ছেলে মানুষ এতটা গাইরতহীন হয় কীভাবে! তাদের কি কোন দ্বায়িত্ববোধ নেই? প্রায়ই আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখতে পাই অনেক ছেলে মানুষরা তাদের মা,বোন, এমনকি স্ত্রীর ছবি আপলোড করে থাকেন। এই ছবি কত অজানা, অপরিচিত বেগানা লোকের দৃষ্টিতে বিশেষ করে কুদৃষ্টিতে পড়ছে। এটা করে আপনারা কি কখনও ভাবছেন , আপনারা কত বড় ক্ষতি করছেন?
ছেলে মানুষ এতটা গাইরতহীন হয় কীভাবে!তাদের কি কোন দ্বায়িত্ববোধ নেই?
ছেলে মানুষ এতটা গাইরতহীন হয় কীভাবে!তাদের কি কোন দ্বায়িত্ববোধ নেই? পুরুষরা হবে নারীদের সুরক্ষা প্রাচীরের মত। তারা হবে গাইরতওয়ালা,তারা তাদের স্ত্রী, মা-বোনদের মাহরাম থেকে হেফাজত করবে। তাদেরকে বেগানার কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আমরা আজ নিজেদের আত্মমর্যাদার মাথা খেয়ে বসে আছি। নিজেরাই ইচ্চাকৃত মা-বোন দের বিপদের মুখে ফেলে দিচ্ছি।
গাইরতহীনতা কি ?
গাইরতহীনতা কি ? আসলে আমরা বর্তমানে এমন বেহায়াপনা হয়ে গেছি যে,চোখের সামনে গাইরত নষ্ট হচ্ছে,তবুও আমাদের আত্বসম্মানে বাধছে না। আমরা অবলীলায় তা সহ্য করে যাচ্ছি বা মেনে নিচ্ছি। ছেলে মানুষ এতটা গাইরতহীন হয় কীভাবে!তাদের কি কোন দ্বায়িত্ববোধ নেই? অনেকেরই এই গাইরত সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে বুঝতেছি না আমরা কত বড় অন্যায় করছি বা কতটা কাপুরুষের পরিচয় দিচ্ছি। গাইরত হচ্ছে একপ্রকার চেতনা, এক প্রকার শক্তি, আত্বসম্মান,জবাবদিহিতা,বাধা দেওয়ার শক্তি। তাই যখন কারও মাঝে এর বিপরীত টা পাওয়া যায় তখন বুঝতে হবে সে গাইরতহীনতায় ভুগছে।
গাইরতহীনতা কি ? উদাহরণ হিসেবে গাইরতহীনতার ব্যাখ্যা দিলে বলতে হয়, আপনার স্ত্রী যখন আপনার সামনে কোন বেগানা পুরুষের সহিত এমনকি আপনার ছোট ভাইয়ের সহিত হাসি-ঠাট্টা, তামাশা,বেহায়াপনা করছে অথচ সেটা দেখে আপনার কোন অনুভূতি হচ্ছে না, আপনার মনে কোন ব্যথা বা গায়ে কোন জ্বালা লাগছে না তখন বুঝতে হবে আপনি একটা গাইরতবিহীন কাপুরুষ।
গাইরতহীনতা যে পুরুষরাই করে থাকে তা নয় এটা মহিলারাও করে থাকে। ছেলে মানুষ এতটা গাইরতহীন হয় কীভাবে! তাদের কি কোন দ্বায়িত্ববোধ নেই? যেমন, কোন স্ত্রীর সামনে তার স্বামী অন্য কোন নারীর সহিত মেলামেশা করছে, মাথা টিপে নিচ্ছে,গা টিপে নিচ্ছে,চুল তুলে নিচ্ছে, এমনকি গায়ে গা লাগাচ্ছে এসব দেখেও যে স্ত্রীর কোন কিছু মনে হচ্ছে না,খুব সিম্পল ব্যাপার মনে করে কোন বাধা দিচ্ছে না তখন মনে করতে হবে সে স্ত্রী গাইরতহীন একজন নারী। ইসলামে গাইরতহীন নারী-পুরুষের কোন জায়গা নেই।
কি কি কাজ করলে গাইরতহীনতা করা হয়?
