কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ!
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহঃ) অনেকগুলো বিষয় উল্লেখ করেছেন যা অবলম্বন করলে আল্লাহর রহমতে যে কোন ব্যক্তি কুপ্রবৃত্তির ছোবল থেকে মুক্তি পাবে। তিনি বলেছেন, ‘যদি প্রশ্ন তোলা হয় যে কুপ্রবৃত্তির মাঝে ডুবে আছে সে কীভাবে তা থেকে মুক্তি পেতে পারে? উত্তরে বলা যায়, আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তায় নিম্নের কাজগুলো তাকে মুক্তি দিতে পারে।
কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বাঁচতে ইবনুল কাইয়ুম রহঃ এর বর্ণিত উপায় সমূহ :
১. কুপ্রবৃত্তি বা খেয়াল-খুশীর অনুসরণ না করতে মন থেকে পাকাপোক্ত সংকল্প করা।
২. ধৈর্য-সহিষ্ণুতা অবলম্বন করা। যখন মনের মধ্যে প্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, তখনই ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। ধৈর্য হারানো চলবে না।
৩. যাতে এক্ষেত্রে ধৈর্য অবলম্বন করা যায় সেজন্য মানসিক শক্তি বাড়াতে হবে। বলবীর্যতা তো আসলে সময়মত ধৈর্যের সাথে টিকে থাকার নাম। আর বান্দা ধৈর্যের মাধ্যমে যে জীবন-জীবিকা লাভ করে তাই উত্তম।
৪. কামনা-বাসনার অনুসরণ না করলে ভবিষ্যতে যে শুভ পরিণতি অপেক্ষা করছে তা ভেবে দেখা এবং ধৈর্যের দাওয়া দ্বারা আরোগ্য লাভ করা।
৫. প্রবৃত্তির আনুগত্য করলে তাৎক্ষণিক স্বাদ হয়তো মিলবে। কিন্তু সেজন্য কী পরিমাণ খেসারত ও যন্ত্রণা পোহাতে হবে তা লক্ষ্য করা।
৬. আল্লাহ তা’আলার নিকট তার অবস্থান আর মানুষের মনে তার যে জায়গা আছে তা বহাল রাখতে সচেষ্ট হওয়া। খেয়াল-খুশীমত চলা থেকে এটা তার জন্য অনেক উত্তম ও উপকারী।
৭. পাপের স্বাদ থেকে চারিত্রিক নিষ্কলুষতা ও পাপ থেকে দূরে থাকার স্বাদকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
৮. সে যে তার প্রবৃত্তি নামক শত্রুকে পরাস্ত ও তাকে পদানত করতে পেরেছে সেজন্য আনন্দিত হওয়া। এজন্যও আনন্দিত হওয়া যে তার শত্রু নিজের ব্যর্থতার জন্য ক্রোধ ও দুঃখ-বেদনায় জর্জরিত হয়ে ফিরে গেছে। তার থেকে সে তার আশা পূরণ করতে পারেনি। আল্লাহ তা’আলাও চান বান্দা যেন তার শত্রুকে ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত করার মত আমল করে।
৯. প্রবৃত্তির বিরোধিতা করলে দুনিয়াতেও সম্মান মিলবে, আখিরাতেও সম্মান মিলবে, প্রকাশ্যেও ইযযত লাভ হবে, গোপনেও ইযযত লাভ হবে। পক্ষান্তরে প্রবৃত্তির অনুসরণ করলে সর্বত্রই ধ্বংস ডেকে আনবে, প্রকাশ্যেও সে অপদস্থ হবে অপ্রকাশ্যেও অপদস্থ হবে। এসব কথা মনে করে এবং জেনে বুঝে সকলকে প্রবৃত্তির অনুসরণ না করে বরং বিরোধিতায় সচেষ্ট হ’তে হবে।
[ রাওযাতুল মুহিব্বীন পৃষ্ঠা ৪৭১-৪৭২ ]