রমাদানের বরকত হাসিল করার চারটি সহজ উপায়।
কেমন হয় যদি আপনার এই রমাদানের সময়, খাবার, আমল, ঘুম সবকিছু বরকতময় হয়? এই জন্য আপনাকে শুধু চারটি পদক্ষেপ নিতে হবে।
১ নাম্বার পদক্ষেপ হচ্ছে – বেশি বেশি দুআ করা। দুআ হচ্ছে মুমিনের হাতিয়ার। আল্লাহ তাআ’লা সূরা মুমিনের ৬০ নাম্বার আয়াতে বলেছেন- তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। অতএব আমরা এখন থেকেই নিজ ভাষায় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি বলতে পারি- হে আল্লাহ আমাকে রমাদানের বরকত দান করুন! রমাদানের বরকত হাসিল করার তৌফিক দিন। আমাকে রমাদানের জন্য কবুল করুন।
২ নাম্বার টিপস হচ্ছে – যে করেই হোক আমাকে একজন মর্নিং পার্সোন হতে হবে। আপনি কী জানেন সকালবেলার সময়টুকুতে নেওয়া আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপেই হচ্ছে আমার পুরো দিনটি কিভাবে কাটবে তার আয়নাস্বরুপ! কেননা আল্লাহ তাআ’লা এই সময় বান্দার রিযিক বন্টন করে।
ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুল (সা.) আমার ঘরে এসে আমাকে ভোরবেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলেন, তখন আমাকে পা দিয়ে নাড়া দিলেন এবং বলেন, মা, ওঠো! তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ করো! অলসদের দলভুক্ত হয়ো না। কেননা আল্লাহ তাআলা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের মাঝে রিজিক বণ্টন করে থাকেন।
রিযিক বলতে আমরা কী বুঝি? রিযিক বলতে শুধু খাবার কিংবা অর্থ বা ভরনপোষণকেই বোঝায় না। রিযিক বলতে আপনাকে দেওয়া আল্লাহর নিয়ামত ২৪ ঘন্টার সময়টা কিভাবে কাটবে,কিংবা আপনি কতটুকু আমল করবেন, কতোটুকু আজকের দিনে কিছু অর্জন করতে পারবেন সবকিছু এই রিযিকের অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে দেখবেন আমাদের সবার হাতে ২৪ ঘন্টা সময় থাকলে ও সবার সময়ের নিজস্ব ঘড়ি এক হয়না। কেউ কেউ এই সামান্য সময়ে এতোকিছু অর্জন করতে পারে যা আবার অন্য কেউ পারে না। এর কারণ রিযিক এবং বারাকাহ! আল্লাহ মূলত রিযিকটা বন্টন করেন শেষ রাত্রি থেকে সূর্যদয় পর্যন্ত।৷ তাই আমাদের উচিত অন্তত ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে উঠা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ভোরবেলার কাজের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন। সখর গামেদি (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এ দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।’ এ জন্যই রাসুল (সা.) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। বর্ণনাকারী বলেন, সখর (রা.)-ও তাঁর ব্যবসায়ী কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন, এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয় এবং সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬০৬)
রাসূল সাঃ এর দুআ কতো বরকতময় আমরা যদি খেয়াল করি তাহলে দেখবো যারা দুনিয়াবি সফলতা অর্জন করেছেন তাদের এই সফলতার পিছনের গল্পটা ভোরবেলা জেগে থাকা থেকে শুরু হয়। বড়ো বড়ো ব্যবসায়ি, প্রধানমন্ত্রী, কিংবা সেলিব্রিটিদের ভিতর যেনো এক প্রতিযোগীতা চলে সকালে কে কতো তাড়াতাড়ি উঠতে পারে! কারণ সে ততোই সফল হবে। এদের কেউ কেউ ভোর তিনটায় উঠে, কেউ আবার ৪ টায় কেউবা ৫ টায়। গবেষণায় জানা গিয়েছে সকালের ঘুমের সময়কে আমরা যদি কাজে লাগায় তাহলে আমরা ১ বছরের সমপরিমাণ সময় অতিরিক্ত পাবো। আর আপনি যদি সকালে উঠার ক্ষেত্রে জিততে না পারেন তবে কোনো কিছুতেই জিততে পারবেন না। কারণ এই সামান্য ছোট অভ্যাসেই যদি আপনি বদলাতে না পারেন তবে জান্নাতের জন্য এর চেয়ে বড়ো কিছু ত্যাগ করা কিভাবে আপনার পক্ষে সম্ভব হবে? রমাদানে অবশ্যই অবশ্যই সেহেরির পর থেকে অন্তত সূর্যদয় পর্যন্ত আপনাকে জেগে থাকতে হবে। এই লম্বা সময় জেগে থাকাটা তখনি আপনার পক্ষে সম্ভব হবে যখন আপনি এটাকে আগেই আয়ত্ত করতে পারবেন।
তবে বেশি বারাকাহ হাসিল করতে চাইলে অন্তত সকাল ৯ টা পর্যন্ত জেগে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এবং গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত আমল, রমাদানের যে গোলগুলো অর্জন করবেন তাঁর জন্য কাজে নেমে পড়তে হবে।
৩ নাম্বার টিপস হচ্ছে — রমাদানের জন্য লক্ষ্য নির্ধারন করা। আপনি এই রমাদানে কোন লক্ষ্য টা অর্জন করতে চান? কোন ইবাদতটা বেশি করতে চান? কোন অভ্যাসটা ত্যাগ করতে চান? কোন ভালো কাজটা অভ্যাসে পরিণত করতে চান? কোন দুআ গুলো করতে চান? সব লিখে ফেলা। তারপর রুটিন অনুযায়ী রমাদানের প্রতিটি মিনিটকে ও কাজে লাগানোর চেষ্টা করা।কতোটুকু ঘুমাবেন? কতোটুকু কুরআনকে সময় দিবেন এই সবকিছু ও লিখে ফেলতে হবে।
৪ নাম্বার ও সর্বশেষ টিপস হচ্ছে – আপনি যতোই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেন না কেন – অন্তত এই ৩০ দিন সবথেকে বেশি সময় নষ্ট হয় এমন অ্যাপগুলো ডিলিট করে দেওয়া৷ হতে পারে সেটা ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদি।
কোনো কাজ থাকলে ব্রাউজার দিয়ে করবেন। কিন্তু কোনোভাবেই ফেসবুক অ্যাপটা রাখা যাবে না৷
আশাকরি এই ৪ টা টিপস আমাদের জন্য অবশ্যই কার্যকর হবে।
Writer- Asma