অভাবের মুখে চিকিৎসক হয়ে ওঠার নিক্কন রায়ের স্বপ্ন এখনও রয়ে গেছে। নিক্কন রায় অদম্য মেধার সাথে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
তবে বাবা ভ্যান চালক, মা দিনমজুর। পরিবারের অভাব হ’ল নিত্যসঙ্গী। দুই ভাই সহ চারজন মানুষের পরিবার। বাবার পক্ষে নিজে পরিবার পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই মেধা তালিকায় মেধাবী শিক্ষার্থী হয়েও মেডিকেল স্কুলে ভর্তি হওয়া নিয়ে চিন্তিত নিক্কন রায়।
দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের ২ নম্বর সুন্দরবন গ্রামের দরিদ্র ভ্যান চালক খানিজ চন্দ্র রায়ের ছেলে নিককান রায়। নিকন জিপিএ -৫ দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নকে উপলব্ধি করতে তিনি ব্যক্তিগত অনুদানের সহায়তায় কয়েক মাস ব্যক্তিগতভাবে পড়াশোনা করেছিলেন এবং কোচিং করেছিলেন। দিনাজপুর সরকারী মহিলা কলেজের একটি মেডিকেল পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল। তিনি স্বপ্নের বুক দিয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে ফলাফল জানতে পেরে আনন্দিত হন নিক্কন। রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ একটি সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু সেই সুখ পাওয়ার পরেও তাঁর মুখে উদ্বেগের ছাপ দেখা গেল না। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় তাঁর স্থান থাকলেও দারিদ্র্যের বাধা পেরিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলস্বরূপ, স্বপ্নটি ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
নিক্কান রায়ের বাবা খানিজ চন্দ্র রায় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। তার দৈনিক আয় মাত্র ২০০-৩০০ টাকা। নিক্কনেন বাবা খানিজ চন্দ্র রায় বলেছিলেন, “আমার ছেলে মেডিক্যাল পড়ার সুযোগ পেয়েছে বলে আমি আনন্দিত।” তবে আমার পরিবার আর্থিকভাবে নিঃস্ব। আমি খুব কষ্ট করে ছেলেকে এ পর্যন্ত এনেছি। আমি মেডিকেল ভর্তি সহ পড়াশোনার ব্যয় বহন করার মতো অবস্থানে নেই। আমার ছেলের ভর্তির অর্থ কীভাবে সরবরাহ করা হবে তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। নিক্কনের মা মমতা রানি রায় বলেছিলেন, আমাদের কোনও জমি নেই। আছে কেবল ভিটেমাটি। ভ্যান চালিয়ে স্বামী যা উপার্জন করেন, পরিবারটি কোনওরকমে বেঁচে থাকে। এখন আমরা ভাবতে পারি না নিক্কানের মেডিকেল ভর্তি এবং চিকিত্সা শিক্ষার জন্য অর্থ কোথা থেকে আসবে।
তার বাবা-মা বলেছিলেন যে সমাজের ধনী ব্যক্তিদের সাহায্য ছাড়া নিক্কন এর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অসম্ভব। কিন্তু পিতামাতারা বেতন পান না। তৃতীয় শ্রেণির পর থেকে আমি অদম্য মেধাবী ছাত্র হিসাবে স্কুল-কলেজে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছি। অভাব সত্ত্বেও, আমার বাবা ভ্যান চালিয়েছিলেন এবং আমাকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য প্রদান করেছিলেন। আমি মেডিকেটের মেধা তালিকা পাস করেছি। তবে এখন আমি ব্যয় দেখতে পাচ্ছি। এত টাকা খরচ করে মেডিকেল কলেজে পড়ানো সম্ভব নয়।
তবে আমার ইচ্ছা একজন ডাক্তার হওয়ার এবং আমি এদেশের অসহায়, দরিদ্র ও দরিদ্র মানুষকে চিকিত্সা সেবা সরবরাহ করব। তবে সে আশাবাদী থাকতে পারে বা নাও পারে। সুতরাংঈশ্বরের কাছে আমার আকুল আবেদনট যদি মেধাবী হয় তবে আমাকে অর্থ দিন। আপনি টাকা না দিলে প্রতিভা দেবেন না। আমি আপনার (ঈশ্বরের) কাছে আমার স্বপ্নটি পূরণ করার জন্য প্রার্থনা করছি যাতে অসহায় ও হতভাগা মানুষের জন্য আমি একজন ডাক্তার হয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। নিকন ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ -৫ পেয়েছেন। তিনি আত্রাই স্কুল, সদর সুন্দরবন ইউনিয়ন, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং দিনাজপুর সরকারী কলেজ থেকে ২০২০ এইচএসসি পাস করেছেন।