অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের এক মামলায় কারাবন্দী ফারইস্টের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ খালেকের বিরুদ্ধে ৫১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সিআইডি। এ অনুসন্ধান চলাকালে বারিধারায় আলোচিত এই উদ্যোক্তার ১৫০ কোটি টাকার বাড়ি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে এ আদেশ সরকারি গেজেটসহ দৈনিক বাংলাদেশের আলো ও দ্য ডেইলি ভয়েস অব এশিয়া পত্রিকায় প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এম এ খালেক ছিলেন উদ্যোক্তা। গড়ে তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, বিমা, সিকিউরিটিজ কোম্পানিসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে ছিলেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এম এ খালেক ছিলেন উদ্যোক্তা। গড়ে তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, বিমা, সিকিউরিটিজ কোম্পানিসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে ছিলেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার বারিধারার ৬ নম্বর সড়কের ‘কে’ ব্লকে অবস্থিত এম এ খালেকের জমিসহ বাড়িটি জব্দ করার নির্দেশ দেন ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল কোর্ট।
বাড়ি কেনার আর্থিক লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে সিআইডি বলছে, এম এ খালেক তাঁর বিভিন্ন কোম্পানি থেকে টাকা সরিয়ে এটি কিনেছিলেন, যা টাকা হস্তান্তর–স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে সম্পাদিত অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে অপরাধ। অনুসন্ধান চলাকালে তিনি বাড়িটি বিক্রি করে টাকা পাচার করতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকে সেটি জব্দ করার আবেদন জানায় সিআইডি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িটি জব্দ করা হয়েছে এবং এটি রক্ষণাবেক্ষণে সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন আদালত।
সিআইডির অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে থেকে এম এ খালেক প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ১৩৫ কোটি টাকা আয় করেছেন। এ ছাড়া কানাডায় পাচার করা অর্থে বাড়ি ও সম্পদ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া দেশে নামে–বেনামে সম্পদ গড়েছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান কানাডায় বসবাস করছেন।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এম এ খালেক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৫১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানে ১৩৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থ পাচার আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হবে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এম এ খালেকের টাকা সরিয়ে নেওয়ার সত্যতা বেরিয়ে এসেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনেও। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১০ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বের করে নেওয়া শুরু করেন। এরপর আট বছরে হাতিয়ে নেন ১ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এম এ খালেক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রাইম ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ থেকে ৩০৫ কোটি ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স থেকে ৩৭৬ কোটি টাকা বের করে নেন। এ ছাড়া প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজের ২০ কোটি, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০০ কোটি, পিএফআই প্রপার্টিজের ১৫০ কোটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ১৬৭ কোটি, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডের ৫০ কোটি ও পিএফআই ক্যাপিটালের ১৫ কোটি টাকা তাঁর পকেটে গেছে। তাঁর কাছে ঢাকার প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্ট পাবে ১৬৭ কোটি টাকা।
বেসরকারি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদাভাসির তদন্তে এসেছে, প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশনের হিসাব থেকে এম এ খালেক ৯০ কোটি টাকা প্রাইম ব্যাংকের মতিঝিল ও বনানী শাখার হিসাবে স্থানান্তর করেছেন; যা সুদে-আসলে এখন ১৬৭ কোটি টাকা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক সময় শেয়ার ব্যবসার নামে এম এ খালেক ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা সরিয়েছেন। পরিবারের সদস্য ও কর্মচারীদের নামেও নিয়েছেন টাকা। এর বাইরে ম্যাকসন্স বাংলাদেশ, ম্যাকসন্স বে লিমিটেড, গ্যাটকো, গ্যাটকো অ্যাগ্রো ভিশন, গ্যাটকো টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি ঋণ নিয়েছেন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে নেওয়া এসব ঋণ ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে।