম
- আবু মুহাম্মদ ইসমাইল ইবনু ইবরাহিম আত-তানুখি
- আল-মানজা ইবনু উসমান আত-তানুখি আদ-দিমাশকি
- আবুল-আব্বাস আল-মুআম্মিল ইবনু মুহাম্মদ আল-বালিসি
- আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনু আবু বকর ইবনু সুলায়মান আল-আমিরি
- আবুল-ফারাজ আবদুর-রহমান ইবনু সুলায়মান আল-বাগদাদি
- শরফুদ্দিন আল-মাকদাসি
- আহমদ ইবনু আহমদ আশ-শাফিয়ি
- মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল কাওয়ি আল-মাকদাসি
- তাকিউদ্দিন আল-ওয়াসিতি
- ইবরাহিম ইবনু আলি আস-সালিহি আল-হাম্বলি
তাঁর ছাত্ররা
তাঁর অনেক ছাত্র ছিল। তাঁর দ্বারা প্রভাবিত ছাত্রদের সংখ্যাও অনেক। :
- ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যাহ
- মুহাম্মদ ইবনু আবু বকর
- আজ জাহাবি
- মুহাম্মদ ইবনু আহমদ
- আল মিজি
- ইউসুফ ইবনু আবদুর-রহমান
- ইবনু কাসির
- ইসমাইল ইবনু উমর রা.
- ইবনু আবদুল হাদি
- মুহাম্মদ ইবনু আহমাদ রহ.
- আল-বাজ্জার
- উমর ইবনু আলি রা.
- ইবনু কাদি আল-জাবাল
- আহমদ ইবনু হুসাইন
- ইবনু ফাদলিল্লাহ আল আমরি
- আহমদ ইবনু ইয়াহইয়া রাহ.
- মুহাম্মদ ইবনুল মানজ
- ইবনু উসমান আত-তানুখি
- ইউসুফ ইবনু আবদুল মাহমুদ ইবনু আবদুস-সালাম আল-বাত্তি
- ইবনুল ওয়ারদি
- জায়িদ আদ-দিন উমর
- উমর আল-হাররানি
- জাইনুদ্দিন আবু হাফস
- ইবনু মুফলিহ
- শামসুদ্দিন আবু আবদুল্লাহ
আলিমদের তাঁর প্রশংসা
আল-হাফিজ আল-মিজ্জি বলেন,
আমি তাঁর মতো কাউকে দেখিনি, তিনিও তাঁর মতো কাউকে দেখেননি। আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নাহ সম্পর্কে তাঁর চেয়ে অধিক জ্ঞানী কাউকে দেখিনি। অথবা এগুলোর অনুসরণেও তাঁর চেয়ে অগ্রসর কাউকে দেখিনি। [বাহজাতুল বাইতার, হায়াত শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া পৃ ২১]
আল হাফিজ ইবনু রজব আল-হাম্বলি বলেছেন,
“তিনি হলেন ইমাম, ফকিহ, মুজতাহিদ, হাদিসের পণ্ডিত, হাফিজ, কুরআনের তাফসিরকারক, দুনিয়াবিমুখ তাকিউদ্দিন আবুল-আব্বাস শায়খুল ইসলাম, জ্ঞানীদের মধ্যেও যিনি জ্ঞানী। আল্লাহ তাঁর ওপর রহম করুন। তাঁর নাম মুখে নিলেও তাঁর অতিরঞ্জন করা সম্ভব না। তিনি এতই বিখ্যাত যে তাকে নিয়ে বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন পড়ে না। তিনি তাঁর সময়ে কুরআন বোঝা এবং ইমানের বাস্তবতা সম্পর্কিত জ্ঞানের ক্ষেত্রে অনন্য ছিলেন…”
তাঁর প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী
প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা বলার জন্য শায়খুল ইসলাম বিখ্যাত ছিলেন। নিচে এরকম কিছু উক্তি তুলে ধরা হল:
- আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা প্রতিটি শাস্তিই ন্যায়বিচার, তাঁর পক্ষ থেকে প্রতিটি নিয়ামতই অনুগ্রহ। [মাজমু ফাতাওয়া ১০/৮৫]
- যে অনন্ত সুখ কামনা করে, সে যেন আল্লাহর দাসত্বকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাকে। [ইবনুল কাইয়িম, আল-মাদারিজ ১/৫৩১]
- রব ভালোবাসা পেতে ভালোবাসেন। [মাজমু ফাতাওয়া ১/৫৪]
- ইলম ব্যতীত হিদায়াত অর্জিত হয় না এবং ধৈর্য ব্যতীত সঠিক দিকনির্দেশনা অর্জিত হয় না। [প্রাগুক্ত ১০/৪০]
- এই দুনিয়াতেও এক জান্নাত আছে। যে এখানে প্রবেশ করেনি সে পরকালের জান্নাতেও প্রবেশ করবে না। [ইবনুল কাইয়িম, আল-ওয়াবিল পৃ ৬৯]
- সে ব্যক্তি [সত্যিকার] বন্দী যার অন্তর আল্লাহর কাছ থেকে বন্দী। মোহগ্রস্ত হল সেই ব্যক্তি যার কামনাবাসনা তাকে দাস বানিয়ে রেখেছে। [প্রাগুক্ত]
- ইসলাম ধর্ম আবর্তিত হয় সত্যকে জানা ও তা মানার মাধ্যমে। কাজ করতে হবে সবরের সাথে। [মাজমু ফাতাওয়া ১০/৩৮]
- বান্দা আল্লাহকে যত ভালোবাসবে, সে অন্যান্য জিনিসকে তত কাম ভালোবাসবে। তার ভালোবাসার জিনিসের সংখ্যাও কমবে। বান্দা তার প্রভুকে যত কম ভালোবাসবে, অন্যান্য জিনিসের প্রতি তার ভালোবাসা তত বৃদ্ধি পাবে। তার ভালোবাসার বস্তুও বৃদ্ধি পাবে। [মাজমু ফাতাওয়া ১/৯৪]
- তাওহিদের সাক্ষ্যদান কল্যাণের দরজা খুলে দেয় এবং পাপ থেকে তাওবা মন্দের দরজা বন্ধ করে দেয়। [প্রাগুক্ত ১০/২৫৬]
- নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ হল কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের ভিত্তি। [ইবনুল কাইয়িম, আর-রাওদাহ পৃ ৪৭৮]
- মানুষের হৃদয় রোগাক্রান্ত না হলে সে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করে না। [আল-বাজ্জার পৃ ৭৪]
- পরীক্ষা ও ফিতনা হলো গরম ও ঠান্ডার মতো। এগুলোকে এড়ানো যায় না, এগুলোর আগমনে রাগ করা যায় না, ব্যথিত বা হতাশও হওয়া যায় না। [ইবনুল কাইয়িম, আল-মাদারিজ ৩/২৮৯]
- তাওহিদের পরিপূর্ণতা তখনই পাওয়া যায় যখন অন্তরে আল্লাহ ছাড়া আর কিছুই থাকে না। আল্লাহ যাকে ভালোবাসে বান্দাও তাকে ভালোবাসে, আল্লাহ যাকে ঘৃণা করে বান্দাও তাকে ঘৃণা করে, আল্লাহর প্রতি যার শত্রুতা আছে বান্দাও তাকে শত্রুজ্ঞান করে, আল্লাহ যার আদেশ দিয়েছেন বান্দা তার আদেশ করে এবং আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন বান্দাও তা নিষেধ করে। [ইবনুল কাইয়িম, আল-মাদারিজ ৩/৪৮৫]
- এই দুনিয়ায় বান্দা আল্লাহর জিকিরে, হামদে ও তাঁর ইবাদত করে যে স্বাদ পায় তার সাথে কিছুর তুলনা হয়য় না। [মিনহাজুস সুন্নাহ ৫/৩৮৯]
- জুহদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বান্দা এমন জিনিস পরিত্যাগ করবে যা পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং ইবাদতের উদ্দেশ্য হবে এমন কাজ করা যা তার পরকালে কাজে আসবে। [মাজমু ফাতাওয়া ১৪/৪৫৮]
- পাপ হল শিকল ও তালার মত যা পাপীকে তাওহিদের বিশাল বাগানে ঘোরাফেরা করতে এবং নেককাজের ফল ভোগ করা থেকে বাধাগ্রস্ত করে। [প্রাগুক্ত ১৪/৪৯]
- গুনাহ সংঘটিত হওয়ার পর বান্দা তাওবা করলে, সেটা অসম্পূর্ণ হলেও তার গুনাহ মোচন করে দেয়। তাওবা আসলে বিষের প্রতিষেধকের মতো; বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেলেও বিষের প্রভাবকে যা রোধ করে দিতে পারে। বা, তাওবা হলো খাবার-পানীয় গ্রহণ করার মতো; যা ক্ষুধার্তের একমাত্র সমাধান। তাওবাকে আপনি হালাল উপভোগ্য বস্তুর সঙ্গে তুলনা করতে পারেন, যা মনকে হারাম বস্তুর চাহিদা থেকে বিরত রাখে, এবং যা পেলে মন থেকে সব হারামের খাহেশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। [রূহের চিকিৎসা। মাকতাবাতুল আসলাফ। ২০২১। পৃষ্ঠা ৩০৭।]
- সালাতের সাথে সম্পৃক্ত ৬টি জিনিস মুনাফিক্বের লক্ষণ, তা হলোঃ
১. সালাত আদায় করতে আলসেমি করা।
২. অন্যকে দেখানোর নিয়তে সালাত আদায় করা।
৩. সালাত আদায় করতে দেরি করা।
৪. তাড়াহুড়ো করে/দ্রুত সালাত আদায় করা।
৫. সালাতের মধ্যে খুব কমই আল্লাহকে স্মরণ করা।
৬. জামাআতে সালাত আদায় পরিত্যাগ করা। - অন্তরের প্রশস্ততার বৃদ্ধি হচ্ছে না, ঈমানের মিষ্টতা অনুভূত হচ্ছে না, হিদায়াতের নূর বাড়ছে না, যে ব্যক্তি নিজের মাঝে এগুলো দেখতে পায় সে যেন তাওবা-ইস্তিগফার বাড়িয়ে দেয়। [আল-ফাতাওয়া আল-কুব’র ৬২/৫]
- আমার শত্রুরা আমার কি করবে? আমার বুকেই আছে জান্নাত। আমি ভ্রমণ করলে সেগুলো আমার সাথেই ঘোরে, কখনো আমাকে ছেড়ে যায় না। কারাবাস আমার জন্য প্রভুর সাথে একা সময় কাটানোর সুযোগ। নিহত হওয়া মানে শাহাদাতবরণ। দেশ থেকে নির্বাসিত হওয়া একটি আধ্যাত্মিকতার পথে যাত্রা। [ইবনুল কাইয়িম, আল-ওয়াবিল পৃ ৬৯]
তাঁর মৃত্যু
ইবনু তাইমিয়া ৭২৮ হিজরির জিলকদ মাসের ২০ তারিখে বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এসময় তাঁর পড়া বা লেখাও নিষিদ্ধ ছিল। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
তাঁর সময়কার কিছু বিদআতিরা তাঁর ব্যাপারে অনেক মিথ্যা ও অপবাদ ছড়ানো সত্ত্বেও তাঁর জানাজায় অসংখ্য লোক অংশগ্রহণ করে।
আল বাজ্জার বলেন,
“মানুষেরা তাঁর মৃত্যুর কথা শোনার পর দামেশকে এমন একজন ব্যক্তিও ছিল না যে তাঁর জানাজায় অংশগ্রহণে সক্ষম থাকা সত্ত্বেও অংশ নিতে চায়নি। ফলস্বরূপ দামেশকের সকল বাজার বন্ধ হয়ে যায় এবং জীবিকার সকল লেনদেন থেকে যায়। গভর্নর, অফিসার, আলিম, ফকিহ সবাই বেরিয়ে আসে। তাদের মতে, সবাই ইবনু তাইমিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এসেছিল তিনজন ব্যক্তি ব্যতীত। ইবনু তাইমিয়ার প্রতি তাদের শত্রুতার জন্য তারা সুপরিচিত ছিল। তাই তারা প্রাণভয়ে লুকিয়ে থাকে।” [আল-বাজ্জার পৃ ৮২-৮৩]
ইবনু কাসির বলেন,
তাঁর জানাজার সামনে, পেছনে, ডানে ও বামে অসংখ্য মানুষ ছিল। আল্লাহ ছাড়া তার প্রকৃত সংখ্যা কেউই জানে না। এরপর কেউ চিৎকার করে বলে, “সুন্নাহর ইমামদের জানাজা এরকমই হয়!” তখন মানুষ কাঁদতে শুরু করে। জুহরের সালাতের আজান দেওয়া হলে মানুষ সাথে সাথে সালাত আদায় করে ফেলে। সালাত আদায়ের পর ভারপ্রাপ্ত খতিব বের হয়ে আসে। কারণ প্রধান খতিব তখন মিশরে ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত খতিব ইবনু তাইমিয়ার জানাজা পড়ান। সব জায়গা থেকে মানুষ চলে আসে। তারা আল-খাইল বাজারে জড়ো হয়। [ইবনু কাসির ১৪/১৩৮]
তাঁর কাজসমূহ
ইবনু তাইমিয়া একজন প্রসিদ্ধ লেখক ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বিস্তৃত পরিসরে তিনি অনেক রচনা লিখেছেন। তিনি শত শত খণ্ড লিখেছেন। সেগুলোর একটি বিশাল সংখ্যা হারিয়ে গেছে। তবুও অনেকগুলো লেখা এখনও পাওয়া যাচ্ছে এবং মুদ্রিত হচ্ছে। তার বেশ কিছু কাজ অনুবাদ করা হয়েছে। নিচে তাঁর কাজের একটি তালিকা দেওয়া হল।
- মাজমু ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়া [৩৭ খন্ড]
- ফাতাওয়া আল-কুবরা, পাঁচ খন্ড
- ফাতাওয়া আল-মিসরিয়াহ
- আল-জাওয়াবুস সহিহ লি মান বদদালা দিন আল-মাসিব, ছয় খন্ড
- মিনহাজুস-সুন্নাহ আন-নববিয়্যাহ, ছয় খন্ড
- দার তারুদ আল-আকল ওয়ান-নকল, ১২ খন্ড
- আস-সারিমুল-মাসলুল আলা শাতিমির-রাসুল, তিন খন্ড
- ইকতিদা আস-সিরাতুল মুসতাকিম লি মুখালাফাহ আসহাবুল জাহিম, দুই খন্ড
- আল-ইসতিকামাহ
- নাকদ মারাতিবুল ইজমা
- আর-রাদ্দ আলা আল-মানতিক্যিন
- আর-রাদ্দ আলা আল-আখনায়ি
- আর-রাদ্দ আলা আল-বাকরি
- আন-নুবুওয়াত
- কায়দাহ আদিমাহ ফিল-ফারক বায়েন ইবাদাহ আহলে ইসলাম ওয়াল-ইমান ওয়া ইবাদাহ আহলে আশ-শিরক ওয়ান-নিফাক
- আল-কাওয়াইদ আন-নুরানিয়াহ আল-ফিকহিয়াহ
- তাফসির ইবনুতাইমিয়া, আবদুর-রহমান উমায়রি কর্তৃক সংকলিত, সাত খণ্ড।
আল্লাহ তাঁর রূহকে রহমতের চাদরে ঢেকে দিন এবং জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন।