মাসখানেক আগে বন্ধু মাসুদ রানার (২৮) কাছ থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা ধার নিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান (২৯)। ওই টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাসুদ দিনাজপুর সদর উপজেলার তাঁতিপাড়া এলাকার একটি পুকুরপাড়ে জিয়াউরকে ডেকে নেন। সেখানে উভয়ের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জিয়াউরের ঘাড়ে বাটাল দিয়ে কোপ মারেন মাসুদ। মৃত্যু নিশ্চিতের পর লাশ খড়ের গাদায় ঢেকে রেখে পালিয়ে যান মাসুদ।
দিনাজপুরে তরুণ জিয়াউর রহমানের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তাঁর বন্ধু মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানান দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ। রোববার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। পুলিশের দাবি, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাসুদ রানা দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মমিনুল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিন্নাহ আল মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেপ্তার মাসুদ রানা সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের শিকদারহাট চাউলিয়াপাড়া গ্রামের জুয়েল কসাইয়ের ছেলে। নিহত জিয়াউর একই ইউনিয়নের হরিহরপুর গ্রামের সাহাজউদ্দিনের ছেলে। তিনি একটি কীটনাশক কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া এলাকায় খড়ের গাদা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় জিয়াউর ও মাসুদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কয়েক দিন আগে মাসুদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা ধার নেন জিয়াউর। টাকা পরিশোধ করা নিয়ে কয়েক দিন ধরে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জিয়াউরকে তাঁতিপাড়া এলাকার একটি পুকুরপাড়ে ডেকে নেন মাসুদ। সেখানে তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বাটাল দিয়ে জিয়াউরের ঘাড়ে কোপ মারেন মাসুদ। মৃত্যু নিশ্চিত হলে খড়ের গাদার নিচে লাশ ফেলে দিয়ে চলে যান।
পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বাটাল ও নিহতের মুঠোফোন পাশের পুকুরপাড়ে ফেলে যান মাসুদ। স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহত জিয়াউরের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে মুঠোফোনের সূত্র ধরে পুলিশ মাসুদ রানাকে গতকাল শনিবার রাতে নিজ বাসা থেকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতেই নিহতের ভাই দুজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর অভিযান চালিয়ে প্রথমে শাহিনুর রহমান (২৫) ও পরে মাসুদ রানাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ রানা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। আজ বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।