এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। মাদক পাচার ও বিক্রির কাজে ব্যবহার করেন হিজড়াদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করতে এলে নিজেকে বাঁচাতেও কাজে লাগান তাঁদের। এসব অভিযোগ মোহাম্মদ হানিফের (২৯) বিরুদ্ধে। গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে হানিফকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তাঁর সহযোগী ও হিজড়ারা।
হানিফের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় নগরের কালুরঘাট ব্রিজের সামনে থেকে পাঁচ হাজার ইয়াবাসহ হানিফ ও মহিউদ্দিন শরীফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে দুজনকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ফাঁড়িতে হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত হন হানিফের বোন নাজমা আক্তার। রাতেই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। আহত হন পুলিশের দুই সদস্য।
হানিফের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহার ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার মো. লোকমানের ছেলে হানিফ। তাঁর বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকায়। অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন হানিফ মোহরা এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। হানিফের ভাই ইয়াছিন একজন হিজড়া। তাঁর নামেও একটি মামলা রয়েছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, হানিফ ছোট ভাই ইয়াছিনের মাধ্যমে হিজড়াদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন। ২০১৫ সাল থেকে কালুরঘাট ব্রিজের নিচে কক্সবাজার থেকে নৌকা ও ট্রলারে করে আসা ইয়াবার চালান খালাস করেন হানিফ। পরে সেগুলো হিজড়াদের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করেন। তাঁদের মাধ্যমে খুচরা বিক্রিও করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহরা এলাকার এক দোকানদার বলেন, হিজড়াদের দিয়ে চাঁদাবাজিও করেন হানিফ। সপ্তাহখানেক পরপর হিজড়ারা প্রতিটি দোকান থেকে ১০০–২০০ টাকা নেন। না দিলে দোকানদার হেনস্তা করা হয়। ওই টাকার নির্দিষ্ট পরিমাণ হিজড়াদের দিয়ে বাকিটা দুই ভাই ভাগ করে নেন।
২০২০ সালে মাদক ব্যবসার অভিযোগে হানিফকে মোহরা এলাকা থেকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে হিজড়ারা জড়ো হয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে নেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে মোহরা এলাকার তৃতীয় লিঙ্গের চারজন বলেছেন, ওই এলাকার সব হিজড়া হানিফের সঙ্গে যুক্ত নন। কিছু হিজড়া তাঁর হয়ে কাজ করে। এ জন্য সবাইকে দোষারোপ করা যাবে না।
এদিকে গতকাল রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে কথা হয় হানিফের মা রুনু বেগমের। তাঁর দাবি, হানিফ মাদক ব্যবসায় জড়িত নন। স্থানীয় কিছু লোকের সঙ্গে পূর্ববিরোধের জেরে তাঁর ছেলেদের পুলিশ মামলায় জড়িয়েছে। শনিবার হানিফকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে গেলে তাঁর মেয়ে নাজমা আক্তারকে গুলি করে পুলিশ। নাজমার সাত ও তিন বছরের দুটি সন্তান রয়েছে।
শনিবার পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধাদান, আসামি ছিনিয়ে নেওয়া এবং ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় আলাদা দুটি মামলা করে পুলিশ। দুই মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় ২১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে গতকাল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নগরের চান্দগাঁও থানায় কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফ রোকনুজ্জামানের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি ছিনিয়ে নিতে ইয়াছিন হিজড়ার নেতৃত্বে কিছু হিজড়া পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালান। তাঁদের সঙ্গে হানিফের সহযোগীরাও ছিলেন। তাঁরা পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর করে সাড়ে চার লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেন। পুলিশের ব্যবহৃত সরকারি মুঠোফোন ও ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নিয়েছেন। তাঁরা পুলিশের অস্ত্র ছিনতাইয়ের চেষ্টাও করেন।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুর রহমান বলেন, হিজড়াদের ব্যবহার করে হানিফ মাদক ব্যবসা গড়ে তুলেছেন, যেন সহজে কেউ ধরতে না পারে। আর তাঁকে ধরতে গেলে হিজড়াদের মাধ্যমে হামলা চালিয়ে পার পেয়ে যান। হানিফ ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
হানিফের বোন নাজমা আক্তারের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মঈনুর রহমান বলেন, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলাকারীরা গুলি ছুড়লে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি ছোড়ে। কার গুলিতে নাজমা আক্তার মারা গেছেন, তা তদন্ত করা হচ্ছে।