❝প্রমাণ সহকারে হিজাবের বিধান❞-২

৩। পোশাককে কতটা ঢিলে হতে হবে?

পোশাক এমন হবে না যে পরিধান করলে নারীর দেহের আকার আকৃতি বুঝা যাবে। নিম্নোক্ত হাদীসই এই বিধানের প্রমাণঃ

উসামাহ ইবনে যায়িদ رضي الله عنه বলেন,
“রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে মোটা একটি মিশরীয় কাপড় উপহার দিয়েছিলেন যা তিনি দাহিয়ান আল কালবী হতে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। এবং অতঃপর আমি সেই কাপড়টি আমার স্ত্রীকে দিয়েছিলাম। সুতরাং নবী ﷺ আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি মিশরীয় কাপড়টি পরোনি কেন?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘আমি কাপড়টি আমার স্ত্রীকে দিয়েছি।’ নবী ﷺ তারপর বললেন, “তাকে বলো কাপড়টির নিচে একটি মোটা পোশাক পরিধান করতে কারণ আমার ভয় হয় যে (তেমনটি না করলে) তার হাত-পায়ের আকার প্রকাশিত হয়ে যেতে পারে।”
[আহমাদ, বায়হাকী ও হাকীম কর্তৃক বর্ণিত]

৪। পোশাকের রঙ ও আকৃতি কীরূপ হবে?

আল্লাহ ﷻ মুমিন নারীদের আদেশ করেছেনঃ
“এবং তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে; প্রাচীন জাহেলী যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবেনা। তোমরা সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত থাকবে; হে নাবীর পরিবার! আল্লাহ শুধু চান তোমাদের হতে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে”
[আহযাবঃ ৩৩]

আল্লাহ ﷻ মুমিন নারীদের স্বাভাবিক ও অর্জিত উভয় সৌন্দর্যই প্রদর্শনে নিষেধ করেছেন। একটি পোশাক এমন হতে পারে যা তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং মানুষের মনোযোগ তার দিকে আকর্ষিত করে। সুতরাং, পোশাকটি উজ্জ্বল রঙের হতে পারবে না, সপ্রতিভ নকশার থাকতে পারবে না বা চকচকে উপাদানের তৈরি হতে পারবে না। উপরে تبرج শব্দটি দ্বারা নিজেকে প্রদর্শন করা এবং প্রকাশ্যে নিজেকে আকর্ষণীয় করা উভয়টিই বুঝানো হয়েছে।

ইমাম আয-যাহাবী رحمه الله কিতাব আল কাবা’ইর (কবীরা গুনাহের বই) এ বলেন,
“যেসকল গুনাহের জন্য একজন নারীকে অভিশপ্ত করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রকাশ্যে বের হওয়ার সময় সজ্জাকরণ, সুগন্ধি ব্যবহার ও রঙিন পোশাক পরিধান।”
সুতরাং মুসলিম নারীদের উচিত রঙহীন, মলিন পোশাক পরিধান এবং তাদের জন্য উজ্জ্বল ডিজাইন, প্যাটার্ন ও রঙের পোশাক পরিহার করা বাধ্যতামূলক।

৫। পোশাকটি কি পুরুষদের কাপড় হতে ভিন্ন হওয়া উচিত?

মুসলিম নারীদের পোশাক কোনোভাবেই পুরুষদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। নিম্নেই এটির প্রমাণ দেওয়া হলঃ

আবু হুরাইরাহ (رضي الله عنه) বলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ যে পুরুষ নারীদের পোশাক পরিধান করে এবং যে নারী পুরুষদের পোশাক পরিধান করে উভয়কেই অভিশাপ দিয়েছেন।
[আবু দাউদ এবং ইবনে মাজাহ – সহীহ হাদীস]

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (رضي الله عنه) বলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছেন,
“যে পুরুষ নারীদের অনুরূপ এবং যে নারী পুরুষদের অনুরূপ সে আমাদের (মুমিনদের) অন্তর্ভুক্ত নয়।”
[আহমাদ এবং তাবারানী – সহীহ হাদীস]

৬। আমাদের পোশাক কি কাফিরদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারে?

মুসলিম নারীদের পোশাক কোনোভাবেই কাফিরদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। এটি আল্লাহর শরীয়তের একটি সাধারণ নিয়ম যা কেবল পোশাকই নয় বরং আচার-আচরণ, রীতি-নীতি, ধর্মীয় কার্যকলাপ, উৎসব এবং লেনদেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কাফিরদের সাথে বিচ্যুতি সৃষ্টি করা একটি মানদণ্ড যা ইসলামের প্রথম প্রজন্ম প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। নিম্নোক্ত হাদীসগুলোই এই অবস্থানের দলীলঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (رضي الله عنه) বলেন,
“রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা আমাকে জাফরান রঙের পোশাক পরিধান করতে দেখলে বলেন, নিশ্চয়ই এগুলো কাফিরদের পোশাক সুতরাং এগুলো পরবে না।”
[সহীহ মুসলিম]

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (رضي الله عنه) বলেন,
“রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে কেউ কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্গত।”
[আবু দাউদ]

আবু মূসা আল আশআরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, উমার (رضي الله عنه) তাঁকে বলেন,
“আমি তাদের সম্মান করব না যাদের আল্লাহ অসম্মানিত করেছেন। বা তাদের শ্রদ্ধা করব না যাদের তিনি নিচ করেছেন। বা তাদের কাছে টানব না যাদের তিনি দূরে সরিয়ে দিয়েছেন।”
[আহমাদ]

৭। আমরা কি পোশাকে অত্যাধিক খরচ করতে পারি?
মুসলিম নারীদের পোশাক কোনোভাবেই আত্মগর্বের অভিব্যক্তি বা পদমর্যাদার প্রতীক হবে না। আবার বিনীত হবার জন্য প্রশংসা বা খ্যাতি অর্জনের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত জীর্ণ-শীর্ণ পোশাকও মুসলিম নারী পরিধান করবে না।

ইবনু উমার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
“যে কেউ এই দুনিয়ায় অহংকারের উদ্দেশ্যে নিজেকে সজ্জিত করবে, আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে পুনরুত্থানের দিন লাঞ্ছনার পোশাক পরিধান করাবেন এবং অতঃপর সেটায় আগুন ধরিয়ে দিবেন।”
[আবু দাউদ]

– শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল হাফিজাহুল্লাহ

Leave a Comment