করোনা মহামারির শুরুটা চীন থেকেই হয়েছিল। এ তথ্য কারোরই অজানা নয়। কিন্তু মহামারিতে চীনে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে কিংবা কতজন শনাক্ত হয়েছেন, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। বিবিসির সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশটির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রামাঞ্চলে করোনাজনিত মৃত্যু বাড়ছে। বড় শহরগুলো থেকে তুলনামূলক ছোট ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধরাই বেশি মারা যাচ্ছেন।
চীনের শানজি প্রদেশের সিনঝু এলাকায় করোনার প্রকোপে মৃত্যু বেড়েছে। এ কারণে সেখানকার কফিন নির্মাতাদের মধ্যে বেড়েছে ব্যস্ততা। সেখানকার কাঠমিস্ত্রিরা নতুন কাঠ দিয়ে কফিনের বাক্স তৈরি করছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে তাঁদের ব্যস্ততা এতটাই বেড়ে গেছে যে একটানা কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের।
কফিন কিনতে আসা গ্রামের একজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আসার আগেই দোকানের সব কফিন বিক্রি হয়ে গেছে। করোনায় মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যবসাও বেড়ে গেছে। জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে চীনের সরকারি হিসাবে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে দেশটিতে করোনার কারণে প্রায় ১৩ হাজার মৃত্যু হয়েছে। ১৩ থেকে ১৯ জানুয়ারির মধ্যে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন করোনায়।
সরকারি হিসাবে হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা স্থান পেয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসা সুবিধাবঞ্চিত ও বাড়িতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের এই তালিকায় রাখা হয়নি। এমনকি চীনের গ্রামাঞ্চলে করোনায় কতজন মারা গেছেন, সরকারিভাবে সেই হিসাবও রাখা হয়নি।
লকডাউন পিয়ংইয়ং
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, উত্তর কোরিয়া শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার কারণে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে পাঁচ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে। আজ বুধবার সিউলভিত্তিক এনকে নিউজের খবরে বলা হয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের বাসিন্দাদের বুধবার থেকে রোববার পর্যন্ত নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন তাঁদের একাধিক তাপমাত্রা পরীক্ষার ফলাফল অবশ্যই জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
খবরে বলা হয়, নোটিশে কোভিড-১৯-এর উল্লেখ না করে বলা হয়েছে, সম্প্রতি রাজধানীতে সাধারণ ঠান্ডাজনিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে এর আগে পিয়ংইয়ংয়ের বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এনকে নিউজ বলেছে, লকডাউনের আভাস পেয়ে রাজধানীর বাসিন্দাদের মধ্যে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। তবে দেশটির অন্যান্য এলাকাতেও লকডাউন জারি করা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যম নতুন কোনো পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বেগ
ফরচুন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার মৃত্যু বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস। গত মঙ্গলবার তিনি বলেন, গত আট সপ্তাহে বিশ্বে করোনায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে করোনার মৃত্যু বাড়ছে। মহামারি শুরুর তিন বছর পর করোনা ভাইরাসকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে তুলে নেওয়া হবে কি না, সে-সংক্রান্ত বৈঠকের আগেই এমন উদ্বেগের কথা উঠে এল। আগামীকাল শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কমিটি এ-সংক্রান্ত বৈঠকে বসবে।
গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘আমার বার্তা পরিষ্কার। এই ভাইরাসকে ছোট করে দেখবেন না। আমাদের হকচকিয়ে দিতে এটা আছে, এটা থাকবে। আমরা আরও ব্যবস্থা না নিলে এটা আমাদের প্রাণ কেড়ে নিতেই থাকবে।’