সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় ২০২৩,কানাডা হচ্ছে উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে সুন্দর দেশ। দেশটির দশটি প্রদেশ এবং তিনটি অঞ্চল রয়েছে। এর তিন দিকে পৃথিবীর বড় বড় সমুদ্র। আটলান্টিক মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর এবং উত্তর আর্কটিক মহাসাগর। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ।
বছরের প্রায় ৮ মাস বরফে আচ্ছন্নে এই রাজ্যটি অপরুপ সৌন্দর্যের দেশ। তাই প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক ওই দেশে ছুটে আসেন। ভ্রমণ, শিক্ষা বা কাজের জন্য সেই স্বপ্নের দেশে যেতে চান অনেকেই। তাই আজকে জেনে নেওয়া যাক কানাডা যাওয়ার অফিসিয়াল উপায় এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় ২০২৩
সরকারি ভাবে কানাডায় যেতে হলে নির্দিষ্ট সার্কুলার অনুযায়ী আবেদনের প্রেক্ষিতে যেতে হবে। কানাডার বিভিন্ন কোম্পানী বাংলাদেশের কিছু এজেন্সীর মাধম্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। নিয়োগ কর্তা তাদের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত কাজের উপর আবদেনকারীর নির্দিষ্ট একটি এক্সপেরিয়েন্স এর দক্ষতা যাচাই করে। সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় ২০২৩, তাই উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে আপনারা আবেদন করে সরকারিভাবে কানাডায় যেতে হলে আপনাকে উল্লেখিত স্কিলের উপর দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে উর্ত্তীর্ণ হতে হবে। তারপর আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে কানাডা যেতে পারেন।
স্বপ্নের দেশ কানাডায় সরকারিভাবে যেতে হলে সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে কানাডা যাওয়ার প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে জানা অত্যাবশ্যক। সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় ২০২৩, তাই আমরা আজ কানাডা যাওয়ার অফিসিয়াল উপায়, কানাডার ভিসার ক্যাটাগরি, আবেদন ফর্ম পূরণের নিয়মাবলী, কানাডার ভিসার খরচ ও সময়, কানাডার ওয়ার্ক ভিসা,স্টুডেন্ট ভিসা এবং কানাডা ভিসা প্রসেসিং এজেন্সী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
কানাডা যাওয়ার সহজ উপায়
কানাডায় যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হল অনলাইনে কানাডিয়ান চাকরি খোঁজা বা সেই কোম্পানির মাধ্যমে যাওয়া। আপনি যদি একজন ভাল ছাত্র হন তবে আপনি সহজেই স্কলারশিপের মাধ্যমে কানাডা যেতে পারেন। আপনি চাইলে স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা এবং ট্যুরিস্ট ভিসা ইত্যাদি নিয়ে কানাডা যেতে পারেন।
কানাডায় যাওয়ার আরেকটি সহজ উপায় হল আপনি সহজেই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কানাডা যেতে পারেন। আপনি যদি আপনার কোম্পানির মাধ্যমে কানাডায় ব্যবসা করতে চান তবে আপনি কিছু শর্ত মেনে কানাডায় যেতে পারেন।
সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার নিয়ম
কানাডায় সরকারিভাবে যেতে হলে,আপনাকে IELTS করতে হবে এবং ন্যূনতম স্কোর ৬.৬ থাকতে হবে। ভ্রমণের জন্য কানাডা সরকারের একটি ইলেক্ট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন পেতে হবে। কাজের ভিসার জন্য আপনাকে একজন নিয়োগকর্তার কাছে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে এবং চাকরি পেতে হবে। তারপর আপনাকে কানাডা কর্মসংস্থান স্কিমে কানাডা ভিসার আবেদনপত্র পূরণ করে আবেদন করতে হবে।
চাকরি খোঁজার জন্য আপনি কানাডা সরকারের ওয়েবসাইট www.jobbank.gc.ca দেখতে পারেন। চাকরির আবেদনের জন্য আপনাকে কানাডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতার বিবরণ দিয়ে জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করতে হবে।
বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। সরকারি স্টাডি পারমিট সংগ্রহ করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়াও রয়েছে স্কলারশিপ।
