দুঃসাহসিক এক নারী যোদ্ধার গল্প বলি শোনোঃ
না এটা রূপকথার গল্প নয়। নিম্নোক্ত গল্পের সাথে রূপকথার গল্পের তুলনাই চলে না।
▪
নুসাইবাহ বিনতে কা’ব রাদি.।
তিনি উম্মে আম্মারাহ নামেই বেশ পরিচিত।
ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নারী যোদ্ধা।
উহুদ, খায়বার, হুনাইন এবং ইয়ামামাহ যুদ্ধে তিনি তাঁর অতি অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করে এখনো বিস্ময়ের বিস্ময় হয়ে আছেন। থাকবেন কেয়ামত পর্যন্ত।
রাদিয়াল্লাহু আনহা।
উহুদ যুদ্ধে তিনি যে শৌর্যবীর্য দেখিয়েছিলেন তা সত্যিই অকল্পনীয়। একজন নারী এভাবে সম্মুখ যুদ্ধ করতে পারেন!
আল্লাহু আকবার।
মদীনার বনু নাজ্জার গোত্রের সদস্যা তিনি। হযরত আব্দুল্লাহ বিন কা’ব রাদি.-এর বোন।
দু দুটো বিয়ে হয়েছে তাঁর। প্রথম স্বামীর নাম যায়দ ইবনে আসিম। সেই স্বামীর সংসারে দুজন পুত্র সন্তান জন্ম দেন — আব্দুল্লাহ এবং হাবিব। দুজনেই প্রথম দিককার মুসলিম। মুস’আব বিন উমাইর রাদি.-এর দাওয়াতে তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় বিয়ে হয় হযরত গাজিয়াহ বিন আমর রাদি.-এর সাথে। দ্বিতীয় সংসারেও দু সন্তান জন্ম দেন। তামিম এবং খাওলাহ রাদি.।
উহুদ যুদ্ধে তিনি মুসলিম যুদ্ধাহত সেনাদের চিকিৎসা সেবিকা হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
কিন্তু পরিস্থিতি তাঁকে পরিপক্ব এবং দুঃসাহসী যোদ্ধা বানিয়েই ছাড়ল।
এক হাতে নাঙ্গা তলোয়ার, অন্য হাতে ঢাল। পিছনে আছেন রাসূল ﷺ, সামনে মুশরিক বাহিনী। নিজের জীবনকে সরিষা দানার চেয়ে মূল্যহীন মনে করে রাসূল ﷺ-কে জগতের সেরা সম্পদ ভেবে তাঁকে শত্রুদের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য, দুর্বার এবং দুর্বিনীতা এক যোদ্ধা।
ধারালো তলোয়ার দিয়ে প্রথমে ঘোড়ার সামনের পায়ে আঘাত করলেন। ঘোড়া লুটিয়ে পড়ল। ঘোড়াতে থাকা আরোহী মুশরিক যোদ্ধা মুখ থুবড়ে পড়ল। এবার সেই একই তলোয়ার দিয়ে আরোহীর গর্দান ফেলে দিলেন।
এভাবে চলতেই থাকল।
তিনিও আঘাত মুক্ত থাকেন নি। প্রায় বারোটি তীর শরীরে বিদ্ধ হয়েছিল। তলোয়ারের একটি কোপ ঘাড়ে আঘাত হানে। আঘাতটা ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রায় একটি বছর সেই ক্ষতের জ্বালা তাঁকে সইতে হয়েছিল।
তিনি উহুদে একা ছিলেন না। পুরো পরিবার নিয়ে ছিলেন। স্বামী গাজিয়াহ বিন আমর রাদি. ছিলেন।
প্রথম সংসারের দু ছেলে আব্দুল্লাহ এবং হাবিব রাদি.-ও ছিলেন। একজন নারী স্বামী-সন্তানকে নিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে প্রমাণ করে গেছেন,
” ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের চেয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল বড়। ”
যুদ্ধক্ষত্রে তাঁদের বীরত্ব দেখে রাসূল ﷺ মন্তব্য করলেন,
” কতো ভাগ্যবান একটি পরিবার! ”
তা শুনে উম্মে আম্মারাহ রাদি. বললেন,
❝ দুয়া করুন, আমরা যাতে জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে পারি।
এই দুনিয়াতে আমাদের পরিণতি কী হবে সেই চিন্তা একদমই মাথায় নেই হে আল্লাহর রাসূল ﷺ। ❞
রাসূল ﷺ দুয়া করলেন,
” হে আল্লাহ! তাঁদেরকে আমার সাথে জান্নাতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েন। ”
যুদ্ধ শেষে রাসুল ﷺ বলেন,
” উহুদের মাঠে ডানেবামে যেদিকে তাকালাম সেদেইকেই উম্মে আম্মারাহকে যুদ্ধরত দেখলাম। ”
এই ছিল তাঁদের পরিবার। তাঁদের চিন্তাচেতনা। তাঁদের পরিবার পরিকল্পনা।
আর আমরা পরিবার পরিকল্পনা বলতে বুঝি,
” দুটো সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়। ”
সেই মহীয়সী নারীরা স্বামী-ছেলেদেরকে যুদ্ধ পোশাক পরিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়ে দিতেন। নিজেরাও যুদ্ধে গিয়ে নৈপুণ্য দেখিয়ে বিরোধী শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
আর এই যুগের মা-বোনেরা নারীবাদীদের খপ্পরে পড়ে মনের অজান্তে পুঁজিবাদীদের ভোগ্যপণ্যে পরিণত হলেন।
আমাদের বোনদেরকে জাগতে হবে। জাগাতে হবে বাবা, স্বামী, ছেলে এবং ভাইদেরকে। প্রস্তুত করতে হবে তাঁদেরকে।
ফেমিনিজমের বিষফোঁড়ার সার্জারি ঘরে বসেই করতে হবে।
এভাবেই সংসার—দুনিয়া এবং আখেরাতে— সুখী হবে রমণীর গুণে।
– নজরুল ইসলাম