কি কি কাজ করলে গাইরতহীনতা করা হয়? গাইরতহীনতা হচ্ছে এক প্রকার নোংরা মানষিকতা, যার ভিতরে কোন আত্বসম্মান নেই, কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করার চেতনা নেই, অগ্রাহ্যতা, হেফাজত হীনতার পরিচয় দেওয়া ইত্যাদি। ছেলে মানুষ এতটা গাইরতহীন হয় কীভাবে!তাদের কি কোন দ্বায়িত্ববোধ নেই? ইসলামে অহংকারী হতে নিষেধ করেছেন কিন্তু আত্বসম্মানবোধ হারানোর কথা বলা হয়নি। ইসলামে প্রত্যেক নারী-পুরুষের আত্বসম্মান থাকবে টইটুম্বুর।
চলুন দেখে নেওয়া যাক কি কি কাজ করে গাইরতহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন?
১। আপনার কোন সম্পদ নেই, কিন্তু আপনি নির্দিধায় অন্য সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন আপনার অসহায়ত্বের কথা। এতেই বোঝা যায় আপনার কোন লজ্জা বলতে কোন কিছু নেই। আপনার মধ্যে আত্বসম্মানবোধ বলতে কোন কিছু নেই। তখন নিশ্চয়ই আপনি একজন গাইরতহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন।
২। স্বামী , স্ত্রীর সামনে অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হলে স্ত্রী প্রতিক্রিয়া না জানালে, তেমনি স্ত্রী, স্বামীর সামনে পর পুরুষের প্রতি মহব্বত করা দেখেও যদি স্বামীর মনে ঘৃনা না জন্মানো এবং প্রতিহত ব্যাবস্থা গ্রহন না করলে তারা গাইরতহীনতার সামিল।
৩। ধরুন আপনি আপনার স্ত্রীকে বেপর্দা অবস্থায় মোটর বাইকে নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, আর তা দেখে অনেকের কুদৃষ্টিতে তাকিয়ে নানান কুরুচি পূর্ণ মন্তব্য করা এবং কারও কারও যৌনকল্পনার বিষয় হওয়া তাহলে নিশ্চয়ই আপনি গাইরতহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন।
৪। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার কিংবা আপনার বোন,স্ত্রী,মেয়ে যে কারও পেজ হতে তাদের ছবি আপলোড করে,তা দেখেও যদি আপনি নিষেধ না করে আরও উৎসাহ প্রদান করেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার গাইরত ঠিক নাই। কেননা, এই ছবি থেকে কেউ যৌন হয়রানির স্বীকার হতে পারে।
৫। কোন মেয়ে যদি কোন পাবলিক প্লেস এ অরুচিকর পোশাক পড়ে অন্য পুরুষের মন জোগানোর চেষ্টা করে তাহলে পিতা মাতা দু’জনেই গাইরতহীনতার জন্য দায়ী থাকবেন।
৬। কোন স্বামী যদি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য স্ত্রীকে পর পুরুষের সহিত লেলিয়ে দেয়, আর স্ত্রীর যদি সেটাতে সম্মতি থাকে তাহলে দু’জনেই গাইরতহীনতার সমান অংশীদার।
৭। আপনার হেফাজতে কোন মেয়ে থাকলে (যেমন,স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি অফিস ,আদালত ইত্যাদি) তাদের প্রতি যথাযথ দ্বায়িত্ব পালন না করে দায় সাড়া ভাবে গাইড দেন। তবে আপনার কারণে যদি তারা যৌনহয়রানির স্বীকার হয় অথবা যে কোন কারণে যদি তারা কারও দ্বাড়া বেইজ্জতি হন আর যদি আপনি চুপচাপ সহ্য করে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত বা শাস্তির ব্যবস্থা না করেন তাহলে আপনি গাইরতগীনতার জন্য দায়ী থাকবেন।