কানাডা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর একটি। প্রতি বছর এদেশে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩ লাখ কর্মী নিয়োগ করা হয়। উন্নত মানব সমাজের একটি অংশই শ্রমিক হিসেবে অংশগ্রহণ করে।
কানাডা যাওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা
কানাডা যাওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কানাডা যেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপিাশি ILTS স্কোর ৭ থাকা প্রয়োজন। অন্যান্য দেশের তুলনায় কানাডা যেতে ILTS স্কোর বেশি প্রয়োজন। প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় কানাডায় প্রবেশের জন্য আরও স্কোর দরকার হতে পারে । ILTSA তে আপনার স্কোর ৫.৫ এর উপরে হলে আপনি বিভিন্ন দেশে যেতে পারেন। কিন্তু কানাডার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন স্কোর ৬। তারপরও আপনি অনেক সময় ৬ স্কোর দিয়ে যেতে পারবেন না। প্রতিযোগিতার উপর আপনার স্কোর ডিপেন্ড করবে।
কানাডা যাওয়ার অন্যান্য যোগ্যতা
কানাডা যাওয়ার অন্যান্য যোগ্যতা প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে চান তবে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি কাজের ভিসায় যেতে চান তবে আপনার কাজের দক্ষতা থাকতে হবে। আপনি যদি ব্যবসায় নামতে চান তবে আপনার এটি সম্পর্কে জ্ঞান এবং অর্থ থাকতে হবে। আপনি যে ক্যাটাগরিতে কানাডা ভ্রমণ করতে চান সেই অনুযায়ী ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে। তারপর আপনি কানাডা যেতে প্রক্রিয়াকরণ শুরু করতে পারেন।
কানাডা যাওয়ার আবেদন
কানাডা যাওয়ার আবেদন, আপনি নিকটস্থ দূতাবাসে গিয়ে কানাডায় যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন অথবা আপনি চাইলে অনলাইনেও আবেদন করতে পারেন। অনলাইনে আবেদন করার জন্য, আপনাকে সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন কানাডার ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে। আবেদন করতে বেশ কিছু নথির প্রয়োজন হয়। আবেদন করার আগে আপনাকে অবশ্যই নথি সংগ্রহ করতে হবে এবং তারপরে আবেদন করতে হবে।
কানাডা যাওয়ার এজেন্সি
কানাডা যাওয়ার এজেন্সি , কানাডায় যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি এজেন্সি রয়েছে, তবে আপনি যদি সরকারি মাধ্যমে যেতে চান তবে আপনি বিএমইটি বা বুয়েসেলের মাধ্যমে যেতে পারেন। বুয়েসেলের মাধ্যমে যেতে,আপনাকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট চাকরি আয়ত্ত করতে হবে এবং তাদের কর্মসংস্থান বিজ্ঞপ্তি অনুসারে কানাডায় চাকরির ভিসা পেতে পারেন। তাছাড়া, আপনি যদি অন্য এজেন্সির মাধ্যমে যেতে চান,তাহলে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে তাদের সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কোনো লাইসেন্স আছে কিনা এবং তারপর তাদের মাধ্যমে কানাডায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অন্যান্য সমস্ত এজেন্সি ফিডব্যাক এবং তারা বর্তমানে কানাডায় কীভাবে লোক পাঠাচ্ছে এবং তারা কানাডায় কী ধরণের চাকরি দিয়ে পাঠাচ্ছে তাও পরীক্ষা করে দেখুন।
কানাডা ভিসা প্রসেসিং এজেন্ট ইন বাংলাদেশ
কানাডায় যাওয়ার জন্য সঠিকভাবে ভিসা প্রসেসিং সুসম্পন্ন করার জন্য আপনাকে ভিসা প্রসেসিং এজেন্টদের নিকট যেতে হবে। বাংলাদেশে বেশকিছু ভিসা প্রসেসিং এজেন্সী কানাডার ভিসা প্রসেস করে থাকে। আপনাদের প্রয়োজনে এখানে কিছু ভিসা প্রসেসিং এসেজন্সীর লিংক দেওয়া হলো।
VFS Global : visa.vfsglobal.com/bgd/bn/can/
Airwaysbd : airwaysbd.com
Obokash : obokash.com
SA Associates : saavisa.com
এই ওয়েবসাইট গুলোর মাধ্যমে নির্ধারিত ফি প্রদান করে আপনি কানাডার ভিসা প্রসেসিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। এছাড়াও অনেক এজেন্সেী রয়েছে যারা কানাডার ভিসা প্রসেসিং করে। আপনারা কানাডিয়ান হাই কমিশন, বাংলাদেশ এ যোগাযোগ করে আপনার পছন্দের এজেন্সীর তথ্য নিয়ে তাদের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন।
কানাডা ভিসা সংক্রান্ত যেকোন তথ্যের জন্য নিম্ন ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন।
কানাডিয়ান হাই কমিশন, বাংলাদেশ
ঠিকানা: জাতিসংঘ সড়ক, বারিধারা, ঢাকা -১২১২, বাংলাদেশ।
ইমেইল এড্রেস: dhaka@international.gc.ca
ওয়েবসাইট এড্রেস: www.international.gc.ca/country-pays/bangladesh/index.aspx
অফিস এর সময় সোমবার থেকে রবিবার: 08: 00 – 12: 30 (ওয়াক- ইন)
কানাডার ভিসা ক্যাটাগরি
কানাডার ভিসা ক্যাটাগরি, কানাডা একটি স্বল্প জনবহুল দেশ। দেশটির প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ অভিবাসী। আর মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ দেশের প্রাথমিক নাগরিক। অভিবাসীদের দেশ হিসেবে পরিচিত এই দেশে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন ভিসায় প্রবেশ করা যায়। কানাডার ভিসা ক্যাটাগরি, পরবর্তীতে অভিবাসী হওয়ার সুযোগ আছে। কানাডা ভিসা আবেদন ফর্ম 2023 এর বিভিন্ন ভিসার ক্যাটাগরি রয়েছে। কানাডা সরকার প্রাথমিকভাবে যে ভিসাগুলি ইস্যু করে তা হল:
১. অস্থায়ী ভিসাঃ
ক) ভ্রমন ভিসা;
খ) স্টুডেন্ট ভিসা/শিক্ষার্থী ভিসা;
গ) কর্ম ভিসা/ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা।
২. স্থায়ী ভিসাঃ
ক) স্থায়ী বসবাসের ভিসা;
খ) ব্যবসায় অভিবাসী ভিসা;
গ) এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম।
কানাডা ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
অফিসিয়ালি বা যেকোনো এজেন্টের মাধ্যমে কানাডায় ভিসার আবেদন করার পর কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভিসা প্রসেসিং শুরু করতে হয়। কানাডার ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিগুলি হলঃ
১. পাসপোর্ট,
২. কাজের অভিজ্ঞতা সহ পেশাদার যোগ্যতার প্রমাণ,
৩. কানাডিয়ান কনস্যুলেট থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি,
৪. ভিসার ফি প্রদানের প্রমান,
৫. আবেদনকৃত কানাডা ভিসা আবেদন ফরমের কপি,
৬. ভিসার মেয়াদ শেষ হলে ফিরে আশার প্রতিশ্রুতিপত্র,
৭. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স,
৮. নিবন্ধিত হাসপাতাল থেকে মেডিকেল রিপোর্ট,
৯. আর্থিক উৎসের প্রমান দিতে হবে। এবং ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হবে ১০ লক্ষ টাকা দেখাতে হবে,
১০.নাগরিক অবস্থার নথিপত্র হিসেবে জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করতে হবে।
উক্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো আপনার পছন্দের কানাডিয়ান ভিসা এজেন্সীর নিকট জমা দিয়ে ভিসা প্রসেসিং শুরু করতে হবে। কানাডা ভিসা আবেদন ফর্ম ২০২৩ আবেদন পূরণ করার পরে, ভিসা প্রক্রিয়াকরণে প্রায় ৭২ঘন্টা সময় লাগতে পারে। তবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ভিসা পেতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
কানাডা যাওয়ার খরচ
অনেকেই কানাডা যেতে আগ্রহী। তাই তারা কানাডা যাওয়ার খরচ সম্পর্কে জানতে চান। আসুন জেনে নিই কানাডায় যেতে কত খরচ হয় সে সম্পর্কে কিছু তথ্য।
১. ওয়ার্ক পারমিট : ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা,
২. টুরিস্ট : ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা,
৩. স্টুডেন্ট : ৫ থেকে ৮ লক্ষ টাকা,
৪. কৃষি : ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা,
৫. বিজনেস ভিসা : ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা,
৬. লেবার ভিসা : ৭ থেকে ১২ লক্ষ টাকা প্রায়।
সাধারনতঃ কানাডায় যাওয়ার জন্য উল্লেখিত পরিমান খরচ হয়ে থাকে। তবে বিগত সময়ের ভিসার উপর ভিত্তি করে আমরা অনুমান করে উক্ত খরচের পরিমান উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং আপনার ক্ষেত্রে কিছু কম বা বেশি হতে পারে।
পরিশেষে
আপনি যদি সরকারিভাবে কানাডায় যেতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই একজন শ্রমিক বা কৃষি কর্মী বা হোটেল কর্মী,ফ্যাশন ডিজাইনার ইত্যাদি হিসাবে ভিসার মাধ্যমে কানাডা যেতে সক্ষম হতে হবে। আপনি অনলাইনে কানাডিয়ান চাকরির ব্যবস্থা করে খুব সহজেই কানাডা যেতে পারেন। আপনি যদি ভালো ছাত্র হন তাহলে স্কলারশিপের মাধ্যমে কম খরচে কানাডা যেতে পারেন। আর স্কলারশিপ দিয়ে গেলে নানা প্রকার সুযোগ রয়েছে। এটি সরকারীভাবে ব্যবস্থা করা হয়।