বঙ্গোপসাগরে একটি মাছ ধরার ট্রলারে হামলা চালিয়ে অন্তত ১৮ লাখ টাকার জাল, জ্বালানি ও অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে সশস্ত্র জলদস্যুরা। গতকাল শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরের সোনার চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জলদস্যুদের হামলার সময় ভীত হয়ে সাগরে ঝাঁপ দেন ৯ জেলে। শনিবার রাতেও তাঁদের সন্ধান মেলেনি।
ট্রলারে থাকা বাকি ৯ জেলেকে আহত অবস্থায় অন্য একটি ট্রলারে উদ্ধার করে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বরগুনার পাথরঘাটা আনা হয়। তাঁদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নিখোঁজ ও আহত জেলেদের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের চরগাছিয়া এলাকায়। ওই এলাকার ‘এফবি ভাই ভাই’ নামের একটি ট্রলারে করে তাঁরা মাছ ধরতে সাগরে গিয়েছিলেন। বরগুনা জেলা ট্রলার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি ইমরুল কায়েস এ তথ্য নিশ্চিত করেন
নিখোঁজ জেলেরা হলেন কাইউম (৩৫), ইয়াসিন জোমাদ্দার (৩৮), খাইরুল ইসলাম (২৮), শফিকুর রহমান ওরফে শফিক (৪০), কালাম মিয়া (৬০), আবদুল আলীম (২৮), ফরিদ হোসেন (২৬), আবদুল হাই (৪০)। অন্য একজনের পরিচয় জানা যায়নি।
জেলেদের স্বজন ও ট্রলার মালিক সমিতির নেতারা জানান, গত শুক্রবার দুপুরে পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্য বন্দর থেকে বরফ, জ্বালানি ও বাজার-সদাই নিয়ে বঙ্গোপসাগরে গভীরে মাছ ধরতে রওনা দেন ১৮ জেলে। তাঁদের ট্রলারটি কুয়াকাটা থেকে ২০০ কিলোমিটার গভীরে সাগরে যাওয়ার পর রাত দেড়টার দিকে অন্য একটি ট্রলার নিয়ে জলদস্যুরা অতর্কিতে হামলা করে। এ সময় দস্যুরা ট্রলারের সব জেলেকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে দস্যুরা। তখন আতঙ্কে ৯ জেলে সাগরে ঝাঁপ দেন। ডাকাতেরা ট্রলারে লুটপাটের পর ইঞ্জিনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেলে ট্রলারটি সাগরে ভাসতে থাকে। শনিবার সকালে অন্য একটি ট্রলারের সাহায্যে আহত জেলেরা তীরে ফিরে আসেন। ডাকাতেরা ১৭–১৮ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে বলে তাঁরা জানান।
উদ্ধার হওয়া জেলে মিরাজ হোসেন বলেন, ‘রাত দেড়টার দিকে বঙ্গোপসাগরের গভীরে সোনার চর এলাকায় আমাদের ট্রলারে হামলা করে ডাকাতেরা। তারা আমাদের বেধড়ক পেটাতে থাকে এবং একপর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় ট্রলারে থাকা জেলেদের মধ্যে ৯ জন সাগরে ঝাঁপ দেন। ওই ৯ জেলেকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজ (শনিবার) অন্য একটি ট্রলার গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।’
‘এফবি ভাই ভাই’ ট্রলারের মালিকের ছেলে মো. মিরাজ বলেন, ঘটনার পর তাঁরা বিষয়টি কোস্টগার্ডকে জানিয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের রাতে পাথরঘাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশনের কমান্ডার লে. শাফায়েত আবরার সন্ধ্যায় বলেন, ডাকাতির ঘটনাটি তাঁদের এলাকায় নয়। এটি কলাপাড়া উপজেলার নিজামপুর কোস্টগার্ড স্টেশনের আওতায়। নিজামপুর কোস্টগার্ড স্টেশনের কন্টিজেন্টাল কমান্ডার রাজিউল হাসান বলেন, ‘ডাকাতির ঘটনায় জেলে নিখোঁজের বিষয়টি জেনেছি। আমরা নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছি।’