এরকম আরও অনেক কাজ আছে যেগুলোর কারণে আপনি গাইরতহীনতা করে যাচ্ছেন। ছেলে মানুষ এতটা গাইরতহীন হয় কীভাবে!তাদের কি কোন দ্বায়িত্ববোধ নেই? অর্থ্যাৎ যে সব কাজে আপনার আত্বসম্মান থাকা দরকার, সেসব ক্ষেত্রে আপনি আত্বসম্মানবোধ রক্ষা না করে বিবেকহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন তখনই বুঝতে হবে আপনি ঠিকমত আপনার গাইরত পালন করছেন না।
গাইরতহীনতার কুফল
গাইরতহীনতার কুফল , সমাজে বর্তমানে যে সকল অপকর্ম হচ্ছে তার ৯০ ভাগ এই গাইরতহীনতার কারণে ঘটিতেছে। কেননা,আপনারাই বিভিন্ন দিবসে আপনারই মা,বোন,স্ত্রীদের ছবি অনলাইনের দুনিয়ায় সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছেন, ঠিক কোন ভালবাসায় আপনার এমন কাজ করছেন ? ছেলে মানুষ এতটা গাইরতহীন হয় কীভাবে!তাদের কি কোন দ্বায়িত্ববোধ নেই? আপনাদের কি আত্বমর্যাদা বলতে কিছু নেই। এই গাইরত ঠিকমত পালন না করার জন্য আজ স্ত্রী, সন্তানেরা অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে। তারা নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। অথবা তারা অপকর্মের স্বীকার হচ্ছে। পরকিয়ার মত অপরাধের উৎপক্তি হয়েছে এই গাইরতহীনতা থেকেই।
এজনই আলি ইবনু আবী তালিব (রদিয়াল্লাহু আনহু) প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন—
‘তোমাদের কি লজ্জা নেই? গাইরত নেই? তোমরা নারীদেরকে পুরুষদের মাঝে ছেড়ে দিয়েছ। তারা পুরুষদেরকে দেখছে, পুরুষরাও তাদেরকে দেখছে!’ (কিতাবুল কাবাইর, ১৭১)
গাইরত পালনে আপনার কর্তব্য
কাবার সাহাবি সা’দ ইবনু উবাদা (রদিয়াল্লাহু আনহু) একজনকে বলছিলেন,
‘যদি আমি আমার স্ত্রীর সাথে (গাইর মাহরাম) কোনো পুরুষকে দেখি, তাহলে আমি তরবারি দিয়ে তার গর্দান ফেলে দেব।’
এই কথা রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কাছে পৌঁছলে তিনি সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে বলেন,
‘তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদা দেখে অবাক হচ্ছ? আল্লাহর শপথ! আমি সা’দের থেকেও বেশি আত্মমর্যাদাবান এবং আল্লাহ আমার থেকেও বেশি আত্মমর্যাদাবান।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৩৯৮)
তাই আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের মা, বোন বা স্ত্রীর ছবি আপলোড করবো না। তাদেরকে মানুষের কাছে উন্মুক্ত করার মধ্যে কোন ভালবাসা নেই। আছে নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা এবং দায়িত্বহীনতা। ছেলে মানুষ এতটা গাইরতহীন হয় কীভাবে!তাদের কি কোন দ্বায়িত্ববোধ নেই? কেননা,এমনও হতে পারে যে ছবিগুলো আপনি আপলোড করছেন, সেগুলো কেউ ব্যবহার করে কোনো পর্নো সাইটে আপলোড করেছে! হতে পারে না? তাই আসুন,সচেতন হই। নিজেরা আত্মমর্যাদাশীল হই। আমরা আমাদের মা, বোন এবং স্ত্রীর জন্য সুরক্ষা প্রাচীর হয়ে উঠি। তাদের লজ্জার কারণ যেন আমরা না হই। মহান আল্লাহ তা’য়ালা সবাইকে গাইরতহীনতা বোঝার তৌফিক দান করুক ।আমিন।।